ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

সভ্যতার মঞ্চে এরা থাকতে পারে না

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১০:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সভ্যতার মঞ্চে এরা থাকতে পারে না

ড. আলো আরজুমান বানু

ড. আলো আরজুমান বানু লিখেন মিতা আলী নামে। সহকারী অধ্যাপক মিতা আলী তার লেখায় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। সম্প্রতি জাতীয় কবিতা মঞ্চ ও ঢাকাস্থ ইরানি দূতাবাসের যৌথ আয়োজন পোয়েট্রি ফর ফিলিস্তিন কবিতা প্রতিযোগিতায় তার লেখা নির্বাচিত হয়। এই অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করেন ইরানি রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা। এই কবির অনুভূতি ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ের কথা শুনেছেন মো: জামিন মিয়া ও তানজিল আরেফিন ফয়সাল । 

প্রশ্ন: প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন।"ফয়েট্রী ফর ফিলিস্তাইন " প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হলেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

মিতা আলী: ধন্যবাদ। 'পোয়েট্রি ফর প্যালেস্টাইন' কবিতাটি নির্বাচিত হওয়ায় এটি অবশ্যই আমার জন্যে একটি ভালো অনুভূতি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনে যেভাবে মানবতার দমন-পীড়ন চলছে, সেই কষ্টটা আমার এই কবিতা নির্বাচিত হওয়ার আনন্দকে ম্লান করে দেয়। ফিলিস্তিনের মতো একটি ভূরাজনৈতিক ও পবিত্র স্থানে যেভাবে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে তা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন মানুষ হিসেবে, একজন কবি হিসেবে, একজন মা হিসেবে এই কবিতাটি ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি আমার মর্মবেদনার সামান্যতম বহিঃপ্রকাশ। 

প্রশ্ন: আপনার পুরস্কারপ্রাপ্ত কবিতাটির মূলভাব আসলে কি?
মিতা আলী: আমার কবিতাটির নাম হচ্ছে ' যুদ্ধ তুই নিখোঁজ হ'। এটা শুধু যে ফিলিস্তিনের জন্যে তা নয় বরং তা বিশ্বের প্রতিটি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান জন্যে রচিত। এই কবিতাটির মূলভাবের দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন যে,ঘাতকরা প্রতি মিনিটে কতজন মাকে হত্যা করছে। আমরা সবাই জানি নারী হচ্ছে সভ্যতার অস্তিত্বের কেন্দ্রভূমি।অথচ তারা প্রতিনিয়ত মাদেরকে হত্যা করছে, শিশুদের হত্যা করছে, এমনকি হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে বোমাবর্ষণ করছে। এটি মানবতার কলঙ্ক যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদি এটা এভাবেই চলতে থাকে তাহলে, সভ্যতার অস্তিত্ব কোথায় থাকলো? আর আমরাই  কিভাবে নিজেদেরকে সভ্য দাবি করব?

প্রশ্ন: এই কবিতায় আপনি লিখেছেন 'নিখোঁজ হ দলবদ্ধভাবে'।এখানে আপনি কি বুঝিয়েছেন?

মিতা আলী: আমার কবিতায় শয়তান,অসুর  সীমার - এ জাতীয় নাম গুলোর কথা উল্লেখ করেছি। এরা নেতিবাচক চরিত্র। আমাদের সুন্দরের বা  সভ্যতার মঞ্চে এরা কেউ থাকতে পারে না।সেটাই বুঝিয়েছি।
 
প্রশ্ন: লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন ওমর  ২০২৪ সালের ছাত্র -জনতার আন্দোলনকে দেশের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান বলে আখ্যা দিয়েছেন।একজন কবি হিসেবে আপনার পর্যবেক্ষণটা আসলে কি? 

মিতা আলী: কবিতা তার ছত্রে ছত্রে মুক্তির কথা বলে। কবিরা আলোর মাঝে মুক্তির জ্যোতি ছড়ায়। চরম অন্যায়কারী মানবতাবিরোধী স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে কবিতা মুক্তির কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার বাসিন্দা তাই অভ্যন্তরীণ পুরো আন্দোলনের সাথে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। একজন শিক্ষক হিসেবে আমার শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের প্রাণের দাবির সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। যে মানসিক উদ্বেগ ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে যেতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। সমস্ত বাংলাদেশের আপাময় জনসাধারণ যেখানে জেগে উঠেছে সেখানে একজন কবি হিসেবে একজন শিক্ষক হিসেবে ছত্রিশে জুলাই তথা পাঁচই আগস্ট এ ছাত্র জনতার  যে বিজয় হয়েছে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান।


মিতা আলী: আপনাদের দুজনকে ধন্যবাদ।দৈনিক জনকণ্ঠের পাঠকদেরকে আমার শুভেচ্ছা।

আশিকুর রহমান

×