ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

স্বাধীনতার কবি

এস ডি সুব্রত

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

স্বাধীনতার কবি

স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান

স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমানের ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিবেচনাবোধ আর প্রখর সমাজ চেতনা। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ আর বাস্তব নির্মমতা তাঁর কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে চরম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কবির ‘সুধাংশু যাবে না, ধ্বংসের কিনারে বসে,... কবিতায় মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে এভাবে...
‘লুণ্ঠিত মন্দির আর অগ্নিদগ্ধ বাস্তুভিটা থেকে
একটি বিবাগী সুর সুধাংশু কে ছুঁলো -
... বেলাশেষে সুধাংশু ভস্মের মাঝে 
খুঁজে বেড়ায় দলিল, ভাঙা চুড়ি, সিঁদুরের কৌটো
স্মৃতির বিক্ষিপ্ত পূতিমালা।
.. এ পবিত্র মাটি ছেড়ে কখনো কোথাও
পরাজিত সৈনিকের মতো
সুধাংশু যাবে না।’ 
জাতীয় জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো দারুণভাবে কবির মনে রেখাপাত করত। সমসাময়িক সমাজের দুঃখ বেদনা হাসি কান্না তার কবিতায় উঠে এসেছে অবলীলায়। বর্তমান সমাজে, রাষ্ট্রে যে অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সম্প্রীতির বন্ধনকে আলগা করে দিচ্ছে অনেকখানি কবি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন সেই সময়ে। সত্য প্রকাশের অবিচল ধারায় চলতে গিয়ে নিজেও মৌলবাদীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন কবি।
স্বাধীনতার কবি, আধুনিকতার কবি শামসুর রাহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন পুরাণ ঢাকার মাহুতটুলীর ৪৬ নম্বর বাড়িতে। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মেঘনাপাড়ের পাড়াতলী গ্রামে। বাবা মুখলেছুর রহমান চৌধুরী ছিলেন পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ও মা আমেনা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। বাবা-মা ধার্মিক ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। একটা সুস্থ ও সেকুলার পরিবেশে কেটেছে কবির শৈশব- কৈশোর।
হাজার হাজার লোক, এমনকি অসংখ্য কৃষক আদি ভিটা জমিজমা ছেড়ে খোঁজে ঠাঁই যেমন তেমন ভিনদেশে। (শামসুর রাহমান) এদেশের মানুষ কত রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছিল, স্বপ্নের কাজল মেখেছিল দুচোখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন আজো অনেকটা স্বপ্নই থেকে গেল। কবির পঙ্ক্তিমালায় কত নিখুঁতভাবে সেই আক্ষেপ ফুটিয়ে তুলেছেন।
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিক হিসেবে। ১৯৫৭-৫৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক। ১৯৬০-৬৪ পর্যন্ত ছিলেন ‘দৈনিক মর্নিং নিউজ’র সিনিয়র সহসম্পাদক। ১৯৬৪-৭৭ পর্যন্ত ‘দৈনিক পকিস্তান’/ ‘দৈনিক বাংলা’য় সহকারী সম্পাদক হিসেবে এবং ১৯৭৭-৮৭ পর্যন্ত ‘দৈনিক বাংলা’য় ও ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শামসুর রাহমান প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন কবি। প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল। তাঁর কবিতা প্রেরণা দিয়েছে এ দেশের মানুষকে। ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’য় তিনি লিখেছেন...

‘উনিশ শো’ বায়ান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।’
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তিনি লিখেন-...
‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া
থরে থরে রে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে।
কখনো মিছিলে কখনো বা
একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়-ফুল নয়, ওরা
শহীদের কলুষিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।’

×