অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪৩১ প্রদান করা হলো। এবছর কথাসাহিত্যে নূরে জান্নাত ও কবিতায় নুসরাত নুসিন এই সম্মাননা অর্জন করেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। সম্মাননাপ্রাপ্তদের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান এবং কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তাপস কুমার দত্ত।
অনুভূতি প্রকাশে নুসরাত নুসিন বলেন, নারীদের কবি হিসেবে সমাজে বেড়ে ওঠা সহজভাবে ঘটে না। নারী সাহিত্যিকদের সমাজে বিকশিত হওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের জায়গা থেকে তাদের অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, এই সম্মাননা তাকে বিকশিত ও উৎসাহিত করবে।
নূরে জানাত বলেন, যখন পুরস্কার পাই, তখন যেমন আনন্দ হচ্ছিল। তেমন ভয়ও হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এই পুরস্কার শেষ পর্যন্ত আমার হবে তো! কারন অনেক সময় পুরস্কার আমার পাওয়ার কথা থাকলেও পরে আর পাই না। এভাবেই নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেন গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নূরে জান্নাত।
প্রযুক্তিনির্ভর সাহিত্য থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন প্রজন্মের সাহিত্যিকরা অবদান রাখবে এমন মন্তব্য করে বক্তারা বলেছেন, ধারনা করা হয়, এখন সাহিত্যের সময় না, প্রযুক্তির সময়। কিন্তু প্রযুক্তির এই সময়ে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের সাহিত্যচর্চা দেখে মনে হয়, সাহিত্যের সময় শেষ হয়ে যায়নি। নতুন প্রজন্মের নারী সাহিত্যকরা পরিবর্তীত এই সময়ের সাহিত্যে নিজের দক্ষতা মেধার স্বাক্ষর রেখে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা চ্যাটজিপিটি যতই শিল্প সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোক না কেন, মানুষ সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে যে আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশ করে, চ্যাটজিপিটির পক্ষে তা সম্ভব নয়।
তাসমিমা হোসেন বলেন, নবীন সাহিত্যিকদের সাহিত্য পড়লে বোঝা যায়, তারা মানুষ নিয়ে ভাবছে,পরিবেশ নিয়ে ভাবছে। এই সময়ে রাজনীতি, দল, গোষ্ঠী অনেক কারনে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যের মধ্যে আরো বেশি বৈষম্যের শিকার হয় নারী।
নারী সাহিত্যকরা বৈষম্যের শিকার হয় তাদের জন্য অনন্যা কাজ করছে। অনন্যা কোন দলের না, কোন গোষ্ঠীর না অনন্যা সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করে। ঝর্না রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির প্রভাব সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, নাকি নতুন সৃজনশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে এ নিয়ে আমি শঙ্কিত। অনন্যার মতো এমন ভাবে সৃজনশীলতাকে জিইয়ে রাখতে সাহিত্য প্রবাহকে ধরে রাখতে পারলে সাহিত্য প্রবাহ শেষ হবে না।
হামীম কামরুল হক বলেন, নতুন এই লেখকদের সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে নতুন নারী সাহিত্যিকদের চিন্তা-ভাবনা এবং ধারণার সাথে যুক্ত হলাম। নারীরা সমাজের যে কোন স্তর থেকে তার মেধা, চেতনা, শক্তি দিয়ে এগিয়ে আসছে। তরুণ সমাজ রাষ্ট্রকে দেখছে তার চোখ দিয়ে প্রয়োজনের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। লেখনীর মাধ্যমে আপন অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা ক্রেস্ট, সম্মাননা চেক ( ৫০ হাজার টাকা) তুলে দেন তাসমিমা হোসেন। তাদের ফুলের শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া করা হয়।
মনোয়ার/শহিদ