.
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা
খোকার সাধ
আমি হবো সকাল বেলার পাখি-
সবার আগে কুসম-বাগে উঠবো আমি ডাকি।
সূয্যি মামা জাগার আগে উঠবো আমি জেগে,
‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে।
বলবো আমি, ‘আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো,
হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে নাকো!
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’
ঊষা দিদির ওঠার আগে উঠবো পাহাড়-চূড়ে,
দেখবো নিচে ঘুমায় শহর শীতের কাঁথা মুড়ে,
ঘুমায় সাগর বালুচরে নদীর মোহনায়,
বলবো আমি, ‘ভোর হলো যে, সাগর ছুটে আয়!’
ঝর্ণা-মাসি বলবে হাসি, ‘খোকন এলি নাকি?’
বলবো আমি, ‘নইকো খোকন, ঘুম-জাগানো পাখি!’
ফুলের বনে ফুল ফোটাবো, অন্ধকারে আলো,
সূয্যিমামা বলবে উঠে, ‘খোকন, ছিলে ভালো?’
বলবো, ‘মামা, কথা কওয়ার নাইকো সময় আর,
তোমার আলোর রথ চালিয়ে ভাঙো ঘুমের দ্বার।’
রবির আগে চলবো আমি ঘুম-ভাঙা গান গেয়ে,
জাগবে সাগর, পাহাড় নদী, ঘুমের ছেলে-মেয়ে!
.
খুশিগুলো আমার হবে
শাকিব হুসাইন
আমি এখন অনেক ছোট
ঘুমাই বাবার বুকে
কত্ত রকম গল্প শুনি
আদর মাখা মুখে।
আমায় নিয়ে ঘোড়া সেজে
টগবগিয়ে হাঁটে
এমনি করেই বাবার সাথে
দিনগুলো রোজ কাটে।
যেদিন আমি প্রথম হাঁটি
বাবার খুশি সে কী!
আমার খোকা হেঁটেছে আজ
একটুও নয় মেকি।
এখন আমি হেঁটে বেড়াই
বাবার আঙুল ধরে
কখনো বা ঘুরে বেড়াই
নরম কাঁধে চড়ে।
যেদিন আমি অসুস্থ হই
বাবার চোখে পানি
আমার জন্য কাঁদছে বাবা
আমি কি আর জানি?
সারাটা দিন ছোটাছুটি
রাতটা যখন নামে
শীতল রাতেও আমার জন্য
বাবা শুধু ঘামে।
একদিন আমি বড় হবো
ঠিক তো বাবার মতো
বাবা হবে আমার মতো
বয়স যাচ্ছে যতো।
রোদ পোড়ানো বাবার মাথা
আমার বুকে রবে
পৃথিবীর সব খুশিগুলো
সেদিন আমার হবে।
.
বাঘটা
আলমগীর কবির
বাঘটা ছিল সবুজ বনের রাজা
নেই হাসি, কে দিলো তাকে সাজা?
বাঘটা ভীষণ দুষ্টু ছিল, জানো?
কেড়ে নিতো হরিণ-ছানার প্রাণও!
বাঘটা ছিল খাতার পাতায় আঁকা
বন্ধ এখন হালুম হালুম ডাকা!
হরিণ-ছানা বনে এখন স্বাধীন
ইচ্ছে মত নাচতে পারে তা-ধিন।
বাঘটা খোকার খাতায় ছিল বন্দি
খোকার সাথে করতে চাইলো সন্ধি!
.
বায়নাবাজ খোকন
রতন ইসলাম
খোকন খোকন চাঁদ-মামা,
বায়না পূরণ করো নাহয়
ধুলোর মাঝেই দেয় হামা।
বায়নাগুলো কী কী?
মাটির পুতুল হাতি-ঘোড়া
বেলুন ঝিকিমিকি।
ভাবছ বাঁশি ঢোল না?
ঢোল-বাঁশি ও রঙিন গাড়ি
চাই দোলানো দোলনা।
একলা খেলে? তা না-
সঙ্গে খেলে বাড়ির বেড়াল
মুরগী-হাঁসের ছানা।
না পুরোলে বায়না,
দুধ মাখা ভাত কাকেই খায়
খোকন কিন্তু খায় না।