ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

বিহান আসে পিয়ান হাসে

জসীম আল ফাহিম

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৭ নভেম্বর ২০২৪

বিহান আসে পিয়ান হাসে

বিহান আসে পিয়ান হাসে

বিহান আসে পিয়ান হাসে। শিশুকিশোর উপযোগী একটি ছড়া-কবিতার বই। ছোটো-বড় ছাব্বিশটি ছড়া রয়েছে। বইয়ের ঝকঝকা ছাপা-বাঁধাই, উন্নত কাগজে মুদ্রিত এবং ঝমকালো অলংকরণ সব মিলিয়ে একটি নজরকাড়া গ্রন্থ বলা যায়। এই বইয়ের মাধ্যমে কবি পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী একজন শক্তিমান ছড়াকারের স্বাক্ষর রেখেছেন। ছড়াকারকে অভিনন্দন। বিশুদ্ধ ছড়া বলতে যা বুঝায়, এই বইটি তার সার্থক প্রমাণ বহন করে। 
বইটির প্রথম ছড়া যার নাম ‘পড়শীমণি’, তাতে কবি লিখেছেন-পড়শীমণি বড়শি দিয়ে/ যেই ধরেছে মাছ/ পিয়ান ধরে নাচ/ তাই না দেখে/ অবাক যত/ পুকুর পারের গাছ। এ ছড়ায় যেমন শিশুতোষ চিত্রকল্প ফুটে উঠেছে, তেমনি এর ছন্দ-মাত্রা এবং উপস্থাপনাও অত্যন্ত চমৎকার। 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকেও ছন্দে ছন্দে তুলে ধরেছেন। শিশুকিশোর পাঠকের মনে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে তিনি ছন্দের গাঁথুনি দিয়ে সাজিয়েছেন। ‘স্বাধীনতা দিবস’ শিরোনামের ছড়াটিতে তিনি লিখেছেন-স্বাধীনতা দিবস আমার যুদ্ধে যাবার ডাক/ দেশকে করতে শত্রু মুক্ত বীর বাঙালির হাঁক।/...স্বাধীনতা দিবস আমার দূর করেছে ভয়/ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জয়। ছড়াটিতে লেখক বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ছন্দের মাধ্যমে অঙ্কন করেছেন।
ছড়াকার তাঁর ‘মা’ শীর্ষক ছড়ায় পৃথিবীর সকল মায়ের স্তবকীর্তন করেছেন উদারভাবে। তিনি লিখেছেন-জন্ম হবার সঙ্গে সঙ্গেই হয় দেখা যার সঙ্গে/ তিনি হলেন মামণিটা খাওয়ান নিজের হাতে।...লালন করেন মামণি যে, করেন ঘরের কাজও/ মায়ের মতো আপন কেহ পাইনি খুঁজে আজও। সত্যিই মায়ের মতো আপনজন ও পরম হিতাকাক্সক্ষী তিনভুবনে দ্বিতীয়জন আর নেই। আমরা মা-জননীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ জগৎবাসীও।
কবি তাঁর ‘মেঘপরি’ শীর্ষক ছড়ায় লিখেছেন-মেঘপরি ও মেঘপরি/ সাদাকালো রূপ ধরি/ দূর আকাশে উড়ে যাও/ কোন সে দেশের কোন বা গাঁও।/ মেঘপরি কয়-অনেকদূর/ মেঘের দেশের অচিনপুর। এই ছড়ার মাধ্যমে আমরা সহজেই রূপকথার অচিনপুরের ঠিকানা লাভ করতে পারি।
বইয়ের সর্বশেষ ছড়াটির শিরোনাম-‘ফাগুনের বনে’। এই ছড়ায় কবি ঋতুরাজ বসন্ত ঋতুতে নৈসর্গিক যে- শোভা ও সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, তা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরেছেন। শেষের চার পঙ্ক্তি-বাউলিয়া মন ঘুরে সারাক্ষণ/ দোতারায় তুলে ঢেউ/ ফাগুনের রূপে ভাবুকেরা ডুবে/ কবি হয় কেউ কেউ।
এছাড়াও রয়েছে ‘রোজার শেষে এল ঈদ’, ‘দুর্গাপূজা’, ‘পয়লা বোশেখ’, ‘জাগো বাঙালি’, আবহমান বাংলার ছয়টি ঋতু বিষয়ক ছড়াসহ আরও কয়েকটি ছড়া। 
কবি পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নিরলস ও বিরতিহীনভাবে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তিনি একাধারে একজন কবি, ছড়াকার, গল্পকার ও সংগঠক। মোটামুটি শৈশব থেকেই লেখালেখিতে তাঁর হাতেখড়ি। ছোটো-বড় সবার জন্যই তিনি লিখে থাকেন। তাঁর লেখাগুলো বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে। তিনি মূলত যুগসন্ধিক্ষণের কবি। কুড়ি শতকের শেষ ও একবিংশ শতকের শুরু সময়ে সাহিত্যের ভুবনে তাঁর গমনাগমন। স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। আমরা তাঁর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি
প্রকাশক : বুনন।
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : টিটন কান্তি দাশ।

×