ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

ইঁদুর দৌড়ের গল্প

চঞ্চল শাহরিয়ার

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২০ জুন ২০২৪

ইঁদুর দৌড়ের গল্প

হোসেনউদ্দীন হোসেন

বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, গবেষক এবং ইতিহাসবিদ হোসেনউদ্দীন হোসেন। জন্ম ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে। মৃত্যু ২০ মে ২০২৪। 
হোসেনউদ্দীন হোসেন তাঁর সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২৩। এর মধ্যে উপন্যাস ‘প্লাবন এবং একজন নুহ’ ইংরেজিতে ‘ঋষড়ড়ফ ধহফ ধ ঘড়ড়য’ নামে অনূদিত হয়ে ইংল্যান্ডের মিনার্ভা প্রকাশনার নয়াদিল্লি শাখা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আর একটি উপন্যাস ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’  ‘গরপব ধহফ গবহ’ নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এই উপন্যাসটি পশ্চিম বাংলার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম, এ শ্রেণির পাঠ্য।
আমি এখন হোসেনউদ্দীন হোসেনের ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা বলবো। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঘুঘুদহ গ্রামে অসহায় গরিব মানুষের জন্য সরকার যে রিলিফের চাল ডাল তেল পাঠিয়েছে তা রীতিমতো গায়েব করে দেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রহমান। 
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অসহায় গ্রামের মানুষেরা সরখেলের কাছে যায়।  সরখেল নিজেও অসহায় মানুষ। কিন্তু ঘুঘুদহের মানুষ সরখেলকে ভীষণ বিশ্বাস করে। কারণ, সরখেল মুক্তিযোদ্ধা। দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধ করেছে। সরখেল মানুষের বিপদের বন্ধু। ধান্ধাবাজ চেয়ারম্যান বজলে রহমান আর এলাকার সংসদ আকমল ইলাহীর কথার প্রতিবাদ একমাত্র সরখেল ভাই-ই করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেড়ে ওঠা সরখেল গরিবের হক ফিরিয়ে দেবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর সংসদের কাছে যায়। এলাকার গণ্যমান্য মানুষের কাছে ছুটে ছুটে যায়। কিন্তু গ্রাম্য রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে সরখেল প্রায় ধরাশায়ী। তবু সে হাল ছাড়েনি। ওর সহোযোগীর বউয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করার মিথ্যে অপবাদ দেয় চেয়ারম্যান আর পুলিশের লোকজন। 
সরখেল ঘুঘুদহ গ্রামের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে গিয়ে নিজে জেল খেটেছে। ঘুঘুদহের নিরীহ কৃষক, খেটেখাওয়া মানুষেরা চাঁদা তুলে সরখেলকে জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে।
জয়গুন, নাদেরার প্রতি চেয়ারম্যানের চ্যালা কটা চান্দালীর কুপ্রস্তাব এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ের জমিজিরেত হারানো অসহায় হিন্দু-মুসলমানদের হাহাকার দেখে সরখেল শুধুই ভাবে চারিদিকে শুধু ইঁদুরের গর্ত। এই গর্ত থেকে বের হতে হলে জনগণের সাথে নিয়েই থাকতে হবে রাস্তায়। 
হোসেনউদ্দীন হোসেন নিভৃতচারী লেখক। স্বভাবেও মৃদুভাষী। কিন্তু তাঁর ভেতরে যে আগুন আছে তা টের পাওয়া যায় ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ উপন্যাস পড়লে। হোসেনউদ্দীন হোসেন আমার খুবই প্রিয় লেখক। দীর্ঘদিন তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী হোসেন ভাইয়ের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা।

×