.
অফিস ডে অফ আজ । বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেন রাহাত। নাস্তা করে সাদিয়ার তৈরি করা লম্বা ফর্দ নিয়ে সাপ্তাহিক কেনাকাটা করতে বেরিয়ে যান। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে দুই হাতে থলে ভর্তি সওদা নিয়ে ঘামে জবজবে শরীর নিয়ে বাসায় ফেরেন। ডবল ফ্যান চালিয়ে জামা-কাপড় ছাড়তে ছাড়তে গামছা দিয়ে ঘাম মোছেন। সাদিয়া থলে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে আনেন। এক নিঃশ্বাসে শেষ করে খাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন রাহাত। টিভি রুমে ততক্ষণে দুই ভাই-বোনের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
আমি দেখছিলাম, তুমি রিমোট নিলে কেন?
সারাদিন তুই দেখবি নাকি?
বাবা বলেছে না একসঙ্গে মিলেমিশে দেখতে?
তোর সঙ্গে ওই ছোটদের কার্টুন আমি দেখব নাকি?
তুমি বুঝি বড় হয়ে গেছ? আর বড়রা কি কার্টুন দেখে না। বাবা-মাও তো মাঝে মাঝে কার্টুন দেখে। তুমিও তো মাঝে মাঝে দেখো।
তাতে কি, এখন আমি দেখব না। গুরুত্বপূর্ণ খেলা চলছে। আমি এখন খেলা দেখব। হয় আমার সঙ্গে খেলা দেখ, নয়তো পুতুল খেল গিয়ে।
না আমি কার্টুন দেখবো। রিমোট দাও বলছি।
না দেবো না।
রিমোর্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হলে সাদিয়া কিচেন থেকে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন, টিভি বন্ধ কর বলছি, কাউকে টিভি দেখতে হবে না।
পরিস্থিতি ভয়ানক দেখে রাহাত নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠে আসেন।
এই গরমে কী শুরু করেছ তোমরা? দুদিন আগে কী বোঝালাম তোমাদের? বলেছি না একসঙ্গে মিলে মিশে টিভি দেখতে হয়, একে অপরকে ছাড় দিতে হয়। ভাই-বোন হয়ে যদি একে অপরকে ছাড় দিতে না পারো তাহলে অন্যকে কীভাবে ছাড় দেবে?
বাবার কথার উপর কথা বলে না কেউ, মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রাহাত বলেন, রিমোট কই?
শুদ্ধ কেড়ে নেওয়া রিমোট শরীরের পেছন থেকে সামনে আনে।
দাও, আমার কাছে দাও। এখন তোমাদের টিভি দেখতে হবে না। খেলো গিয়ে।
ছলছল চোখে দুজনেই ঝুলবারান্দায় চলে যায়। এই বারান্দাখানিই এখন ওদের যাবতীয় খেলা ও অবকাশ কাটানোর আশ্রয়।
ঋদ্ধ বলে, তোমার জন্যই কার্টুন দেখতে পারলাম না। বাবা টিভি দখলে নিয়ে নিলো, তাতে তোমার কী লাভ হলো? অন্তত আমার সঙ্গে বসে বসে কার্টুন দেখতে পারতে? যাও এখন বাবার সঙ্গে বসে বসে টক-শো দেখো, আর যুদ্ধের খবর দেখো।
তোর অই ন্যাকা ন্যাকা কার্টুনের চেয়ে যুদ্ধের খবরও অনেক ভালো। আমার সঙ্গে যদি খেলা দেখতি বরং তোর জন্য ভালো হতো, খেলার ফাঁকে ফাঁকে কার্র্টুনও দেখতে পারতি।
বাবা টিভির ভলিউম বাড়িয়েছে। বারান্দা থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
ঋদ্ধ চোখে-মুখে অভিমান ধরে ভাইকে বলে, বাবা তো টিভি দেখছে, আমরা এখন কী করবো, বলো?
শুদ্ধ বলে, আমাদের মাঠ আছে যে খেলবো? নানুবাড়ি কত সুন্দর মাঠ, ছুটিতে সেখানেও যাওয়া হলো না।
হই-হুল্লোড় করতে করতে পাশের ফ্ল্যাট থেকে আসে মুগ্ধ ও চয়ন। শুদ্ধ-ঋদ্ধ’র সঙ্গে অবসরে প্রায়ই ওরা খেলতে আসে। সেই কখন থেকে এ বাসায় আসার জন্য মায়ের কাছে বায়না ধরেছেÑ অবশেষে মা আসতে দিলো।
খেলার সাথীদের আগমনে নিমেষেই শুদ্ধ-ঋদ্ধ বাবার রিমোট কেড়ে নেওয়ার বেদনা ভুলে যায়। ওরা আনন্দে মেতে ওঠে।
টিভি রুম থেকে বাবার কণ্ঠ ভেসে আসেÑ তোমরা আস্তে কথা বলো।
বারান্দা থেকে শোনা যাচ্ছে বাবা টিভির ভলিউম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সংবাদঃ
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বর্বর বিমান হামলায় নিহত এক অন্তঃসস্ত¡ার গর্ভ থেকে জীবিত শিশুর জন্ম হয়েছে। জরুরি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে শিশুটিকে বাঁচাতে পেরেছেন চিকিৎসকরা।
রাতে গাজা উপত্যকার দুটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৯জন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের ১৩টি শিশু রয়েছে। এ হামলাতেই স্বামী, মেয়েসহ সাবরিন আল সাকানি নামের ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসস্ত¡াও নিহত হন।
পাশের ভবন থেকে ভেসে আসে সিরিয়ালের সংলাপ। অন্য কোনো ভবন থেকে আসে খেলার ধারাবিবরণী। শুদ্ধের মনটা বিষণœ হয়ে ওঠে। কিন্তু খেলার সাথীরা যখন শব্দ করে হেসে ওঠে তখন বিষণœতায় যতিচিহ্ন পড়ে। ওদিকে বাবা চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরিয়ে যুদ্ধের খবর দেখেন। মুহূর্তেই সংবাদের শব্দে যাবতীয় শব্দ ম্লান হয়ে যায়। ক্ষেপণাস্ত্র যেন টিভির ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। যেন মুহুর্মুহু গোলা এসে পড়ে মনমরা বাচ্চাদের বারান্দায়। দরজা ডিঙিয়ে আহত শিশুদের চিৎকার ভেসে আসে। ভেসে আসে মায়েদের আহাজারি।
ঋদ্ধ বলে, চলো আমরা পুতুল খেলি। আমার কাছে এত্ত এত্ত পুতুল আছে। দাঁড়াও নিয়ে আসি।
হেসে ওঠে শুদ্ধসহ অন্যরা।
ঋদ্ধের মন মুহূর্তে খারাপ হয়ে যায়। যাও তোমাদের সঙ্গে খেলব না আমি। ভীষণ রাগ ধরে ঋদ্ধের।
শুদ্ধ আপন বোনের রাগ ও দুঃখকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না। ও অন্যদের সঙ্গে ভাবতে থাকে কী খেলা যায় এখন। অন্য ভবনের বারান্দার ছেলেমেয়েরাও ভাবছে কী খেলা যায়।
বিকেল হলে ছাদে গিয়ে ওরা খেলতে পারতো। যদিও ছাদে খেলার জায়গা এখন কমে গেছে। ছাদবাগান দখল করে নিচ্ছে খেলার ক্ষুদ্র পরিসরটুকু। গাছের গায়ে সামান্য আঘাত লাগলে বকা খেতে হয়। খোলা হাওয়া, খোলা আকাশ পেলেও দম বন্ধ করে খেলতে হয় ওদের। আনন্দের পুরোটা ধারণ করা যায় না। তবুও তো এই বারান্দার চেয়ে ভালো। কিন্তু এই রোদে ছাদে যাওয়ার উপায় নেই। রোদ আর কী পোড়াবে? মা-বাবাই পুড়িয়ে দেবে; পিঠের ওপর বোম ফাটিয়ে দেবে।
সংবাদ : ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার মুখে খুবই শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ভবন বা শরণার্থীশিবিরে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমবিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার গাজার উত্তর অঞ্চলে স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। এতে গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজার ৭৮ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
পাশের ভবনের বারান্দায় এক বালক খেলনা বন্দুক নিয়ে আসে। অনবরত গুলি ছোড়ে আর মুখ দিয়ে বিকট শব্দ করে। এই দৃশ্যে আনন্দ পেয়ে আর এক বালক তার সংগ্রহে থাকা বিভিন্ন খেলনা-অস্ত্র নিয়ে আসে। সেও গুলি ছোড়ে আর মুখ দিয়ে গুলি ছোড়ার ভয়ংকর আওয়াজ তোলে।
গোলাবারুদের শব্দ যেন টিভির পর্দা ফাটিয়ে দেয়- একেকটা ভবন ধসে পড়ছেÑ ধসে পড়ছে বাসস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি হাসপাতাল।
সংবাদ : ইসরাইলের চলমান
হামলায় ধ্বংস, মৃত্যু আর অনাহারের নগরীতে পরিণত হয়েছে একসময়ের প্রাণবন্ত জনপদ গাজা। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে পশু-পাখির খাবার গুড়ো করে খাচ্ছেন অবরুদ্ধ গাজার অসহায় ফিলিস্তিনিরা।
শুদ্ধ বলে, খেলার দারুণ একটা আইডিয়া পেয়েছি?
সবাই জিজ্ঞেস করে, কী খেলা?
দুই বিল্ডিং এর দুই বারান্দায় বসেই আমরা খেলতে পারব। দারুণ মজা হবে!
আরে কী খেলা তা বলবি তো!
শোন, আমরা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলব।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা!
হ্যাঁ, আমরা একদল হব ফিলিস্তিন, আর একদল হব ইসরাইল।
ঋদ্ধ বলে, যুদ্ধ আমার ভালো লাগে না, আমি যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলব না।
শুদ্ধ বলে, তুই না খেল, একপাশে বসে থাক।
শিশুরা যার যার বাসা থেকে খেলনা অস্ত্র নিয়ে আসে। এমন কেউ নেই যার বাসায় দু-চারটি খেলনা অস্ত্র নেই। মুহূর্তেই ওরা ফায়ারিং খেলায় মেতে ওঠে।
ঋদ্ধ বারান্দার এককোণে বসে পুতুল খেলতে থাকে।
শুদ্ধ চিৎকার করে বলে, এই তোরা ফায়ারিং শুরু করে দিলি! কারা ইসরাইল, করা ফিলিস্তিন, তা-ই তো ঠিক হয়নি।
এক বারান্দা থেকে ছেলেমেয়েরা চিৎকার করে ওঠেÑ আমরা ফিলিস্তিন।
অন্য বারান্দা থেকেও চিৎকার ওঠে, আরে না না, তোরা ইসরাইল, আমরা ফিলিস্তিন।
না, তা হবে না, আমরা ফিলিস্তিন।
কেউ ইসরাইল হতে চায় না।
শুদ্ধ বোঝায়- আসল যুদ্ধে তো ফিলিস্তিনিরাই মারা যাচ্ছে, ইসরাইলি বাহিনী গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ফিলিস্তিনের সবকিছু। ইসরাইলই তো জয়ী হচ্ছে। তোমরা বরং ইসরাইলের পক্ষ নাও।
আমাদের বোঝাতে এসেছ, তোমরা নিতে পার না?
খেলতে হলে তো এক দলকে ইসরাইলের পক্ষ নিতেই হবে।
সংবাদ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালে ইসরাইলের বিমান হামলায় প্রায় ৫শ’ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে। মধ্য গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলেছে হামাস। সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হতাহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
একজন বলে, ঠিক আছে, টস হোক তবে। টসেই নির্ধারিত হবে কারা হবে ইসরাইল, কারা ফিলিস্তিন।
আচ্ছা তাই হোক।
টসের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মুহুর্মুহু গোলবর্ষণ করতে থাকে দুই দল। দুটি ঝুলবারান্দায় নেমে এসেছে মধ্য প্রাচ্যের সংঘাত। দারুণ খেলায় মেতেছে ওরা। পাশের ভবনের খেলার চ্যানেলের শব্দ আবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ক্রিকেটের উত্তেজনা টের পেলেও সে দিকে আর মন নেই শিশুদের।
শুদ্ধের মনে হতো, কেন যে মানুষ যুদ্ধ করে, যুদ্ধের মতো বর্বরতা আর কিছুতে নেই। কিন্তু খেলাটা আজ উপভোগ করছে শুদ্ধ। ঋদ্ধ বারবার তাকাচ্ছে যুদ্ধ খেলার দিকে, কিন্তু কিছুতেই সেদিকে মন টানছে না, ও ফের পুতুলখেলার দিকে মন দেয়।
যুদ্ধখেলা পুতুলখেলাকে বাধাগ্রস্ত করছে। ঋদ্ধ বারবার চিৎকার করে বলছে- তোমরা আমার এ পাশে আসো কেন? আমাকে ডিসটার্ব করবে না বলে দিলাম। তোমাদের জন্য কি শান্তিতে খেলতে পারব না?
শুদ্ধ বলে, যুদ্ধের ভেতর আবার শান্তি পাবি কোথায়?
আমি তো তোমাদের সঙ্গে খেলি না।
সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করে না, কিন্তু তারাই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। তাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়, বুলেটে বিদ্ধ হয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশ আটকে থাকে, তাদের গণকবর হয়, জীবিতরা শরণার্থী হয়, তারা অনাহারি থাকে, রোগে ভোগে, হাড্ডিসার হয়ে মারা যায়।
ঋদ্ধ চিৎকার করছে, আমার পুতুলে হাত দেবে না বলছি।
ঝুলবারান্দায় টিভির পর্দা কাঁপিয়ে ক্রিকেটের হুল্লোড় ভেসে আসছে। ভেসে আসছে ফিলিস্তিনের বাতাস প্রকম্পিত ক্ষেপণাস্ত্রের হুঙ্কার। ভেসে আসছে মায়ের আহাজারি, শিশুর আর্তনাদ, গুলি ও গলিত লাশের দুর্গন্ধ।
ফায়ার
ফায়ার
ইসরায়েল ইসরাইল
ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন
চিৎকার-চেঁচামেচি, মুখ দিয়ে ফায়ারিংয়ের বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠছে বারান্দা।
ঋদ্ধের পুতুল খেলার উপর আবার অহেতুক আক্রমণ হলো। এবার ও আর চিৎকার করে রেগে ওঠার ভেতর সীমাবদ্ধ থাকলো না; কান্না শুরু করে দিলো।
ঋদ্ধের কান্না শুনে রাহাত-সাদিয়া দম্পতি ছুটে এলেনÑ কী হয়েছে! কী হয়েছে! শুদ্ধের বুদ্ধিমত্তায় অল্পতেই পরিস্থিতি সামাল হলো। সাদিয়া আবার কিচেনে ফিরে গেলেন। রাহাত ছেলেমেয়েদের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা দেখতে লাগলেন। তার চোখে ভাসছে গুলিবিদ্ধ মানুষের বিলাপ।
শিশুরা রাহাতকে ডাকছে, আঙ্কেল, আমরা যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলছি, আপনি আমাদের দলে আসেন।
না না, আঙ্কেল, আপনি আমাদের দলে আসেন, আমরা ইসরাইল।
রাহাত ভাবে, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে যুদ্ধটা স্রেফে একটা শিশুতোষ খেলা।
আঙ্কেল, আপনি কোন পক্ষ নেবেন?
রাহাত কোনো কিছু না ভেবেই বলেন, আমি জাতিসংঘ।