ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

জয়নুলের আঁকা ছবির কত দাম! 

আইয়ুব আল আমিন

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ২১ অক্টোবর ২০২৪

জয়নুলের আঁকা ছবির কত দাম! 

জয়নুলের আঁকা ছবি

আপনার কাছে যদি এখন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা একটি ছবি থাকে তাহলে নিসন্দেহে বলা যায় আপনি কোটিপতি। সম্প্রতি তাঁর একটি চিত্রকর্ম নিউ ইয়র্কে (৫ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে) ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৮ ডলার বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার সমান । এটি বাংলাদেশি কোনো শিল্পীর জন্য একটি রেকর্ড। 

গত ২৫ সেপ্টেম্বর চিত্রকর্মটি নিলামে তোলে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স। ১৮শ শতকে প্রতিষ্ঠিত সদবির বর্তমান সদর দপ্তর নিউ ইয়র্কে ছবিটি বিক্রি হয়। এটি জয়নুলের ‘মনপুরা ৭০’ সিরিজের একটি চিত্রকর্ম।

জয়নুল আবেদিন মনপুরা ৭০’ সিরিজের এসব বিখ্যাত ছবি আঁকেন দক্ষিণাঞ্চলের চর মনপুরায় ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর। এ ঝড়ে প্রাণ হারান লক্ষাধিক মানুষ। ১৯৭৩ সালে আঁকা ‘মনপুরা ৭০’-এর পাশাপাশি একই শিরোনামে বেশ কয়েকটি স্কেচ আঁকেন জয়নুল, যার একটি হলো এই ‘শিরোনামহীন’ ছবিটি। এক্ষেত্রে বলা যায় এতো চড়া দামে বিক্রি হওয়া কাজটি কিন্তু তাঁর ‘মাস্টারপিস’ নয়। বরং মাস্টারপিস আঁকার প্রস্তুতিস্বরূপ যে স্কেচগুলো আঁকা হয়, এটি তেমনই একটি ছবি।

চিত্রকর্মটি শিল্পী জয়নুল আবেদিনের পক্ষ থেকে চেদোমিল প্লাজেক নামক একজনকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। কাগজের ওপর কালির আঁচড়ে আঁকা এবং ছবির নিচে ডানদিকে 'জয়নুল/১৯৭০' স্বাক্ষর ও তারিখযুক্ত। এতে শক্ত হাতে এক মা তাঁর সন্তানকে ধরে রেখেছেন। যে ঋজু রেখার জন্য তিনি পরিচিত, সেই স্বভাবসুলভ রেখা এখানে মোমের আঁচড়, তুলির টান ও ওয়াশের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে।

সদেবি'স-এর তথ্য অনুযায়ী, প্লাজেক ছিলেন একজন হাইড্রোজোলজিস্ট এবং জাতিসংঘের জিওথেনিকা যুগোস্লাভিয়ার প্রতিনিধি। তিনি কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকতেন এবং অনেক বছর ধরে জাতিসংঘের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন জয়নুল আবেদিনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তখন তিনি তাকে এই ছবিটি উপহার দেন।

শিল্পীর ছেলে মাইনুল আবেদিন বলেন, জয়নুল ১৯৭৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট উপাধি গ্রহণের অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও এই সিরিজের অরেকটি ছবি ছবি উপহার দিয়েছিলেন। 

সদেবি'সে-এর নিলামের ফলাফল থেকে জানা যায়, জয়নুল আবেদিনের আরেকটি চিত্রকর্ম "নামহীন(মাল্টিপল ফিগার)" রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। এই চিত্রকর্মটি স্কেচ হলেও তেল রঙে ক্যানভাসে আঁকা । এই ছবির নিচেও ডানদিকে 'জয়নুল/৭১' স্বাক্ষর ও তারিখ রয়েছে। এটিও শিল্পীর পক্ষ থেকে চেদোমিল প্লাজেককে উপহার দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। এটি বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে (৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯০ ডলার), যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭.৬৯ কোটি টাকা।

আরেকটি চিত্রকর্ম 'নামহীন (ফিগারেটিভ)' যা জর্ডানে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের স্কেচগুলোর একটি। এটি ২ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে (২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩ ডলার) বিক্রি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩.৪৬ কোটি টাকা।

শিল্পাচার্যের ছবি যে এমন চড়া দামে বিক্রি হলো, বাংলাদেশের শিল্পীদের জন্য এটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কারণ একই ধারাবাহিকতায় এখনকার আরও অনেক শিল্পীদের শিল্পকর্ম বিশ্বের শিল্প সমঝদারদের কাছে মূল্যায়িত হবে এবং নানা দেশের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিতে পারবে।

সর্বপরি বিষয়টি বাংলাদেশী চিত্রশিল্প এবং শিল্পীদের জন্য একটি উজ্জল সম্ভাবনার দরজা খুলবে বলে মনে করাই যায় ।
 

শহিদ

×