ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কাগজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি

এবার বইমেলায় বই প্রকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রকাশকরা

তাসমিম সুলতানা

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২২ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১২:২৩, ২২ নভেম্বর ২০২২

এবার বইমেলায় বই প্রকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রকাশকরা

বইমেলা

প্রাণের একুশে বইমেলার বাকি আর আড়াই মাস। মেলা উপলক্ষে এখন ব্যস্ত সময় পার করার কথা প্রকাশকদের। অথচ তারা এখন বই প্রকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পার করছেন সময়। কাগজের দাম আকাশচুম্বী। দাম বৃদ্ধিতে তৈরি হয়েছে কাগজের সংকট। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্পের প্রাণকেন্দ্র বাংলা বাজার। আর বেচাকেনা কম হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কাগজ ব্যবসায়ীদেরও।

ডলার সংকটের কারণে কাচামাল ও দেশের বাইরে থেকে কাগজ আমদানী বাধাগ্রস্থ হওয়ায় অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে—দাবি আমদানিকারক ও দেশী উৎপাদকদের। সব মিলিয়ে বড় ধরনের শঙ্কার মুখে আসছে ফেব্রুয়ারির বইমেলা।

কাগজের বাজার ঘুরে জানা গেছে, কয়েকমাস ধরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাগজের দাম। দেশের বৃহত্তম কাগজের বাজার রাজধানীর নয়াবাজারের ব্যবসায়ীরা গেল পাঁচ মাসে টনপ্রতি ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা বাড়তি দরে কাগজ কিনছেন। হঠাৎ করে এমন বাড়তি দরে কাগজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

কাগজের বাড়তি দামের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুদ্রণ শিল্পে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য খাতের মতো ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে এই খাতেও। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বেড়ে গেলে বেড়ে যায় খুচরা বাজার।

এক কাগজ  ব্যবসায়ী বলেন, ‘রিম প্রতি কাগজে গুনতে হচ্ছে হাজার বারোশ টাকা।’ অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বারোশ টাকার কাগজ দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ আরেক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘এ রকম দু-চার মাস থাকলে কাগজের সব ব্যবসায়ীরাই দেউলিয়া হয়ে যাবে।’

সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় বই ব্যবসায়ীরা। কেননা, মাস দুয়েকের মাথায় বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যে কারণে এখন থেকেই প্রকাশকদের ব্যস্ত সময় পার করার কথা। অথচ লেখকদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি নিয়েও কাজ শুরু করতে পারছেন না। এমন বাস্তবতায় নতুন বই প্রকাশ না করার ঘোষণা দিয়েছে কোনো কোনো ব্যবসাসফল প্রকাশনীও।

সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বইমেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ব, করোনার কারণে সারাবিশ্বেই  দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়েছে। আর এই প্রভাব প্রকাশনা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পড়েছে। বই প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই তবে বইয়ের মূল্য গতবারের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, কাগজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বই প্রকাশ নিয়ে দোলাচলে রয়েছি। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রভাব কাগজ এবং প্রকাশনা শিল্পের ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, এবার বই প্রকাশ করলেও গতবারের তুলনায় অর্ধেক প্রকাশ হবে। আর বইয়ের দাম বাড়বে। বইয়ের দাম বাড়ালে পাঠক বই কিনবে কী না সেটা নিয়েও চিন্তিত মনোভাব প্রকাশ করেন তিনি। কাগজের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এই বিষয়টি মনিটরিং করা হয় তা নিয়ে প্রকাশকরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন বলে তিনি জানান।

দি রয়েল পাবলিশার্স এর কর্ণধার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের পক্ষে বই প্রকাশ দুরুহ হয়ে পড়েছে।’ বই প্রকাশ নিয়ে আমরা এখনো চিন্তাভাবনা করছি। কিভাবে কী করা যায়। চেষ্টা থাকবে বই প্রকাশের।  

রৌদ্রছায়া প্রকাশের প্রকাশক আহমেদ রউফ বলেন, ‘গত দুই বছর করোনায় এমনিতেই বই প্রকাশ কমে গেছে। এর মধ্যে এবার কাগজের দাম যে পরিমানে বেড়েছে, তাতে বইয়ে খুব বেশি ইনভেস্ট করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও চেষ্টা চলছে ভালো বই করার। যদিও  ‌এতো দাম দিয়ে মানুষ কতো বই কিনতে আগ্রহী হবে, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।’

পার্ল পাবলিকেশনের প্রকাশক হাসান জায়েদী বলেন, ‘ঊধ্বগতির কারণে পাঠক বই কিনতে কতোটুকু চাইবে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’

সব মিলিয়ে বলা যায়, এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বেশিরভাগ প্রকাশক এবারের বইমেলায় বই বের করতে পারবেন কী না, পারলেও তা কতটা।
 

টিএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×