আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারা জীবন দেননি, শহীদ হয়েছেন কলম যোদ্ধারাও। যাঁদের কবিতা, গান কিংবা কথাসাহিত্য ভীষণ ভয়ংকর ছিল, মর্টার শেল কিংবা মেশিনগানের গুলির চেয়ে। এ লেখায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা, পুস্তক পড়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব মাত্র।
মুনীর চৌধুরী : ‘কবর’ নাটক লিখেই বুঝি নিজের কবর খুঁড়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় আল বদরের সদস্যরা এসে তাঁকে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেন নাই। তাঁর লাশও পাওয়া যায়নি।
আনোয়ার পাশা: ফিল্ডে চলছে মুক্তিযুদ্ধ আর আনোয়ার পাশার কলমে লিখছেন মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ‘রাইফেল রোটি আওরাত।’ যুদ্ধ শেষের পথে লেখাও শেষের দিকে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ৯টা থেকে ৯টার দিকে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেন নাই।
শহীদুল্লাহ্ কায়সার : সারেং বউ তাঁর অমর সৃষ্টি। এ ছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস সংশপ্তক। ভ্রমণ কাহিনী পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ। স্মৃতিকথা রাজনীতির রোজনামচা।
জহির রায়হান : স্বাধীনতার পরের দিন বড়ভাই শহীদুল্লাহ্ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
কবি মেহেরুন নেছা : জন্ম ১৯৪৬ সালে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসে উদ্বাস্তু হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের মীরপুরে বসবাস করতেন। লিখতেন কবিতা। বিভিন্ন পত্রিকায় তা প্রকাশিত হতো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর অবাঙালি অধ্যুষিত মীরপুরে অবাঙালির হাতে অমানুষিক নির্যাতনের পর শহীদ হন।
আলতাফ মাহমুদ : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি — কালজয়ী গানের সুরকার। ১৯৩৩ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট তাঁকে ঢাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গোবিন্দ চন্দ্র দেব : দার্শনিক। শিক্ষাবিদ। চিরকুমার ডক্টর জি সি দেব ১৯০৭ সালে সিলেটের লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন।
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা : তিনি ১৯১০ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হন এবং ৩০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
আ ন ম গোলাম মোস্তফা : জন্ম পঙ্গাগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন। পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। তাঁর প্রকাশিত দুটি গ্রন্থ হলো অন্তরঙ্গ আলোকে এবং শ্বত কুন্তলা। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি।
আব্দুর রউফ সরদার : তিনি কুড়িগ্রাম জেলার বজরা গ্রামে ১৩৪৪ সালের ৪ কার্তিক জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থনীতিতে বি এ (অনার্স) এম এ। প্রথমে কুড়িগ্রাম মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহপরিচালক, ইপিআই ডিসির সহপরিচালক এবং নিপাতে পরিচালক ছিলেন। অর্থনীতি বিষয়ে ‘লাঙ্গল যার মাটি তাঁর’ একটি গ্রন্থ আছে। তিনি পাকিস্তান অবজারভারে সম্পাদকীয় কলামে লিখতেন। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ওইদিন তাঁকে হত্যা করা হয়।
এ টি এম জাফর আলম : তিনি ১৯৪৭ সালের ৫ মে, রুমখাঁ পালান, উখিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৭০ সালে সি এস এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অনার্স পাস করে রাতে সোহরাওয়ার্দী কলেজে পার্টটাইম শিক্ষকতা করতেন। তৎকালীন ইকবাল হলে ছাত্র অবস্থায় ১৯৬৮-৬৯ সালে একটা একুশে সংকলন ‘কষ্টি পাথর’ সম্পাদনা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ইকবাল হলেই তিনি শহীদ হন।
কামিনী কুমার চক্রবর্তী : আজীবন শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাস করেন এবং ১৯৩৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এল পাস করেন। তিনি ১৯০৫ সালের ১ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্য অনুরাগী, লেখালেখি করতেন। আর্থিক সংকটের কারণে পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন। ২৭ এপ্রিল তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
খালেদ রশীদ : স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে খুলনা মহিলা কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কলেজ সরকারি হলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘সন্দ্বীপনে’র দায়িত্বভারসহ ‘সেতু’ পত্রিকার সম্পাদনা এ সময়ে করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় সুন্দরবন মহাবিদ্যালয় ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৩৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে খুলনার ডুমুরিয়ায় শহীদ হন।
খো. মো. ইলাহি বক্স : তিনি ১৯২৮ সালে ঝিনাইদহ জেলার ভাদড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসের নাম এক যুগ পেরিয়ে। তিনি ১৯৭১ সালের মে মাসে হুমাদার বিলে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন।
গিয়াস উদ্দিন আহমেদ : তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার গুনধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
গোলাম রহমান : ১৯৩৯ সালের ২৮ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ১৯৬০ সালে ছোটদের জন্য ‘মধুমালা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ছোটদের জন্য লিখিত বইগুলোর মধ্যে আছে বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি, আজব দেশে এলিশ, বুদ্ধির ঢেঁকি, পানুর পাঠশালা, চমকি প্রমুখ। বড়দের জন্য রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো নেতা ও রাণী, আমাদের বীর সংগ্রামী, জীবনের বিচিত্র। বাংলা একাডেমি চার খণ্ডে গোলাম রহমান রচনাবলি প্রকাশ করেছে। ১৯৬৯ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি অবাঙালিদের হাতে তিনি নিহত হন।
ছমির উদ্দীন মণ্ডল : ১৯৩৩ সালের ১২ আগস্ট জয়পুরহাট জেলার মানিক পাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হন।
জহিরুল ইসলাম : তিনি ১৯৩৬ সালের ৩০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত উপন্যাস অজ গাঁয়ের বেগম, ব্রীজের নীচে থাকি, অন্য নায়েক, মেয়েরা পর্দানশীন, সূর্যমুখী ও অগ্নি সাক্ষী। ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া থেকে নিখোঁজ হন।
নিত্যানন্দ পাল : ১৯৩৮ সালের ২৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহত হন।
ফয়জুর রব : ১৯৩২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের হাওয়া পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। লেখক এবং সাহিত্য পত্রিকা প্রাচী ও মালঞ্চ এর সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি নিখোঁজ হন। আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মহসিন আলী দেওয়ান : ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি জয়পুরহাট জেলার ভুটিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়া বুলেটিন ও জনমত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘গল্পের চিড়িয়াখানা’ নামে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৩ জুন বগুড়া শহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন।
মামুন মাহামুদ : ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক রিলেশনশিপে এম এ পাস করেন। তিনি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি লেখক ও ডিকটেটর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নিখোঁজ হন।
মিজানুর রহমান সাঈফ : তিনি নড়াইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে অর্থনীতিতে অনার্স ও ১৯৬৪ সালে এম এ পাস করেন। তিনি গল্প ও কবিতা লিখতেন। ২০১৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালে পিরোজপুর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
মো. আমিনউদ্দিন : ১৯৩৬ সালের ৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে পাবনার কালাচাঁদ পাড়ায় স্থায়ী বসবাস গড়ে তোলেন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এম এসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কোয়ার্টার্স থেকে সশস্ত্র আলবদরেরা ধরে নিয়ে যায়। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি।
মো. মোয়াজ্জেম হোসেন : বাগেরহাট জেলার বাদোখালি গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ পাস করেন। পিসি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ফলিত অর্থনীতিসহ পাকিস্তানের অর্থনীতি, অর্থনীতি, সহজ অর্থনীতি, সরল ব্যাংক ব্যবস্থা, ঊংংবহঃরধষ ড়ভ ইধহশরহম, ঐধহফনড়ড়শ ড়ভ ঊপড়হড়সরপং. ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি শহীদ হন।
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী : ১৯২৬ সালের ২২ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ (অনার্স) ও ১৯৪৭ সালে এম এ বাংলা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন।
মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি : তিনি ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাবনা শহরের উপকণ্ঠে ছাতিয়ানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০-৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে এম বি বি এস পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডের এডিনবরা থেকে কার্ডিওলজিতে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। এবং দেশে ফিরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে রায়ের বাজারে হত্যা করা হয় এবং ১৮ ডিসেম্বর তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
মোহাম্মদ মোর্তজা : ১৯৩১ সালের ১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের চন্ডিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাস করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাহিনি, প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, শান্তি না শক্তি, হুনানের কৃষক আন্দোলন, জনযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘজীবী হোক ইত্যাদি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর হাতে নিহত হন।
মোহাম্মদ শফী : ১৩২৩ সালের শ্রাবণ মাসে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছিলেন ডেন্টাল সার্জন। তিনি আকাশবাণী কলকাতার নিয়মিত বেহালা বাদক ছিলেন। পেইন্টিং ও এনপ্রেভিয়েও সুদক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আর্মির হাতে শহীদ হন।
যোগেশচন্দ্র ঘোষ : ১৮৮৭ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৮ সালে রসায়ন শাস্ত্রে এম এসসি পাস করেন। তিনি ভাগালপুর কলেজে ও জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেন। এবং জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল গেন্ডারিয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
রফিকুল ইসলাম : ১৯৩৬ সালে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন। এরপর কুষ্টিয়ার দর্শনা কলেজে অধ্যাপনা করেন। তাঁর কবিতা নতুন সাহিত্য, চতুরঙ্গ ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
সন্তোষ কুমার দাস : ১৯৩৮ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দর্শন শাস্ত্রে এম এ পাস করেন। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : এসেনশিয়াল অব ফিলোসোফি, এসেনশিয়াল অব এথিকস ও এসেনশিয়াল অব ইন্ডিয়ান ফিলোসোফি।
সিরাজুদ্দীন হোসেন : ১৯২৯ সালে মাগুরার শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য মৌলিক গ্রন্থ মহিয়সী নারী। অনুবাদ গ্রন্থ : গধহ অমধরহংঃ ঘধঃঁৎব, ঝঁহ, উবসড়পৎধপু, এড়হব রং এড়হব উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি।
সেলিনা পারভীন : ১৯৩১ সালে নোয়াখালী জেলায় রামগঞ্জ উপজেলার কল্যাণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। নিয়মিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখতেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি শহীদ হন।
শহীদ সাবের : ১৯৩০ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার ঈদগী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দৈনিক সংবাদ আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। শহীদ সাবের তখন ওখানেই ছিলেন। তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন।
এ ছাড়াও হয়তো আছেন আরও লেখক শহীদ বুদ্ধিজীবী যাঁরা রয়ে গেছে আমার চোখের আড়ালে। যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন পতাকা। স্বাধীন বাংলাদেশ। স্যালুট হাজারবার তাদেরকে।
মোহাম্মদ আলী