ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয়

সাইফুজ্জামান

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১০ অক্টোবর ২০২৪

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সব্যসাচী লেখক। গদ্য, গল্প, উপন্যাস ও কবিতার অসাধারণ সৃষ্টি তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসে ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনাবর্তকে তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে উপস্থাপিত করেছেন। বাঙালীর সংগ্রাম, শৌর্য, বীর্য, আত্মত্যাগ, দিনযাপন, প্রেম, বিরহ সমাজ রূপান্তরের বাস্তব কাহিনী বিস্তৃতভাবে বিবৃত হয়েছে তাঁর গল্প উপন্যাসে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। 
সুনীল ছন্দ ও ছন্দহীন কবিতার রচয়িতা হিসেবে সমানভাবে জনপ্রিয়। ভ্রমণ বিলাসী কবি স্বদেশ থেকে বিশ্ব ব্রক্ষ্মা- পর্যন্ত সঙ্গী থেকেছেন স্বপ্ন, দুরন্ত প্রেমময় স্বাধীনসত্তার সঙ্গে। ‘একা ও কয়েকজন’ প্রথম কাব্যগ্রন্থে তাঁর একাকিত্বের যন্ত্রণা, অভিমান, অতলস্পর্শী আকাক্সক্ষার কাছে সমর্পিত হয়েছিলো। স্বপ্নতাড়িত সুনীল প্রকৃতি, নারী ও বেদনা বিধুর সত্তায় গ্রথিত হয়ে যে কবিতা রচনা করেছেন, তা পাঠকের চেতনাকে ক্রমশ সম্মোহিত করে।

ক্লেদাক্ত জীবনকে আগ্রাহ্য করে তিনি ক্রমাগত স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের কাছে ফিরে গেছেন পরম মমতায়। জীবনকে আবিষ্কার করা ছিলো তাঁর প্রধান কাজ। হৃদয়স্পর্শী কবিতার মাধ্যমে সুনীল নতুনভাবে উদ্ভাসিত হন প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। এইসব কবিতা কালের প্রবাহের সঙ্গে দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।   
‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় আমাদের শৈশব, কৈশোরের দেখা চেনা মুখগুলো অতীত-বর্তমানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। অভিমান, অন্তর্গত বেদনা ও হাহাকার ছাপিয়ে যায় অন্তরঙ্গময় সময়ের সঙ্গে জীবনের কঠিন পরাবাস্তবতার। মানুষের জীবনে স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা প্রকট। মানুষ তবু বাঁচে। বাঁচতে হয় বলেই বাঁচে। অতীতের সুখস্মৃতি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভাবনায় তিনি রক্তাক্ত হন না মোটেও। না পাওয়াগুলো পাওয়া হয় না কখনো। তবু তিনি জগৎ সংসারের প্রতি আস্থাশীল। সুনীলের মানস প্রতিমা ‘নীরা’। ‘নীরা’ তাঁর সর্বাঙ্গিনী, প্রণয়নী, সহযাত্রী কিংবা বেঁচে থাকার প্রেরণা।

নীরা সুখে থাকলে কোলকাতায় আনন্দ বন্যা বয়ে যায়। ট্রাফিকের সিল খোলে/ সাইকেলের সঙ্গে টেম্পো, মোটরের সঙ্গে রিকশা মিলে মিশে বাড়ি ফেরে যে যার রাস্তায়/ সিগারেট ঠোঁটে চেপে কেউ কেউ বলে ওঠে বেঁচে থাকা নেহাত মন্দ না। নীরাকে নিয়ে সুনীলের উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ কবিতা হলো: ‘হঠাৎ নীরার জন্য’,‘অপমান এবং নীরাকে উত্তর’। নীরার জন্য কবিতার  ভূমিকা, ‘নীরা ও জিরো আওয়ার’, ‘নীরার অসুখ’, ‘নীরার হাসি ও অশ্রু’, ‘নীরার পাশে তিনটি ছায়া’, ‘নীরার দুঃখকে ছোঁয়া’, ‘নীরার কাছে’, ‘নীরা তুমি’, ‘নীরা তুমি কালের মন্দিরে’ এবং সেই মুহূর্তে নীরা।

সুনীলের অসংখ্য প্রেমের কবিতায় ‘নীরা’ নামক এই নারী বারবার ফিরে এসেছে। তাঁর এই পোড় খাওয়া জীবনের সঙ্গে নীরার সত্তা যেনো একীভূত হয়ে মিশে গেছে। নীরার জন্য কবির প্রচুর লেখালেখি তাঁকে আরো কাব্য জগতের উঁচু পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সুনীলের পক্ষে তাই বলা সম্ভব ‘যেই দরোজা খুলে আমি জন্তু থেকে মানুষ হলাম/ শরীর ভরে ঘূর্ণি খেলাম/ লম্বা একটি হলুদ রঙের আনন্দ মনে পড়ে না, মধ্যরাতে দৈত্য সাজে দরজা ভেঙ্গে কে এসেছিলো? যেই দরোজা খুলে আমি জন্তু থেকে মানুষ হলাম।’    
সুনীলের এইসব সাদামাটা কবিতা শব্দ ও উপমার অলংকারে গাথা। মন ছুঁয়ে যায় পাঠকের। পাঠক সম্মোহিত হন এসব কবিতা পড়ে। গল্প উপন্যাসের মাধ্যমে তারা জীবনের গভীরে অনুপ্রবেশ করে ফেলেন অনায়াসেই। মনে হয় সাধারণ বাঙ্গালি প্রেমিক, নি¤œ মধ্যবিত্ত জীবন সব মিলিয়ে তাঁর ভাবনাকে সহজে পাঠকের হৃদয়ে মিশিয়ে দিতে পারঙ্গম তিনি। প্রেম, বিরহ, অভিমান, দ্রোহ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তার কবিতায়।

মায়াবী আঙ্গুলে লাবণ্য তুলে এনে পদ্ম ফুটিয়ে তোলেন সুনীল। লোরকা নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় একটি কবিতা ‘কবির মৃত্যু’ কবিতাটি লোরকা স্মরণে রচনা করেছেন। কবি সত্যের ¯্রষ্টা। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র কিংবা দুঃশাসন তাঁর ওপর দুরারোপ করলেও তিনি কবির কবিতায় বেঁচে থাকবেন আজীবন। সপ্রতিভ, উজ্জ্বলতার কবিতা গণমানুষের বাণীতে আপ্লুত ও সংলগ্ন থাকে। উদ্ধৃত করা যেতে পারে কবিতা থেকে : 
দুজন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহি
কবিকে নিয়ে গেলো টানতে টানতে
কবি প্রশ্ন করলেন, ‘আমার হাতে শিকল বেঁধেছ কেনো?
সিপাহি দুজনের জিব কাটা।
খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হলো কবিকে

তিনি দেখতে লাগলেন
তার ডানহাতের আঙ্গুলগুলো
কনিষ্ঠায় একটি তিল, অনামিকা অলংকারহীন।
মধ্যমায় ঈষৎ টনটনে ব্যথা, তর্জনী সংকেতময়
বৃদ্ধাঙ্গুলি বীভৎস, বিকৃত
কবি সামান্য হাসলেন
সহ¯্রজন তার চিৎকারে সিপাহির কান
সেই মুহূর্তে বধির হয়ে গেলো।
কবি নিঃশব্দে হাসলেন
দ্বিতীয় গুলিতেই তার বুক ফুটো হয়ে গেলো
কবি তবু অপরাজিতের মতো হাসলেন হা হা শব্দে
তৃতীয় গুলি ভেদ করে গেলো তার কণ্ঠ
কবি শান্তভাবে বললেন
আমি মরবোনা।
কবি অমর। তাঁর মৃত্যু হয় না। কবি প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে, বক্তব্য ও উপমায় চিরঞ্জীব। তুচ্ছতাচ্ছিল্যে মৃত্যুকে অস্বীকার করে জীবনের জয়গানে মুখর কবিতা সমাজের পংকিলতা, ভ্রুকুটিকে অস্বীকার করে জ্বলজ্বলে বাতিঘর হয়ে যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ঢাকা বাংলা ভাষাভাষিদের প্রতিনিধিত্বশীল নগরীতে পরিণত হবে। ঢাকা ও কলকাতায় পাশ্চাত্য জীবনের প্রভাব পড়লেও ঢাকা বাংলা কবিতাচর্চার তীর্থভূমি যে হয়ে উঠেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কবিতা দেশকালের ঊর্ধ্বে। কবিতার গন্তব্য মহাকাল।  
শস্য-শ্যামল বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করে। প্রাণে জাগায় নতুন সঞ্চার। বন্যা, মহামারী, দুর্যোগ, দুর্বিপাকের মাঝে বাঙালিরা অক্লান্ত সংগ্রাম করে যায়। সুনীল সখেদে প্রিয়দর্শিনীকে বলেন : 
প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জানালায় বসে
গুজরাটের বন্যা দেখতে যেওনা
এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা
ক্রুদ্ধ জলের প্রবল তোলপাড়ে উপড়ে গেছে রেল লাইন
চৌচির হয়েছে ব্রিজ, মৃত পশুর পেটের কাছে ছন্নছাড়া বালক
তরঙ্গে ভেসে যায় বৃদ্ধের চশমা, বৃক্ষের শিখরে মানুষের আপৎকালীন বন্ধুত্ব
এইসব টুকরো দৃশ্য-এক ধরনের সত্য, আংশিক কিন্তু বড়ো তীব্র
বিপর্যয়ের সময় এইসব আংশিক সত্যই প্রধান হয়ে ওঠে
[ইন্ধিরা গান্ধীর প্রতি]
বহুমাত্রিক গদ্যের রচয়িতা সুনীল রিলকের সেই বিখ্যাত উক্তি ‘জীবনের অভিজ্ঞতার শ্রেষ্ঠ অংশই কবিতাকে ঋদ্ধ করেছে’। তাঁর পক্ষে সঙ্গত কারণে তাই বলা সম্ভব। শুধু কবিতার জন্যে এই জন্ম, শুধু কবিতার জন্যে কিছু খেলা/ শুধু কবিতার জন্য একা হিমসন্ধ্যে বেলা/ ভুবন পেরিয়ে আসা; শুধু কবিতার জন্যে আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়’ কবিতায় সুনীল এক জাদুকরী ভুবন তৈরি করেছেন।

শব্দ ব্যবহার, ছন্দ ও সুরের মোহময় আবেশ পাঠককে সহজেই মুগ্ধ করেছে। সম্মোহনী শক্তিতে কবিতা মানুষের মনোজাগতিক সত্তাকে স্পর্শ করেছে। সহজবোধ্য ভাষা ও শব্দের ব্যঞ্জনা এইসব কবিতায় প্রেমিক খুঁজে পায় তার না বলা কথকতার মাধ্যমে। লাবণ্যময় কবিতার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক নির্মাণ করে গেছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কবির উচ্চারণ : 
ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে, দেখা হবে চন্দনের বনে-
সুগন্ধের সঙ্গে পাবো দ্বিপ্রহরের বিজন ছায়ায়
আহা কী শীতল স্পর্শ হৃদয় ললাটে আহা চন্দন চন্দন
দৃষ্টিতে কী শান্তি দিলে, চন্দন চন্দন 
আমি বসে থাকবো দীর্ঘ নিরালায়।
প্রথম যৌবনে আমি অনেক ঘুরেছি অন্ধ শিমুলে জারুল
লক্ষ লক্ষ মহাদ্রুম, শিরা উপশিরা নিয়ে জীবনের কতো বিজ্ঞাপন
তবুও জীবন জ্বলে, সমস্থ অরণ্য দেশ জ্বলে ওঠে অশোক আগুনে
আমি চলে যাই দূরে, হরিণের ত্রস্ত পায়ে, বনে বনান্তরে অন্বেষণ 
[দেখা হবে, নির্বাচিত ২০০ কবিতা]
প্রেম, বিরহ, যৌন চেতনা, দ্রোহ আর যাপিত জীবন ঘিরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক কবিতা বর্ণিল বিভায় উদ্ভাসিত। মৃত্যু উপলব্ধি আর বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে স্পষ্টভাবে কবি তাঁর শব্দমালা উচ্চারণ করেছেন পাঠকের উদ্দেশে। তাঁর কবিতায় গাঢ় বিষণœতা, মর্মবোধ আর সুন্দরের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। মৃত্যু তাঁকে বন্ধু, নারী, পাখির মতো আকর্ষিত করে। বিচলিত কবি অনুতপ্ত ও উদাসীন হয়ে মৃত্যুকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন।

মৃত্যুর হাতছানি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি কখনো। আনন্দের কোলাহলে, জীবনের জয়গানে মৃত্যুকে স্বাভাবিক দুর্ঘটনার মতোই তিনি দেখতে চেয়েছেন। নিয়তি ও দৈব যমজ শব্দ দুটি অগ্রসর হয়েছে সম্মুখে। জীবন ও মৃত্যুর সহযাত্রীকে খুব সহজেই আলিঙ্গনে পারঙ্গম সুনীল। ‘মৃত্যু’ নামক বিষয়টি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যেও তিনি এড়িয়ে যেতে পারেননি। সবাইকে একদিন মৃত্যু গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু সত্য ও সুন্দরের মতো দৃশ্যমান :  
মৃত্যু মুখে নিয়ে এসো, শালিকেরা ফেলে যায়
খড়কুটো চৈত্রের বাগানে
দেখা হবে সন্ধ্যেবেলা, মৃত্যু মুখে নিয়ে এসো
সন্নাসীর ঘুমের মতন প্রকৃত স্তব্ধতা
এরকমই কথা ছিলো, তোমার আমার মৃত্যু
কাছাকাছি এসে ভাব করে নেবে।
সুনীলের ‘মরণ’কে দেখা জীবনকে বারবার ফিরে দেখার নামান্তর মাত্র। কবি চেতনায় মৃত্যুর অনিবার্য বিষয় এসেছে তাঁর লেখায় অসংখ্যবার। কাজ, আড্ডাবাজিতা, প্রেম, প্রণয়, বেঁচে থাকার তৃষ্ণার মধ্যেও অমর মরণ হানা দেয়। কীভাবে তাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? অসম্ভব প্রাণস্পন্দন আর জীবনের ঘূর্ণন তাকে সচকিত করে রেখেছে যে সময়টুকুু তার জীবন আছে তার মধ্যে। শব্দ নির্বাচন, বক্তব্য উপস্থাপনা ও কবিতাকে হৃদয়গ্রাহ্য করে রাখার সফল রূপকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ব্যস্ততা, কর্ম মুখরতার মাঝেও ‘মৃত্যু’র হাতছানি তাঁকে কাতর করতে পারেনি।   মৃত্যু তাঁর চোখে বাস্তবতারই আরেক নাম, আরেক অপ্রিয় সঙ্গী। সুনীল কতো সহজেই ‘মৃত্যু’র বিষয়টি কবিতার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেন তা আমরা দেখতে পাই :

১.    একটুখানি মৃত্যু দেবে, কিছুক্ষণের ভীষণ রকম মরণ
স্কুল পালানো ছেলের মতন
আর সকলে বেঁচে বর্তে ধুলোর মর্তে খেলা করুক
আমি চাই অবগাহন এক নিমিষে হারিয়ে যাওয়া
চাইনা প্রেম ¯েœহ মমতা সার্থকতা এক জীবনে শুধু মৃত্যু, অমরভাবে মরণ
২.আমিতো মৃত্যু’র কাছে যাইনি, একবারও 
তবুও সে যেনো ছদ্মবেশে মাঝে মাঝে দেখা দেয়
যেমন নদীর পাশে দেখি এক চাঁদ খসা নারী
তার চুল মেলে আছে
ভয় হয় বুক কাঁপে, সব কিছু ছেড়ে যেতে হবে।
যখন সুন্দর কিছু দেখি যেমন ভোরের বৃষ্টি
অথবা অলিন্দে মৃদু পাপ
অথবা ¯েœহের মতো শব্দহীন ফুল ফুটে থাকে
দেখি মৃত্যু, দেখি সেই গোপন প্রণয়ী
ভয় হয়, বুক কাঁপে, সবকিছু দিয়ে যেতে হবে।
আশির দশক থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গতানুগতিক বিষয় ও ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধারার কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। এসময় তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে সমষ্টির বিষয় হিসেবে তিনি একীভূত করেছেন কবিতায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠান ও প্রথাবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের সা¤্রাজ্যে অতুলনীয় স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। ব্যস্ততার পাশাপাশি সুনীলের কবিতায় মান-অভিমান, আত্মকথন শব্দতরঙ্গে দোলায়িত ভাবনার স্ফুরণ ও অন্তরঙ্গ ধ্বনি হয়ে উঠেছে। জনপ্রিয়তা কবিকে সমাজ ও মানুষ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি সুনীল তা সুশীল পাঠককে বারেবারে দেখিয়ে দিয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় মানুষ, সমাজ ও মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম মুখ্য উপাদান হয়ে উঠেছে।

এইসব কবিতায় সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের নিষ্ঠুরতা, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির দ্বন্দ্বের মধ্যেও অস্তিত্বচেতনা ক্রিয়াশীল থেকেছে। সুনীলের জীবনবন্ধী কবিতা আমাদের স্বপ্ন, জাগরণ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মগ্ন থাকার আকাক্সক্ষাকেই জাগ্রত করে। জীবনের নেতিবাচকতা পরিহার করে প্রণয় ও যূথবদ্ধ সংসারের কাছে আমরা কীভাবে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত থাকতে পারি, তা সুনীল পাঠে উপলব্ধি করা যায়। সুনীল বাংলা কবিতায় প্রাণবন্ত, প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয়।

×