ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বঙ্গবন্ধুর ভাষাচিন্তা বিশ্লেষণ

ড. শ্যামল কান্তি দত্ত

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৫ জুলাই ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর ভাষাচিন্তা বিশ্লেষণ

বঙ্গবন্ধুর ভাষাচিন্তা বিশ্লেষণ

সুকুমার সেন বলেন, ভাষা নিয়ে দেশ। যে দেশের ভাষা বাংলা তা-ই বাংলাদেশ। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাতেও ভাষা নিয়ে জাতি ও জাতীয়তা। এই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা থেকে গড়ে ওঠে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এমন আদর্শ নিয়েই। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সুতরাং, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা। তবে তারও আগে পাওয়া বঙ্গবন্ধু উপাধি বিশ্লেষণ করলে পাই ‘বঙ্গ-এর বন্ধু’।

এখানে বঙ্গ বলতে বঙ্গভাষা ও বঙ্গভূমি দুটোকেই বোঝায়। তবু রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে যত আলোচনা বা গবেষণা পাওয়া যায়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা নিয়ে তার শতকরা একভাগও নেই বললে চলে। এই ব্যতিক্রমী বিষয়ে গবেষণায়-আলোচনায় অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ড. স্বরোচিষ সরকার। বাংলা একাডেমির সাবেক কর্মকর্তা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজের স্বনামধন্য অধ্যাপক রচিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা (২০২২) একারণেই ব্যতিক্রমী এবং গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা গ্রন্থ। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন ও কর্মে কতটা বাংলা ভাষার বন্ধু হয়ে উঠেছিলেনÑতা অনুসন্ধানই এ বইয়ের মূল বিবেচ্য। বাংলাদেশে এবং বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান মূল্যায়ন করতে গিয়ে গবেষক চারটি অধ্যায়ে বিষয়গুলোকে শ্রেণিকরণ করে আলোচনা করেছেন এবং এর যৌক্তিকতা বা প্রমাণস্বরূপ সংযুক্ত করেছেন চারটি পরিশিষ্ট, তিনটি মানচিত্র এবং সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি।

বইটির প্রকাশক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘প্রসঙ্গ-কথা’ পাঠে জানা যায়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ গ্রন্থমালা’ প্রকল্পের অন্বিষ্ট: বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ বিষয়ে নিবিড় গবেষণা। সূচিপত্র অনুযায়ী অগ্রসর হলে শুরুতেই ‘ভূমিকা’। এখানে প্রাবন্ধিক জানান যে, বাংলা ভাষার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নিবিড় সম্পর্ক উপলব্ধির স্বার্থে এ বইয়ে পর্যায়ক্রমে নজর দেওয়া হয়েছে অধ্যায়ভিত্তিক বিচিত্র বিষয়ে। 
প্রথম অধ্যায়: ‘বাংলা বাঙালি বঙ্গবন্ধু’ শিরোনাম দিয়ে লেখা প্রবন্ধটি আবার ‘ভাষার নাম বাংলা’, ‘বাঙালি পরিচয়ের সূচনাবিন্দু’, ‘বাংলাভাষী অঞ্চল গঠন’ ও ‘নতুন বাংলা নতুন পরিচয়’ এই কয়টি উপশিরোনামে বিভক্ত। এখানে গবেষক যথার্থই অনুভব করেন যে, বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সেটাই বাঙালির আত্মপরিচয়Ñ এক কথায় সেটাই বাঙালিত্ব। তিনি এই আত্মপরিচয়ের গন্তব্যবিন্দু মনে করেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এবং এর সূচনাবিন্দু হিসেবে গণ্য করেন ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ (রাজত্ব: ১৩৫২Ñ১৩৫৮) বঙ্গের রাজধানী সোনারগাঁ জয় করে নিজের পরিচয় ‘শাহ-ই-বাঙ্গালিয়ান’ বা ‘বাংলার রাজা’ ঘোষণায়।

তবে সূচনাবিন্দু সম্পর্কে ভিন্নমত ব্যক্ত করা যায়, কেননা, চর্যাপদের কবি যখন আরও আগে ‘ভুসুকু বঙ্গালি ভইলি’ বলে নিজের আত্মপরিচয় দেন। যেখানে লেখকও স্বীকার করেন যে, ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দের পূর্ববর্তী বঙ্গও এই আলোচনায় প্রারম্ভিক গুরুত্বের দাবিদার। অন্তত বাংলাদেশের বঙ্গ নামটি যে প্রাচীন ‘বঙ্গ’ শব্দের রূপান্তর, তা অবশ্যস্বীকার্য (পৃ. ৩০)।

এখানে পাঠক অবগত হবেন যে, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী মাতৃভাষী জনসংখ্যার হিসেবে বাংলা ভারতের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা। তবে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় যে বাংলা ভাষাকে ভারতের জাতীয় ভাষা করতে সম্মত হননি, সে প্রসঙ্গে প্রবেশ করেননি অভিধান বিশেষজ্ঞ প-িত স্বরোচিষ সরকার। 
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’। আটত্রিশ পৃষ্ঠা ব্যাপ্ত এই প্রবন্ধটিও তিনটি উপশিরোনামে বিভক্ত। প্রবন্ধটির ভূমিকাতেই প্রাবন্ধিক স্মরণ করেন যে, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শরৎচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, শুধু সেই সম্ভাবনাতেই বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ সংকটমুক্ত ছিল।

বাঙালির দুর্ভাগ্য, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির ফলে স্বাধীন ভারতে বাঙালি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠেীতে পরিণত হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দ্বিজাতিতাত্ত্বিক রাজনীতিতে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমলযোগ্য ছিল না। ‘সাতচল্লিশ-পূর্ব ভাষা আন্দোলন’ অংশে পাঠক জানতে পাবেন যে, ‘লাহোর প্রস্তাব’ (১৯৪০) বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক পাঠ করলেও, প্রস্তাবটি প্রথমে ইংরেজিতে রচিত হয়। পরে এর উর্দু তর্জমা হলেও বাংলা ভাষায় এই প্রস্তাবের কোনো তর্জমা ছিল না।

কেননা, তৎকালীন বাংলার মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ: খাজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ পারিবারিকভাবে উর্দুভাষী ছিলেন। ‘আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ উপশিরোনামের আলোচনায় উঠে আসে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিশ’-এর জন্ম হয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেমের সাংগঠনিক সক্রিয়তায়। আর ৬ সেপ্টেম্বর হয় গণতান্ত্রিক যুবলীগ সম্মেলন, যে সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়।

পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব পাঠ করতে গিয়ে বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হউক’ (পৃ. ৪৬)। এভাবে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে তথ্যসূত্রসমেত ঐ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে এ আলোচনায়।

বাদ যায়নি- করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮) কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬Ñ১৯৭১) উত্থাপিত দাবি: উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকার করা হোকÑ প্রসঙ্গও। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) গ্রন্থের উদ্ধৃতিও প্রমাণক হিসেবে এসেছে; এসেছে ১৫ মার্চ ১৯৪৮-এ পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদিত চুক্তিপত্রও।

‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ উপশিরোনামের আলোচনায় আসে: ১১ মার্চ ১৯৪৮ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পর্যন্ত মোট ১৪৪৭ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মাত্র ২৮৩ দিন মুক্ত রাজনীতির সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখনই মুক্তি পেয়েছেন, তখনই তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও অসাধারণ বাগ্মিতা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে তীব্র জনমত গঠন করেছেন। এসব আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়, ভাষা আন্দোলনের মতো জাতীয় গণআন্দোলনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয়তা সচল থাকলেও সমকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও সেই জাতীয়তাবাদী দলের নেতা শেখ মুজিবের অবদান অস্বীকার অসম্ভব।
‘পাকিস্তানের ভাষা-রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের তৃতীয় অধ্যায়টিও ‘একুশ পরবর্তী ভাষা-রাজনীতি’, ‘যুক্তফ্রন্টে বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ ও বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘পাকিস্তানের গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গ ও বঙ্গবন্ধু’ এই তিনটি উপশিরোনামে বিশ্লেষিত। এখানে পাঠক দেখবেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২তে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী নূরুল আলম নিজেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করেন।

কিন্তু খাজা নাজিুমুদ্দিনের ১৫ মার্চ ১৯৪৮-এর চুক্তি স্বাক্ষর এবং ২৭ জানুয়ারি ১৯৫২তে পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার ইতিহাস বাঙালির মনে সন্দেহ জাগায়। লেখকের ভাষায়: ‘এই সন্দেহ থেকে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সংবিধান গৃহীত হবার আগ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এই কালপর্বকে বলা যেতে পারে ভাষা আন্দোলনের অনুবর্তন পর্ব’ (পৃ.৭১)।

এই পর্বে পূর্ব বাংলার প্রধান রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান-আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম এখানে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। দেখানো হয়েছে, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে (১৯৫৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ কীভাবে বিরোধী দলে পরিণত হয়। সর্বোপরি স্বরোচিষ সরকার যথার্থই বলেন, ‘বাংলা ভাষা, বাংলার সংস্কৃতি এবং বাংলা নামের ভূখ-Ñ তিনটিকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির আত্মপরিচয়ের মূল উপাদান হিসেবে বিবেচনা করতেন’ (পৃ.৮৩)।

এই ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূলমন্ত্র। তাইত এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা : ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু’ সন্নিবেশিত হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে। এই অধ্যায়ের চারটি উপশিরোনাম হচ্ছে: ‘চীন ভ্রমণে বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা’, ‘পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও বঙ্গবন্ধু’, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা’ এবং ‘জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলায় বক্তৃতা’।

স্বরোচিষ সরকার স্মরণ করিয়ে দেন যে, যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা বাংলাতেই প্রণীত ও প্রচারিত হয় এবং যুক্তফ্রন্টের পরবর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পাঠ্যপুস্তক নামের একটি বিভাগ। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়ে জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অমর করতে সংগ্রাম করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পঁচাত্তরে তাঁর ট্র্যাজিক পরিণতির পর বাংলাদেশে বাংলা ভাষা প্রচলনের আদেশ জারি হয় ইংরেজিতে। বিতর্কিত করা হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে। স্বরোচিষ সরকার সে প্রসঙ্গের গভীরে প্রবেশ না করলেও আভাসে আলোকপাত করেছেন।  
পঞ্চম অধ্যায় : ‘উপসংহার’-এ বঙ্গবন্ধুর ভাষাবৈশিষ্ট্যও আলোচনায় এসেছে। গবেষকের মতে, বঙ্গবন্ধুর চলিত ভাষার মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু  আঞ্চলিক শব্দরূপ ঢুকে যায়। মজার বিষয় হলো, শব্দের এই আঞ্চলিক রূপগুলো আবার ভাষার সাধুরীতিতে স্বীকৃত। তবে এই আঞ্চলিক রূপ সম্পর্কে সকলে একমত নয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষাশৈলী (২০২২) গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষাবৈশিষ্ট্যকে লোকভাষা বলা হয়েছে। এ নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণার অবকাশ আছে বৈকি।

তবে চারটি পরিশিষ্ট সন্নিবেশে বইটির প্রামাণ্যতা বহুগুণে বেড়েছে। পরিশিষ্ট ১ : পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের বক্তৃতায় বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ। পরিশিষ্ট ২ : বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ। পরিশিষ্ট ৩ : ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর লিখিত ভাষণ। এবং পরিশিষ্ট ৪ : জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিও থেকে অনুলিখিত পাঠ।  পরিশিষ্টগুলো কেবল সংকলন নয়, একাধিক উৎস থেকে পাঠ যাচাই করে নেওয়া হয়েছে।

সঙ্গে গ্রন্থপঞ্জি সংযুক্ত থাকায় গবেষকগণের কাছে এটি একটি আকর গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করবে। নির্ঘণ্ট না থাকার আক্ষেপ আছে, তবে লেখকের ভাষার সাবলীলতা গুণে সাধারণ উৎসুক পাঠকের কাছেও বইটি আকর্ষণীয় মনে হবে। কেননা, বাংলা ভাষার প্রতি বঙ্গবন্ধু কতটা বন্ধুসুলভ ছিলেন, সেটা দেখাই এই বইয়ের লক্ষ্য। ফলে, বিশ্লেষণ-বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে তা পাঠকই বলতে পারবেন। 
বইটি সাধারণ বাঙালির সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে এবং এর পাঠককে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের মূল চালিকাশক্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ কীভাবে বাংলা ভাষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, সেই জাতীতাবাদ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু কীভাবে বাংলা ভাষা বিকাশের পরিবেশ প্রণয়ন করেছেন, সর্বোপরি বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কীভাবে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, এই বই পাঠে পাঠক তা অনুভব করবেন। এতে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন স্বতঃস্ফূর্ত করতে স্বরোচিষ সরকারের অবদান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

×