বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান লেখক ড. হায়াৎ মামুদ। তার প্রকৃত নাম মোঃ মুনিরুজ্জামান। ১৯৩৯ সালের ২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার মৌড়া গ্রামে তার জন্ম। পিতামাতার প্রথম সন্তান ড. হায়াৎ মামুদের প্রাথমিক শিক্ষা কেটেছে খাজুরদহ বি. বকাউল্লাহ্ প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুগলী, পশ্চিমবঙ্গে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৫৬ সালে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন নটর ডেম কলেজ ও কায়েদে আযম কলেজ, ১৯৫৮ সালে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৬৪ সালে। পি. এইচ. ডি. করেন তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে ১৯৮৪ সালে। গবেষণা-অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল গেরাসিম স্তেপানোভিচ্ লিয়েবেদেফ্। বাংলাদেশের গদ্য সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী লেখক ড. হায়াৎ মামুদ পাঠক সমাজের মনে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। তিনি একাধারে একজন আধুনিক কবি, কথাসাহিত্যিক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক। গবেষক ও প্রবন্ধকার হিসেবেও তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে লিখেছেন অজস্র কবিতা, প্রবন্ধ, জীবনী গ্রন্থ। অনুবাদ করেছেন অসংখ্য বই। সাহিত্যে বহুমুখী সৃষ্টিকর্মের জন্য তিনি পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), একুশে পদক (২০১৬), রবীন্দ্র পুরস্কার (২০১৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। সদা হাস্যোজ্জ্বল ড. হায়াৎ মামুদ ব্যক্তিগত জীবনে প্রগতিশীল মতাদর্শ ও পরিশীলিত রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ। তার সুযোগ্য স্ত্রী ফিরোজা বেগম (খুকু) গেণ্ডারিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এই গুণী সজ্জন নিরহংকার মানুষটির বাড়ি প্রায়ই যাওয়া-আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ব্যক্তি হায়াৎ মামুদকে জানতে তাই তার সঙ্গে কথোপকথনের কিছু অংশ পাঠকসমাজের কাছে তুলে ধরলাম-
প্রথম দিন স্কুলে যাবার কোন ঘটনা কী মনে পড়ে?
তেমন নেই। সকলে দল বেঁধে হৈ হৈ করে ইস্কুলে গিয়েছি। সকলে দল বেঁধে হৈ হৈ করে ইস্কুলে যাওয়ার মতো আনন্দের কিছু হয় না কি?
ইস্কুল জীবনে শান্ত/দুষ্ট/বোকা কেমন ছিলেন?
শান্ত।
কেন?
বোকা হওয়ার কারণে নিশ্চয়ই।
প্রথম লেখালেখি শুরু কখন থেকে?
কলেজে যখন পড়ছি।
ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?
পড়াশোনা ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছি।
কেন?
কারণ আমারও অজ্ঞাত।
পড়াশোনা শিখে মাস্টার্স শেষ করে কী হতে চেয়েছিলেন?
মাস্টারি করতে চেয়েছি এবং তাই করেছি।
কেন?
লেখাপড়ার মধ্যে থাকাই পছন্দ ছিল।
ছদ্মনামে কেন লিখতে ইচ্ছা হলো?
আমার আসল নামে অন্য লেখক আরও ছিলেন।
মাতৃভাষার পাশাপাশি আর কী কী ভাষা জানা আছে?
রুশ ভাষা, সোভিয়েত ইউনিয়নে একটা শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে যেতে হয়েছিল।
রুশ ভাষা শেখার আগ্রহ হলো কেন?
আগ্রহ-অনাগ্রহের প্রশ্ন নয়, বাধ্য হয়ে শিখতে হয়েছিল।
রুশ ভাষা কীভাবে শিখলেন?
রাশিয়ায় থাকার কারণে। রুশ জনগণ তো ইংরেজী জানে না।
তার প্রিয় তালিকা-
রুশ ভাষার (রাশিয়ার) প্রিয় লেখক/কবি?
লেখক : তুর্গিয়েনেফ্, তল্স্তোয়, গোর্কি প্রমুখ। কবি : মান্দেল্শতাম।
বাংলার প্রিয় কবি/লেখক?
বলে শেষ করা যাবে না।
প্রিয় নায়ক?
ছবি বিশ্বাস।
প্রিয় নায়িকা?
সুচিত্রা সেন।
প্রিয় ছবি?
যেকোন ভাল ছবি।
প্রিয় গান?
রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদের গান।
প্রিয় ফল?
আম।
প্রিয় ফুল?
বেলি।
প্রিয় রং?
লাল।
প্রিয় খেলা?
কোন খেলা খেলি না।
প্রিয় বই?
অসংখ্য।
প্রিয় মানুষের নাম (পরিচিত), যাদের ভাল লাগে?
বহুজন আছেন; খ্যাতিমান ও অখ্যাত।
তার ভাল লাগা-
ছোটবেলায় কী করতে বেশি ভাল লাগত?
পড়তে।
কোন মজার ঘটনা, যা মনে পড়লে এখনও হাসি পায়?
আমার নির্বুদ্ধিতার কত কাহিনী আছে।
প্রায়ই যাকে মনে পড়ে?
আমার প্রয়াত পিতাকে।
মানুষের যে গুণটি ভাল লাগে?
প্রসন্নতা।
মানুষের যা ভাল লাগে না?
গুরুগম্ভীর চোখ মুখ।
যেটা মোটেও পছন্দ নয়?
ফালতু লোকের সঙ্গে সময় কাটানো।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আপনার কী উপদেশ?
প্রচুর পড়াশোনা করা।
‘ভালবাসার বিয়ে’ সম্পর্কে কিছু কথা?
চমৎকার বিয়ে। আমার বিয়েও নিজেদের নির্বাচনপ্রসূত।
আপনাদের দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল কোথায়?
জি. সি. দেবের বাড়িতে।
কে কাকে প্রথম বলেছিল ‘ভালবাসি’?
কেউ বলিনি। বুঝে নিয়েছিলাম।
বিয়ের দিনের কোন (মজার) ঘটনা?
অমন Suspense-এ কখনও মজার ঘটনা ঘটে?
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মর ভালবাসাকে কীভাবে দেখেন?
প্রশ্রয়ের ভঙ্গিতে।
এ প্রজন্মর বেশিরভাগ ভালবাসাই বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না; এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
প্রতিটি ঘটনাই নিজস্ব চরিত্র নিয়ে আছে। সকলই স্বতন্ত্র। তাই ঢালাও মন্তব্য করা যাবে না।
সমাজের কোন সমস্যাটা প্রায়ই আপনাকে ভাবায়?
মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বাড়ছেই। অথচ, উচিত কমা।