ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

ফ্রিদা এবং তার ব্যথার ছবি

আইয়ুব আল আমিন

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২ নভেম্বর ২০২৪

ফ্রিদা এবং তার ব্যথার ছবি

ফ্রিদা এবং তার ব্যথার ছবি

সারা পৃথিবীতে নারী পেইন্টারদের মধ্যে ফ্রিদা কাহলো যতটা জনপ্রিয় ততটা জনপ্রিয় যে আর কেউ নেই তা হলফ করেই বলা যায়। এটা প্রধানত হয়েছে তার অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভিন্নধর্মী কাজে এবং নিয়তি প্রদত্ত্ব এক বিরল সংগ্রামী জীবনাচারণের জন্যও।

ফ্রিদা কাহলো একজন মেক্সিকান শিল্পী ছিলেন যিনি নিজের এবং তার জীবনের বিষাদময় ঘটনাগুলির উপর এমন চিত্রকর্ম তৈরি করে গেছেন, যেগুলো তার একটি পরিপূর্ণ আত্মজীবনীই তৈরি করে ফেলেছে।

জুলাই ১৯০৭ সালে মেক্সিকো সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন ফ্রিদা কাহলো ১৯২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফ্রিদা একটি বাস দুর্ঘটনায় এতটাই আহত হন যে অনেকেই মনে করতে তার পক্ষে বেঁচে থাকা আর সম্ভব নয়। তারপরও যে তিনি বেঁচে ছিলেন এটাই আশ্চর্য্য বটে। সেই দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডের বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙে যায় এবং শরীরের অন্যন্য অংশও এতোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে চিকিৎসকেরা বলে দেন তার জীবনে সন্তান ধারণ করা আর অসম্ভব নয়। এরপরও একবার গর্ভধারণের পর তার গর্ভপাত ঘটে, এই সমস্ত ঘটনা জীবন সম্পর্কে ফ্রিদার ধারণাকে আমূলে বদলে দেয়

তিনি তার এই অভিজ্ঞতাগুলিও এঁকেছিলেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই। হ্যাঁ ওই দূর্ঘটনার পর ফ্রিদা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ওভাবেই ছবি আঁকতেন। শারীরিক এমন নিদারূন ক্ষত নিয়েই তিনি নিজেকে আঁকতেন যেগুলো হয়ে উঠেছে তার মানসিক বেদনা এবং ক্ষতগুলির জীবন্ত দলিল।

ফ্রিদা ছয় বছর বয়সে পোলিওতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন, এতে তার পা  তুলনামূলক চিকন হয়ে যায়, এজন্য ফ্রিদাকে তার সহপাঠিরা ঘৃণা করতেন বলেও তিনি বলেছেন।  এই বিষয়টিও তার চিত্রগুলিকে প্রভাবিত করেছে। এজন্য ছবিতে তিনি নিজেকে সবসময় লম্বা স্কার্ট দিয়ে ঢাকা অবস্থায় আঁকতেন।  ফ্রিদার সমস্ত পেইন্টিং মূলত তার নিজেরই প্রতিকৃতি। নিজেকেই তিনি তার  জীবনে দুর্ঘটনা, গর্ভপাত এবং অন্যান্য হতাশাজনক মুহূর্তের মধ্য দিয়ে এঁকেছেন।

তিনি নিজেই বলেছেন; 'আমি আমার নিজেকে আঁকতে পারি কারণ আমি প্রায়শই একা থাকি এবং আমি  আমার সম্পকেই সবচেয়ে ভালো জানি আমি কখনো স্বপ্ন আঁকিনি, আমি আমার বাস্তবতাই এঁকেছি। তার কিছু বিখ্যাত পেইন্টিং এর মধ্যে ’উইদাউট হোপ’, ’থিংকিং এ্যাবাউট ডেথ’, ’সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ নেকলেস’, ’সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ মাংকি’, ’সেলফ পোর্ট্রেইট উইথ লুজ হেয়ার’, ’মাই বার্থ’, দি বাস’, ’রুটস’ ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য।

খেয়াল করলে দেখা যায় তার পেইন্টিংগুলো মূলত প্রতীক এবং পরাবাস্তববাদের উপর ভিত্তি করে আঁকা

ফ্রিদার সমস্ত কাজ ছিল মেক্সিকান সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত । তার কাজের মধ্যে বিভিন্ন প্রতীক,  উজ্জ্বল রং এবং শৈলীতে মেক্সিকান সংস্কৃতিই বার বার ঘুরে ঘুরে এসেছে।

শহিদ

×