প্রস্তর
ইমন হোসেন মিলন
যেভাবে প্রেমপত্র পুড়িয়ে ফ্যালে ব্যর্থ প্রেমিক,
সেভাবেই এখন আমি দুঃখগুলো পুড়িয়ে ফেলবো।
সবকটি পিছুটান নিকোটিনে মুড়িয়ে,
আগেই উড়িয়ে দিয়েছি নির্বাসনে।
আমি আর ফিরবো না জেনেই,
বৈরাগ্যের হাত ধরে উধাও হয়েছি বিস্মৃতির আঁধারে,
বৈভব, স্বপ্ন, কিংবা নারী,
কারো ডাকেই আমি আর আসব না,
দূরত্বের দেয়াল ডিঙিয়ে,আমি আর-
জ্যোৎস্নার আঙিনায় উঁকি মারবোনা দুরারোগ্য শূন্যতায়।
আমিতো জেনেছি শেষে,
সূচনা কিংবা উপসংহার, সর্বত্রই মানুষ একা।
অপূর্ণতার ঘনীভূত মেঘ,
প্রবল বৃষ্টির মতো ঝরিয়ে ফেলবো অনুতাপহীন।
লোকালয় আমায় টানবে না আর,
আলো এবং অন্ধকারের দ্বিপাক্ষিক তর্কে এখন আমি পক্ষপাতহীন,
ভাঙা-গড়ার আবর্তনে একটুকরো প্রাণহীন প্রস্তর!
ধ্বংস কিংবা নির্মাণে আমার আজ কিছুই যায় আসে না,
অর্থ এবং অর্থহীনতা যেখানে মিলিয়ে যায়,
প্রিয় আর অপ্রিয় বলতে এখন এতটুকুই আকাক্সক্ষা,
অপেক্ষাও করছি না,
শুধু ছুটে চলছি তারই পানে, এ আমার আজন্ম যাত্রা!
নবান্ন আজ চিঠি লেখে
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
শিরশিরে হেমন্ত আজ চিঠি দিল শীতের
হাল্কা কুয়াশা আর মিষ্টি রোদের সকাল
খসখসে শরীর উষ্ণতা ছড়ায় মৃদু বাতাসে
কালো মেঘের ভিড় জমেছে নীল আকাশে।
সবুজ পাতা সতেজ হল ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু
শীতের ছোঁয়া কাকের পালক যেন চকচক
নকশিকাঁথার ধুম পড়েছে কেনা-বেচার হাটে
মটরশুঁটি,কলাই শাঁক ফসল ভরা মাঠে।
নতুন ধানের পিঠাপুলি কৃষাণী বানায় ঘরে
নবান্ন আজ চিঠি লিখে হলুদ গাঁদাফুলে
অসময়ে বৃষ্টি পড়ে গাঁয়ে শীতের আবাস
সূর্যমামার লুকোচুরি বৃষ্টি ভেজা আকাশ।
এক ঘূণ্যমান ধাঁধায়
বাজার সিন্ডিকেট
সোহেল রানা
মানুষ ইঁদুরের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে বিড়াল পোষে।
আর বিড়াল নিবিষ্টভাবে আমার দিকে চেয়ে থাকে
ভাজা মাছের লোভ সামলাতে পারে না
তাই আমার শয্যা রক্ষার্থে বিষের দোকানির দারস্থ হলাম
বাসের জানালা দিয়ে
মাহমুদুজ্জামান জামী
বাতাস আর
রোদের নিঃশঙ্ক যাতায়াত।
বাইরে প্রসারিত সবুজে
দৃষ্টির সাথে মন—-
আরো দূরে দিগন্তের
আপাত সমাপ্তিতে
কী খুঁজে ফিরে...
মন কোথায় যেতে চায়
কোন্ গভীরে?
অনির্ণীত ঘোলা জলে
পাক খায়;
নাকি স্বভাব তার এমনি যে
গভীরে ডুব দিয়ে
সমাধানহীন
এলোমেলো থেকে কিছুক্ষণ
আবারো স্বাভাবিক হয়ে
ঘুরতে চায় —-
বাস্তবের হাটে,
লোভের এই
বিস্তীর্ণ ধোঁয়াশায়!
মলাট
শারমিন নাহার ঝর্ণা
জীবনটা এক অদ্ভুদ মায়ার বই
চারিদিকে শুধু ছড়িয়ে আছে মায়া
পথের অলিতে গলিতে তাকালেই
বুকের ভেতরটায় মায়া থকবগ থকবগ
করে উদাসীন হয়ে যায় মন।
ছেঁড়া কাপড়ে অসহায় কত মুখ,
অনাহারে পথের ধুলোয় খোঁজে সুখ।
ব্যর্থতার মলাট জড়িয়ে বুকে গভীর
দীর্ঘশ্বাসে নত হয়ে পথ চলি,
এত অসহায় মুখে কবে ফুটবে সতেজ হাসি
বিরবির করে নিঃশব্দে বলি।
এখন চলে যাওয়া ঠিক হবে না
আলমগীর কবির
এখন চলে যাওয়া ঠিক হবে না তোমার।
বাইরে দেখো মিছিলের ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
অধিকার নিয়ে সরব রাজপথে বাঁকে বাঁকে।
স্লোগানে স্লোগানে জেগেছে নদী।
ধুলো উড়া পথে মাস্কবিহীন মুখ।
রাস্তার পাশে আগুন জ্বলছে।
বাতাসে টায়ার পোড়ার গন্ধ।
হট্টগোল, ককটেলের আওয়াজ।
এখন চলে যাওয়া ঠিক হবে না তোমার।
অধিকার নিয়ে মিছিলটা ফিরে আসুক।