ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

 বাংলা একাডেমি সংস্কারে ১৬ দফা প্রস্তাবনা বৈষম্য বিরোধী প্রকাশক সমিতির

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৩ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:২৬, ৩ নভেম্বর ২০২৪

 বাংলা একাডেমি সংস্কারে ১৬ দফা প্রস্তাবনা বৈষম্য বিরোধী প্রকাশক সমিতির

বৈষম্য বিরোধী সৃজণশীল প্রকাশক সমিতি

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ এর অমর একুশে বইমেলাকে আরো মানসম্পন্ন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে দালাল প্রকাশক ও দালাল লেখকদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি  বাংলা একাডেমিকে ১৬ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী সৃজণশীল প্রকাশক সমিতি।  

রবিবার  বৈষম্য বিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে প্রস্তাবনাগুলো  লিখিতভাবে প্রদান করেন। 

সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো হলো- অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এর মূল থিম ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভুত্থানের আলোকে করা ( ২) মেলায় ৫০% স্টল ভাড়া কমানোর পাশাপাশি সকল স্টল একই ধরনের প্যাটার্নে তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা (৩) অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ মেলা কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে সমানুপাতিক হারে প্রকাশক প্রতিনিধি রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন কমিটিতে সাংস্কৃতিক সংগঠন বা নানান সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধির সংখ্যা কমাতে হবে এবং দালাল প্রকাশক এবং দালাল লেখকদের এ সকল কমিটিতে রাখা না যাবে না (৪) আগামী বছরের বইমেলায় গত বছরের মতো হুবহু বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। 

বিজ্ঞাপনে অবশ্যই প্রকাশক বাছাই বিষয়টা উল্লেখ থাকতে হবে। প্রকাশক বাছাইপর্ব অনুসরণ করে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রকাশকদেরকেই স্টল বরাদ্দ দিতে হবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ স্টল পাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য রিভিউ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করতে হবে (৫) অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ অবশ্যই প্যাভিলিয়ন বন্ধ করতে হবে। ১, ২, ৩ ও ৪ ইউনিটের স্টলগুলো দ্বিমুখি করতে হবে (৬) কালো তালিকাভুক্ত কোনো প্রকাশককে কোনোভাবেই স্টল বরাদ্দ দেওয়া যাবে না (৭) খাবারের দোকানের সংখ্যা কমিয়ে মানসম্মত ২/৩টি দোকান একেবারে পেছনের দিকে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরাদ্দ দিতে হবে এবং খাবারের দোকানে নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। 

কোনো অবস্থাতেই মেলার প্রবেশ মুখে খাবারের দোকান, যত্রতত্র আইসক্রিমের দোকান এবং কফির দোকান বরাদ্দ দেয়া যাবে না (৮) স্পন্সর প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ২টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে হবে। বিগত বইমেলায় দেখা গেছে বিকাশ একেবারে মেলার প্রবেশমুখে যেখানে একটা ফোয়ারা স্থাপন করা হয় তার পাশেই অন্তত ১০ থেকে পনেরো সেট সোফা বসিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালায়। বিকাশের ইউনিফর্ম পরিহিত কোনো ব্যক্তি কোনো পাঠক বা ক্রেতা অথবা প্রকাশকের কাছ থেকে ছিন্নমূল শিশুর জন্য উপহার দেয়ার নামে সৌজন্য তথা ভিক্ষার মাধ্যমে বই চাইতে পারবে না।

কারণ প্রকাশকরা সারাবছর বিভিন্ন পাঠাগারে সৌজন্য বই প্রদান করে থাকে (৯) কোনোভাবেই শিশুচত্ত্বর আলাদা করা যাবে না (১০) ৪টি প্যাভিলিয়নের পরিবর্তে বাংলা একাডেমিকে সর্বোচ্চ ২টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে হবে (১১) মেলায় প্রবেশের জন্য টিকেটের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। উক্ত টিকেটই ভাউচার হিসেবে গন্য হবে এবং এই ভাউচার প্রকাশকদের কাছে অথবা বইয়ের স্টলে প্রদান করলে তারা উক্ত টিকেটের মূল্য বই বিক্রয় মূল্য থেকে সমন্বয় করতে বাধ্য থাকবে। 

মেলা শেষে প্রকাশকরা উক্ত টিকেট বাংলা একাডেমিতে জমা দিয়ে টাকা ক্যাশ করে নিতে পারবে। টিকেটের প্রবেশ মূল্য আলোচনাসাপেক্ষে নির্ধারিত হতে হবে। খাবারের স্টলে এই টিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না (১২) প্রকাশকদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথের ব্যবস্থা করতে হবে (১৩)  নীতিমালা প্রণয়নের সময় প্রকাশক প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে (১৪) মূল মঞ্চের অনুষ্ঠানে প্রতিদিন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের নিয়ে আলোচনা থাকতে হবে এবং প্রকাশকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে (১৫) বইমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রদানকৃত পুরস্কার দলীয় বিবেচনায় দেওয়া যাবেনা (১৬) মেলায় বাংলা একাডেমিসহ সকল স্টলে সর্বোচ্চ ২০% কমিশনে বই বিক্রির নির্দেশনা নীতিমালায় সংযুক্ত করতে হবে। 

প্রস্তাবনাগুলো দাবি আকারে একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে প্রদান করার সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সূচীপত্রের সাঈদ বারী, সাধারণ সম্পাদ আবিষ্কার প্রকাশনীর দেলোয়ার হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসি প্রকাশনীর হেলাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি জাগৃতির রাজিয়া রহমান,  যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক শাহজী প্রকাশনীর শরীফুল হক শাহজী,  মেলা বিষয়ক সম্পাদক সৃজনী প্রকাশনীর মশিউর রহমান, অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক দি রয়েল পাবলিশার্সের জামাল উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কলি প্রকাশনীর এস এম মহিউদ্দিন কলি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুই প্রকাশনীর মোরশেদ আলম হৃদয় প্রমুখ। 
মহাপরিচালকের কাছে ১৬দফা সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়ে বৈষম্য বিরোধী প্রকাশক সমিতির নেতারা বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল  কাসেম ফজলুল হকের সঙ্গেও প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলেন।

মনোয়ার/শহিদ

×