ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

ডিম ছাড়া ব্রেকফাস্ট! সে তো ভাবতেও পারি না

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

ডিম ছাড়া ব্রেকফাস্ট! সে তো ভাবতেও পারি না

মারুফ রায়হান

ফুলে গন্ধ নেই, সে তো ভাবতেও পারি না। এই গান আমাদের তরুণবেলায় প্রিয় ছিল। এখন বুঝি, অনেক ফুলের গন্ধই থাকে না। শুধু রূপে আমরা ভুলি না; ফুলের কাছে আমরা সুবাসও আশা করি।

ডিম ছাড়া ব্রেকফাস্ট শুধু উচ্চবিত্ত কেন, মধ্যবিত্ত সমাজও ভাবতে পারে না। রোজ সকালে নাশতার প্লেটে একখানা ডিম চাইই চাই। দেখতে ছোটখাটো একটা জিনিস হলে কী হবে, ডিম সব সময়েই দামী খাবার। এক টাকায় এক কুড়ি ডিম যারা কিনেছি আমাদের জীবদ্দশায়, তারা আজ কুড়ি টাকা নিয়ে সাধাসাধি করলেও বাজারে একখানা ডিম পাচ্ছেন না। ভুল বললাম, আজ মঙ্গলবারেই ঢাকার কুড়িটি স্থানে ট্রাকে করে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় একজন গ্রাহক ১৩০ টাকায় এক ডজন ডিম কেনার সুযোগ পেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাশে নিয়ে ঘটা করে এর উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং বাণিজ্য উপদেষ্টা। 

অন্যদিকে আজকেই জনকণ্ঠে ছাপানো কাগজ ও অনলাইন মিলিয়ে শিরোনাম হয়েছে: ১. ডিম বিক্রি বন্ধ, ২. চট্টগ্রামে ডিমের সংকট: বেশির ভাগ আড়ত বন্ধ। আমাদের বাসায় তিনজনের জন্য লাগে দুটি ডিম; ছেলে খায় আস্ত, আমরা মিয়াবিবি অর্ধেকটা করে। কিন্তু আজ একটা খারাপ দিন গেল। আশেপাশের দোকানে, কাছের একটি বাজারে ডিম মেলেনি। তাই ফ্রিজের একখানা ডিম হাফবয়েল করে পুত্রের পাতে দিয়েই আমরা স্বস্তি মেনে নিয়েছি। কে বলে ডিম ছাড়া আমাদের সকাল শুরু হয় না। একটা গোল আলু বা ছোট কলাকে চাইলেই ডিমের বিকল্প ভেবে নেয়া যায়। 

আরও ভালো হয়, মাংসহীন দিবসের মতো ডিমহীন একটা দিবস জাতীয়ভাবে ঘোষণা করলে। হিসাবটা সহজ করে বলি। দেশটাকে একটা পরিবার ভাবা যাক। ৫ জন তার সদস্য, কিন্তু ডিম তিনখানার বেশি উৎপাদন হচ্ছে না, মানে ততো মুরগি নেই। তাহলে আমরা কী করব। প্রথমত উৎপাদন বাড়ানোর  চেস্টা করব। দ্বিতীয়ত আশেপাশের বা দূরের দেশ থেকে বাকি দুটো ডিম আমদানি করব। প্রথমত আমাদের আমদানির অনুমতি লাগবে; সেটা না হয় মিললো। এখন বিক্রি করে পোষাতে হলে, মানে ন্যূনতম মুনাফা করতে হলে শুল্ক ছাড় পেতে হবে। সরকার বাহাদুর তারও ব্যবস্থা করে দিলেন মুখে মুখে। কিন্তু আমদানি তো আর মুখে মুখে চলবে না, শুল্ক ছাড়ের আনুষ্ঠানিক কাগজটা ( প্রজ্ঞাপন) পেতে হবে। সেটি না পাওয়া গেলে ডিমের ঘাটতি আপাতত থেকেই যাবে। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগেই ঘটে গেল তুঘলকি কান্ড। আড়ত বন্ধ, পাড়ার দোকানে ডিম ফুরিযে গেল। সরকার চটজলদি ট্রাকে করে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা নিল। এতে সামান্য উপকার হলো। সব জায়গায় তো আর ওএমএস-এর ট্রাক যাবে না। আর মধ্যবিত্ত এখনো ওই ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যপণ্য কিনতে লজ্জা পান। কী করবেন। সমাজবাস্তবতাকে তো আর অস্বীকার করা চলে না।

আমরা দেখেছি এর আগে কোনো সরকারই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাংতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার দু ’মাসেই এটা ভেঙে দেবে, এমন আশা করা বাতুলতা। তাদের হাতে তো আলাদিনের চেরাগ নেই। তবে অভিযান টিম আছে। সেটা করতে গিয়ে উল্টো ফল যে ফললো সেটিও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল। ডিমের দাম কমাতে বাজারে অভিযানে নেমেছে সরকার। কিন্তু তাতে দাম তেমন একটা কমেনি। বরং কিছু কিছু পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি বন্ধ অথবা কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বরং সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।   

এবার একটা আজব কথা শুনলাম। আজব হলেও সত্যতা আছে কিছুটা। সবজির দাম চড়া। তাই গরিব মানুষেরা সবজি কমিয়ে ডিম কিনেছেন বেশি। মাছ-মাংসের বদলে তরিতরকারি দিয়ে যাদের জীবন চলত, তারা বাধ্য হয়ে ডিমে ফিরেছেন। সেই ডিমও একলাফে দাম বাড়িয়ে নিল, অনেক বাজারে আবার ডিম ডুমুরের ফুলও হয়ে উঠল। এরকম একটা বাস্তবতায় ওএমএস-এর মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রির বুদ্ধি মন্দ নয়। কিন্তু এটি হলো মহা চাহিদা-সিন্ধুতে কয়েক ফোঁটা, মানে বিন্দু বিন্দু জল দেয়ার মতোই। ঢাকার স্বল্পবিত্তসম্পন্ন, সোজা হিসাবে গরিব মানুষের সংখ্যা কোটির ওপরে। সেখানে কয়েক হাজার মানুষও যদি আকালের বাজারে ডিম খেতে পায় সেটিকে আমরা প্রশংসাই করব। 

তবে ধীরে ধীরে একেকটি কার্যকর পরিকল্পনা করে ডিমের যোগান বাড়াতেই হবে। যারা উৎপাদন করেন তাদের সমস্যা বুঝতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। এটাই দেশের মানুষের চাওয়া। কিভাবে হবে সেটি সরকারের কাজ। সরকার সফল হলে মানুষ তাদের হাততালি দেবেই।  

যহোক, সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাই। রাজধানীর বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর লক্ষ্যে নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে ডিম উৎপাদক বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবে। এর মধ্যে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। ফলে পাইকারি বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করবেন।

শুনতে বেশ লাগছে, কিন্তু এটি কার্যকর কতটা হবে সেটি আগামী ৪৮ ঘণ্টাতেই বোঝা যাবে। ৪৮ ঘণ্টা মানে দুটি দিন। একদিন নাহয় আমরা খাদ্যতালিকা থেকে ডিমকে বাদ দিই, বিকল্প খুঁজি। সরকার আর ডিমের কারবারিদের পাশাপাশি আমরাও না হয় একটুখানি ভূমিকা রাখি। 

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
 

 

শহিদ

×