প্রগতিশীল হেমন্ত
আইউব সৈয়দ
‘নির্জন স্বাক্ষর’ পরিণত করে ছাতিম বন্ধনে
এনেছে নয়া অধ্যায়ের অনাবৃত শিশির হাসি,
সম্পর্কের প্রকৃতি শোভন প্রাধান্য পেয়েছে বটে
সামাজিক ভাবোচ্ছ্বাসে ডুব দিয়েছে ঋতুতে আসি।
আচরণের অবাধ পর্যালোচনা যোগ্যতা রাখে
কার্তিকের আধিপত্য স্বরূপে বিস্তার করে ঠিক ,
জীবনবেদের ভাষা বিশেষ পার্থক্যে পরিদৃষ্ট
দাপুটে সুবাস হাতড়াতে থাকে ঐ দিকবিদিক।
রূপের নানামাত্রিক প্রয়োগ বৈচিত্র্যে লক্ষণীয়
অনুভূতির স্মারক হয়ে উঠে ঠোকরানো মনে,
অবগাহনের মিথে চোখ মেলেছে রূপসীবাংলা
‘ধূসর ধূমল’ যেন প্রগতিশীল সকল ক্ষণে;
নিপুণতার প্রচ্ছন্ন তাগিদ যে বেসামাল নয়—-
অভিবাদন জানাই হেমন্তকে, সমতা স্থাপনে
দার্জিলিং
চঞ্চল শাহরিয়ার
দার্জিলিং শহরের নেহের রোডের মোড়ে বসে দেখি অগ্রহায়ণ সন্ধ্যা। এ সন্ধ্যা ভীষণ জমকালো। এ সন্ধ্যায় নেপালী মেয়ের সাথে হয় কুসুম কুসুম প্রেম। সকালের দেখা ঝলমলে রোদ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চা বাগান, পাহাড়ের ঝর্ণা, টয় ট্রেনের ভ্রমণ নিয়ে হয় গরম চায়ের আড্ডা। নেপালী মেয়ের নাম তবু সৃষ্টি।
সৃষ্টিতে মেতেই ঢুকে পড়ি শপিং মলের বারান্দায়। পিছু ডাকে ঘুম স্টেশনের ভোর, পিছু ডাকে রাতের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলা দার্জিলিং দার্জিলিং।
মানুষের বিপরীতে
স.ম. শামসুল আলম
মানুষ নিকটে গেলে
বিষাক্ত সাপের ফোঁসফোঁস থেমে যায়
ছোঁ-মারা ঈগল অন্যদিকে পাখা ম্যালে
মানুষ নিকটে গেলে
বলবান বাঘেরাও নখের ক্ষমতা ভুলে যায়
উল্টোপথে পা বাড়ায় অরণ্য গহিনে
মানুষ নিকটে গেলে
ভীত বৃক্ষ ভীত নদী ভীত পরিবেশ
আর আমি কাছে গেলে
ভালোবাসা জেগে ওঠে পুনর্বার সম্ভাবনাময়
সাপ হাসে বাঘ নাচে ঈগল তাকায়
আমি কাছে গেলে শান্ত সবুজ প্রকৃতি
মানুষের বিরূপ স্বভাবে এক বিরুদ্ধ মানুষ
যেন লিখেছি কিছু পর্নোগ্রাফি
ইমামুল ইসলাম মুরাদ
তুমি চেয়েছিলে, আমাকে কবি হতে হবে।
তুমি বলেছিলে, আমি যেন প্রতিদিন অসংখ্য কবিতা লিখি;
কবিতা তো সহজকর্ম চাইলেই অজস্র কবিতা লেখা যায় মুহূর্তের মধ্যেÑ
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে, তপ্ত দুপুরে, গোধূলি অন্ত ঝিলিমিল সন্ধ্যায়,
জোছনা ব্যাপ্ত রাতে যে কোনো সময়-প্রেমিকাকে উৎসর্গ করে
অজস্র কবিতা লেখা যায়;
দুঃখ ভরা মাঠে, ছন্নছাড়া নদীর কূলে, বিদগ্ধ সমুদ্র সৈকতে,
বিমূর্ত পর্বত চূড়ায়Ñ যে কোনো স্থানে
প্রেমিকার জন্য কবিতা লেখা যায়!
এবং আমি অসংখ্য কবিতা লিখেছি তোমাকে নিয়ে-
ফুটপাতে হেঁটে, লোকাল বাসে চড়ে, আরও কত কি ভাবে...
কিন্তু আমি কবি হতে পারিনি!
কেবল ভীরু কাপুরুষের মতো তোমার সুডৌল দেহের ভারী নিতম্ব আর
ভরাট পীনের নরম স্তনের নগ্ন ছবি কল্পনায় এঁকেÑ লিখেছি যেন কিছু পর্নোগ্রাফি;
কবি তো হলো তারা- যারা গণতন্ত্রের কথাভাবে এবং
শহরের সেন্ট্রাল স্কোয়ারে বুলেটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইশতেহার জারি করে।
দূরত্বের জোট
ফাহমিদা ইয়াসমিন
বয়সের মতো করে বাড়ছে বেদনা
আমাদের দূরত্বও দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে
তুমি ও আমি একাকার কষ্টে
দূরত্বই মনের ক্ষতো গভীরে টানছে।
এদিকে শুধু সবুজের সুবাস...
ওদিকে সুবাসিত ফুলেরা হাসে
তোমার মনন জুড়ে বসে মহাজনি জোট
অথচ আমি নিয়ত তোমার ভাস্কর্য আঁকি
তবুও দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে পিরামিডের মতো।
ডাক্তার
ফখরুল হাসান
দ্যাখো কাণ্ড, নীলাকাশ নির্দয়- বজ্র বিদ্যুৎ বৃষ্টিÑ
কাটাকুটি আবহাওয়া, সাপের দংশনের মতো
শিপ্রার তুলতুলে শরীরে উল্টাপাল্টা অপারেশন
সেলাই দাগে ভর্তি- ডাক্তারের বয়ান জটিল-কুটিল।
ট্রমা আর হা-হুতাশ বুকের খাঁচায় জমে দীর্ঘশ্বাস
এ-যেন ধর্ষিতার মৃত্যুর পরেও চোখ মেলতে ভয়।
তবুও ডাক্তার, চোখে কাঠের চশমা চোখে দিয়ে
কাঁথায় তুলে রঙিন সুতোর ফোঁড়।
কথার করাতে নিশিদিন চেরায়Ñ মানব শরীর
পণ্ডিতদের বাক্যবাজ, দৈন্যদশা দেখে মনে হয়
ডাক্তার ঈশ্বরের দ্রুত হয়ে এসেছে।
সে কী দুঃসহ অবস্থা, অসহ্য ঠোকর খেয়ে
গর্ভবতী নারীর মতো আমাদের পেট ফুলে গেছে।
লালটিপ
মাহমুদ নজির
যে কথা বলা হয়নি তোমাকে
সে কথার নাম রেখেছি অনন্ত।
বন্ধ দরজা ঠুকে ঠুকে প্রতিদিন
প্রহর গুনছি সময়ের।
অথচ, ফুরোয়নি কথার ঢেঁকুর
আটকে আছে কণ্ঠনালীর ভাঁজে,
মনপীড়ায় বাড়ছে বেদনা ক্রমাগত।
বুঝি না শুরুটা কী রকম হলে
তুমি হবে রাজি
সেই আশায় দিনে দিনে খুঁজে চলছি
বাঁক বিবর্তনের জোয়ার।
যদি বলো
অকূল সমুদ্রে ভাসাবো ভেলা-
হৃদয় উজাড় করে শুনাবো
না বলা যত কথা
গল্প, গান, কবিতা অমরগাঁথা,
ভালোবেসে যাব অনন্তকাল।
নীলাঞ্জনা, আকাশে তাকিয়ে দ্যাখো-
পত্ পত্ উড়ছে বিজয় পতাকা
লাল সবুজে আঁকা ওই মুক্তির সনদ,
যা আমাদের চেতনাকে করে উজ্জীবিত।
এসো, দুজনে মিলে
পান করি দ্রাক্ষারস!
কপালে পড়িয়ে দিই লালটিপ,
ভালোবাসার বন্ধন থাক
চির অটুট, চিরভাস্বর।