ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

রোকে ডালটন এর দুটি কবিতা ভাষান্তর

রোকে ডালটন এর দুটি কবিতা ভাষান্তর

রোকে ডালটন লাতিন আমেরিকার  অন্যতম শক্তিশালী বিপ্লবী কবি, যাঁকে চে গুয়েভারার পরেই স্থান দেয় লাতিন বিশ্ব। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে, সালভাদরের এক উচ্চবিত্ত পরিবারে। ১৯৫৫ সালে তিনি কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৯-৬০ এ কৃষক অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে  স্বৈরাচারী একনায়ক সরকার। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ফাঁসির দিনেই সেই স্বৈরশাসকের পতন ঘটে, আর তিনি বেঁচে যান। ১৯৬১ তে দেশত্যাগ করে মেক্সিকো চলে যান।  সেখানেই তাঁর কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। এরপর তিনি চলে যান কিউবা এবং লাতিন আমেরিকার একজন অন্যতম প্রধান বিপ্লবী কবি হয়ে ওঠেন। কিউবা থেকে যান প্যারাগুয়ে, সেখানে তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতা অনেককে চমৎকৃত করে। ১৯৬৫ তে ফিরে আসেন দেশে। সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৭৫ এর ১০ মে, বিপ্লবীদের মধ্যে চলা এক আন্তঃসংঘর্ষে।

ভাষ্যগুলো ভাষা হোক

ভাষ্যগুলো ভাষা হোক

কবি মতিন বৈরাগী ঊনআশি-তে পা ফেলেছেন। মাথা থেকে চুল অপসৃত প্রায় এবং যা কিছু অবশিষ্ট, এখনও অশেষ, সাদা রঙের শুভ্রতায় অমলিন। ততোধিক তিনি তরুণপ্রাণ এবং তরুণাভিমুখী, নিরহংকার এবং হৃদয়াবেগে পরিপূর্ণ একজন মানুষ; সহসা সাক্ষাৎ থেকে একান্ত আপন করে নিতে পারেন নিমিষেই। কোনো অনুরোধ ব্যতিরেকে, নিজস্ব তাগিদে হঠাৎ কোনো তরুণের কবিতা নিয়ে লিখে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন সেই তরুণ কবিকেই; কেননা তিনি জানেন কবিতা এক প্রবাহ যাকে সঞ্চারিত করে দিতে হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আজীবন মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে, দেশের নানাবিধ সংকট ও উত্থান-পতনের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে মানুষের মুক্তির কথা ভেবেছেন এবং সম্পৃক্ত থেকেছেন। যে পথে মানুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে বলে বহুকালব্যাপী পৃথিবীর একটা আদর্শ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এসেছে, আজ পরিবর্তিত সময় ও পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এখনও আস্থা রাখেন তাতে। তাঁর কবিতা তাই ব্যক্তিদীর্ণ অনুভবের থেকে এসে সামষ্টিকতায় ছড়িয়ে যায় এবং তা কোনোভাবেই নয় স্লোগানের সাময়িকতায়; বরং এক অন্তর্লীন কাব্যবোধের বোঝাপড়ায়, অনেক নিরাভরণ কিন্তু গভীরতায় লীন। কবি বৈরাগী লিখছেন তাঁর ‘আজকের বিপন্ন দিনে’ কবিতায় : আজকের এই বিপন্ন দিনে সীমাহীন সমুদ্র-তীরে যখন দাঁড়িয়ে খুঁজছো কখন হারিয়েছে দিনের সূর্য তখন উচ্ছ্বসিত জলরাশির ক্রুদ্ধ গর্জন পাতালের শতকোটি নাগ দিচ্ছে ছোবল তটরেখায় তোমার দু’পায়ে নিস্তরঙ্গ জীবনে বুঝি দিতে চায় অন্য এক ভাষা আবেগ সৌরভ তখন শতাব্দীর অন্ধকারে তুমি নৈঃশব্দের ঘরে দাঁড়িয়ে  তোমার সমুখে অথৈ সাগর-জলের ক্রুদ্ধ গর্জন, ভাবছো  দেখছো আকাশ! ‘উচ্ছ্বসিত জলরাশির ক্রুদ্ধ গর্জন পাতালের শতকোটি নাগ’-এর ফণায় এই বিপন্ন সময়কে তিনি উপমিত করছেন, যখন বিপন্নতার বোধ সংক্রামিত হওয়ার আগে প্রকৃতির এক ভয়ংকর সুন্দর রূপকেও আমরা প্রত্যক্ষ করি বিস্ময়ে। অবশ্য তিনি আর রূপকের মধ্যে থাকেন না শুধু আরো বেশি স্পষ্টতায় চলে আসেন যখন একই কবিতায় বলেন : এমনো দিনের অন্ধকারে কতো জলজ প্রাণীর কঙ্কাল শামুকের মাছেদের কিংবা হাঙরের, পাখিদের মানুষের আদিতম উৎসের ধরিত্রি মাতার পাঁজরে  চেয়ে চেয়ে দেখো বুঝি! দেখিবারে পাও! [...] মানুষের সময় কাটে শাসক-শোষকের লোভ আর লুটমত্ত মচ্ছবে প্রতারণায় ক্ষত-বিক্ষত হয় জোৎস্নার মিহিন শরীর কালের দুষ্ট-চক্র রাষ্ট্র প্রতিদিন কাড়ে মানুষের ভালোবাসা, ভালো সে আশা আলো ফোটে না যে পৃথিবী কাঁদে হৃদয় ফাটানো চিৎকারে মানুষ জাগে না ‘জলজ প্রাণীর কঙ্কাল’ চিত্রবন্ধে যে অনুক্ত হিংসা ও আক্রমন চিহ্নিত হয়, তা স্পষ্ট হয়ে যায় শাসক-শোষকের লোভ আর লুটমত্ত মচ্ছবে ক্ষতবিক্ষত জ্যোস্নার মিহিন শরীরের রূপকল্পে এসে। এভাবে প্রাকৃতিক সম্মোহনের মধ্য দিয়ে তিনি আজকের বিপন্ন দিনের গল্প শোনান পাঠককে। এর থেকে তিনি মানুষের মুক্তি চান। মানুষের অন্তরে যে ভাষ্যগুলো অবরুদ্ধ হয়ে আছে তার মুক্তি চান তিনি। বলেন তিনি ‘ভাষ্যগুলো ভাষা হোক’ কবিতায় : কান্নাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে দাও, আত্মা হয়ে উঠুক, বজ্র হোক বিক্রমে, মেঘ হোক আকাশের, তুমুল তুফান উঠুক করোটির ভাঁজে, অনন্ত এক ইচ্ছে ডানা মেলুক সপ্তরথের চাকা জাগরণ জাগরণ বলে চিৎকার উঠুক তারস্বরে, আর আবদ্ধ হৃদয় মুক্ত হোক এই মুক্তি শুধু জাগতিক অর্থেই নয়, সামাজিক-রাষ্ট্রিক শোষণ বঞ্চনা থেকেই শুধু নয়; আরো বৃহত্তর পরিসরে মানুষের আত্মিক মুক্তির কথাও বলেন তিনি যখন উল্লেখ করেন একই কবিতায় পৃথিবীর পরম মানবসত্তা, মহাপ্রাণ বুদ্ধকে : অনন্ত এক ইচ্ছের মতো একই লোহুরং একই প্রাণমন থেকে আবার জন্মাক মহাবুদ্ধ এক রাতে পৃথিবীর সকল ক্রন্দন হোক জাগরণ সঙ্গীত ভেসে যাক কপট মুখগুলো আলোর বন্যায় ১৬ নভেম্বর ছিল কবি মতিন বৈরাগীর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে, তাঁর একান্ত প্রার্থনার মত আমরাও বলি কপট মুখগুলো আলোর বন্যায় ভেসে যাক এবং অন্ধকার ভেদ করে জেগে উঠুক করুণালেখন মহামতি বুদ্ধের মুখ। ওম শান্তি!

ঝুলবারান্দায়  ইসরাইল-ফিলিস্তিন 

ঝুলবারান্দায়  ইসরাইল-ফিলিস্তিন 

অফিস ডে অফ আজ । বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেন রাহাত। নাস্তা করে সাদিয়ার তৈরি করা লম্বা ফর্দ নিয়ে সাপ্তাহিক কেনাকাটা করতে বেরিয়ে যান। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে দুই হাতে থলে ভর্তি সওদা নিয়ে ঘামে জবজবে শরীর নিয়ে বাসায় ফেরেন। ডবল ফ্যান চালিয়ে জামা-কাপড় ছাড়তে ছাড়তে গামছা দিয়ে ঘাম মোছেন। সাদিয়া থলে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে আনেন। এক নিঃশ্বাসে শেষ করে খাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন রাহাত। টিভি রুমে ততক্ষণে দুই ভাই-বোনের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।  আমি দেখছিলাম, তুমি রিমোট নিলে কেন? সারাদিন তুই দেখবি নাকি? বাবা বলেছে না একসঙ্গে মিলেমিশে দেখতে? তোর সঙ্গে ওই ছোটদের কার্টুন আমি দেখব নাকি? তুমি বুঝি বড় হয়ে গেছ? আর বড়রা কি কার্টুন দেখে না। বাবা-মাও তো মাঝে মাঝে কার্টুন দেখে। তুমিও তো মাঝে মাঝে দেখো।  তাতে কি, এখন আমি দেখব না। গুরুত্বপূর্ণ খেলা চলছে। আমি এখন খেলা দেখব। হয় আমার সঙ্গে খেলা দেখ, নয়তো পুতুল খেল গিয়ে। না আমি কার্টুন দেখবো। রিমোট দাও বলছি। না দেবো না। রিমোর্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হলে সাদিয়া কিচেন থেকে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন, টিভি বন্ধ কর বলছি, কাউকে টিভি দেখতে হবে না।  পরিস্থিতি ভয়ানক দেখে রাহাত নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠে আসেন।  এই গরমে কী শুরু করেছ তোমরা? দুদিন আগে কী বোঝালাম তোমাদের? বলেছি না একসঙ্গে মিলে মিশে টিভি দেখতে হয়, একে অপরকে ছাড় দিতে হয়। ভাই-বোন হয়ে যদি একে অপরকে ছাড় দিতে না পারো তাহলে অন্যকে কীভাবে ছাড় দেবে?  বাবার কথার উপর কথা বলে না কেউ, মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে।  রাহাত বলেন, রিমোট কই?  শুদ্ধ কেড়ে নেওয়া রিমোট শরীরের পেছন থেকে সামনে আনে। দাও, আমার কাছে দাও। এখন তোমাদের টিভি দেখতে হবে না। খেলো গিয়ে।  ছলছল চোখে দুজনেই ঝুলবারান্দায় চলে যায়। এই বারান্দাখানিই এখন ওদের যাবতীয় খেলা ও অবকাশ কাটানোর আশ্রয়।  ঋদ্ধ বলে, তোমার জন্যই কার্টুন দেখতে পারলাম না। বাবা টিভি দখলে নিয়ে নিলো, তাতে তোমার কী লাভ হলো? অন্তত আমার সঙ্গে বসে বসে কার্টুন দেখতে পারতে? যাও এখন বাবার সঙ্গে বসে বসে টক-শো দেখো, আর যুদ্ধের খবর দেখো।  তোর অই ন্যাকা ন্যাকা কার্টুনের চেয়ে যুদ্ধের খবরও অনেক ভালো। আমার সঙ্গে যদি খেলা দেখতি বরং তোর জন্য ভালো হতো, খেলার ফাঁকে ফাঁকে কার্র্টুনও দেখতে পারতি।  বাবা টিভির ভলিউম বাড়িয়েছে। বারান্দা থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।  ঋদ্ধ চোখে-মুখে অভিমান ধরে ভাইকে বলে, বাবা তো টিভি দেখছে, আমরা এখন কী করবো, বলো?  শুদ্ধ বলে, আমাদের মাঠ আছে যে খেলবো? নানুবাড়ি কত সুন্দর মাঠ, ছুটিতে সেখানেও যাওয়া হলো না।  হই-হুল্লোড় করতে করতে পাশের ফ্ল্যাট থেকে আসে মুগ্ধ ও চয়ন। শুদ্ধ-ঋদ্ধ’র সঙ্গে অবসরে প্রায়ই ওরা খেলতে আসে। সেই কখন থেকে এ বাসায় আসার জন্য মায়ের কাছে বায়না ধরেছেÑ অবশেষে মা আসতে দিলো।  খেলার সাথীদের আগমনে নিমেষেই শুদ্ধ-ঋদ্ধ বাবার রিমোট কেড়ে নেওয়ার বেদনা ভুলে যায়। ওরা আনন্দে মেতে ওঠে।  টিভি রুম থেকে বাবার কণ্ঠ ভেসে আসেÑ তোমরা আস্তে কথা বলো।  বারান্দা থেকে শোনা যাচ্ছে বাবা টিভির ভলিউম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

কবির পরীক্ষা 

কবির পরীক্ষা 

একজন কবি আসলে কবি কি না?  তার প্রথম পরীক্ষা দিতে হয় তার পরিবারের কাছে। কবিকে পরিবারের সদস্যরাই সন্দেহের চোখে দেখেন এবং ভাবেন সে কোনো কবি নয়। কবি তো হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দিন। এরপর তো আর কোনো কবির দরকার নাই অথবা আর কেউ কবি হবেন না। সুতরাং পরিবারের প্রধান কর্মক্ষম ব্যক্তিটি কি যেন হিজিবিজি লিখে লিখে সময় নষ্ট করেন। সংসারে অভাব ডেকে আনেন। তাই যে কোনো ভাবে তাকে এই অকাজ থেকে বিরত রাখতে যত পদ্ধতি আছে, তার সবটুকু অবলম্বন করেন পরিবারের সদস্যগণ। এ কথা সত্য, কবিতা লিখে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালানো যায় না। তাই কবি যদি সংসারের কর্তাব্যক্তি হন, তাহলে আসলেই অভাবের বটেরঝুরি সহজেই ওই সংসারে শিকড় গেড়ে বসে। বাইরের অনেকেই জানেন না কবিতা লিখতে প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়। অধ্যবসায়ী হতে হয়। বৃদ্ধি করতে হয় কল্পনা শক্তির দীর্ঘলতা। শক্ত করতে হয় ছন্দের শিকড়। কিন্তু পরিবারের সদস্যগণ নিজ চোখে দেখে থাকেন সুস্থ সবল মানুষটার সময়ের অপচয়! উপার্জনের অনীহা! তাই কবিকে পরিবারের লোক পাগল বলে সম্বোধন করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ব্যতিক্রম কিছু কবি আছেন যারা সরকারি চাকুরে। আমলা। তারা ভালো আয়রোজগার করলেও পরিবারের সদস্যদের ধারণা, তিনিও কবিতা লিখে ও বই ছেপে টাকাগুলো নষ্ট করছেন। এবং তাকে কবি বলে স্বীকার করেন না। কবিতার বইয়ের সৌজন্য কপি দিলেও গ্রহণ করতে চান না অনেকেই। যদিও তিনি একজন সফল কবি। শুধু পরিবারের লোকজন নয়। পাড়া-প্রতিবেশীরা কেমন যেন আড়চোখে তাকান। পিছনে সমালোচনা করেন। আত্মীয়স্বজনও একটু দূরে সরে থাকেন। বন্ধু-বান্ধব সতর্ক থাকে, ভাবে হয়তো টাকা পয়সা ধার চাইবে। আর কবি যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। কর্তাব্যক্তিরা প্রথমে তার কবিতার অবমূল্যায়ন করবেন। নানাভাবে কাউন্সিলিং করবেন, এসব অকাজ! না করার জন্য। তিনি যে কবিতা লিখতে পারেন অথবা তিনি যে কবি, তার স্বীকৃতি তো দিবেনই না বরং পরামর্শ দিবেন ভালো কাজ করার জন্য। আজেবাজে কথা লিখে সময় এবং অর্থ অপচয় না করার জন্য। অবশেষে তাদের রেটিনায় প্রতিফলিত এই পাগল, অকর্মণ্য ব্যক্তির চাকরিটা খেয়ে ফেলবেন। আমরা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা জানি। যিনি তাঁর লিখনির মাধ্যমে ইংরেজ বেনিয়াদের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন। বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তাঁর বিশের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয় শিখা, চন্দ্রবিন্দু ও যুগবাণী নামের পাঁচটি বই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা। খাটতে হয়েছিল জেল। করতে হয়েছিল অনশন।তব্ওু তাঁকে তৎকালীন সময়ের অনেক বিজ্ঞজনও কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চান নাই। বরং সজনীকান্ত দাস তাঁর শনিবারের চিঠিতে নজরুলের কবিতা ব্যঙ্গ করে প্যারোডি লিখতেন। তাঁকে কটাক্ষ করে নানা সমালোচনা করতেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় পুত্র বুলবুল সাড়ে চার বছরে মারা গেলে, দাফন করার মতো টাকা ছিল না কবির কাছে। একশ’ পঞ্চাশ টাকার প্রয়োজন ছিল। অনেক লাইব্রেরিতে লোক পাঠিয়ে  দরজায় কড়া নেড়ে ছিলেন। কেউ টাকা দেননি। ডি,এম লাইব্রেরি মালিক অবশ্য পঁয়ত্রিশ টাকা দিয়েছিলেন। অবশেষে এক প্রকাশককে ‘ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে / আমার গানের বুলবুলি/ করুণ চোখে চেয়ে আছে / সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।-/কবিতাটা লিখে দিয়ে টাকা নিয়ে ছেলের দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ত্রিশ দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ  কবি জীবনানন্দ দাশকে তো জীবিত অবস্থায় কেউ কবিই বলতেন না। ওই ক্যাম্পে কবিতাকে অশ্লীল বাক্যের বকবকানি নির্ধারণ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিণামে কবিকে খুলনা মহিলা কলেজের অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা দিয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। ক্ষুধা কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। কবি সুধীন দত্ত তো তাঁকে কবি বলে গণ্যই করতেন না। জীবনানন্দ দাশের কবিতা তাঁর পত্রিকায় ছাপতেন না বললেই চলে। সুধীন দত্তের ছোট ভাইকে প্রাইভেট পড়াতেন কবি জীবনানন্দ দাশ।

বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন যুগ

বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন যুগ

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে একটি অবিস্মরণীয় নাম। যারা হুমায়ূন আহমেদের ঘোরতর সমালোচক তারাও আড়ালে-আবডালে এটা স্বীকার করেন। হুমায়ূন আহমেদের সমালোচনা করা যায়, তাঁর অনেক সাহিত্যকর্মকে হালকা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কিন্তু তাঁর বিপরীতে তুলনা করার মতো সাহিত্যিক বা নাট্যকারকে দাঁড় করানো যায় না। অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদের তুলনা শুধু হুমায়ূন আহমেদই। ২০১২ সালে ক্যান্সারে তাঁর  বিদায়ের  পর এই এক যুগেও আর একজন সাহিত্য জগতে তাঁর মতো করে পাঠকের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। কেন পারেনি সেটি সাহিত্যবোদ্ধারা খুঁজে বের করবেন বা হুমায়ূন আহমেদের সমালোচকরা। জোৎস্না ও জননীর গ্রন্থের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, যখন হাসপাতালের বিছানায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি ভুগছেন তখনও তিনি একটি লেখার জন্য আকুলি বিকুলি করছেন এবং সেটি শেষ করতে হবে। তখনই তাঁর মনে হয়েছে তিনি একজন লেখক হয়ে উঠতে পেরেছেন। লেখক হয়ে ওঠা সহজ কথা না। এটি একটি দায়বদ্ধতা। নন্দিত নরকের পর থেকে আমৃত্যু হুমায়ূন আহমেদ যা উপহার দিয়েছে তা অমূল্য এবং অতুলনীয়। এক্ষেত্রে একটি দাবি হলো হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটি যুগ বা হুমায়ূন যুগ সাহিত্যে কেন থাকবে না? যিনি বাংলা সাহিত্যকে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, পাঠককে বইয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাঁর নামে একটি সময়কাল আলাদা ধরা হবে না কেন? সাহিত্যে রবীন্দ্র্রযুগ পেরিয়ে বহুকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে জীবনানন্দ দাশের জন্য। অবশেষে কবিতায় মুক্তি মিলেছে তাঁর হাত ধরে। সেরকম কথা সাহিত্যেও মুক্তি মিলেছে হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। আর শুধু গল্প-উপন্যাসই বা বলছি কেন। বাংলা নাটকের বর্তমান ধারা তো হুমায়ূন আহমেদেরও সৃষ্টি। অভিনেতা আলাদা তবে ধারা এক। দর্শককে নিখাঁদ বিনোদন দিয়ে মাতিয়ে রাখার প্রবণতা বা চেষ্টা হুমায়ূন আহমেদই করেছিলেন। তাঁর আগে সম্ভবত হয়নি। তাঁর নাটক ছিল একাধারে জীবনধর্মী এবং রসাত্মক। অভিনেতা এবং অভিনেত্রী নির্বাচনেও ছিল ভিন্নতা। বাংলা চলচ্চিত্রে যত গান তিনি জনপ্রিয় করে গেছেন, তা এক কথা ইতিহাস হয়ে আছে। সেই চলচ্চিত্রের ধারাকেও তিনি প্রবাহিত  করেছেন ভিন্ন ধাঁচে। একটি নাটকের চরিত্র নিয়ে দেশে মিছিল হলো। প্রথমবার মানুষ দেখলো নাটকের একটি চরিত্র বাস্তবে এসে দাঁড়ালো। তার ফাঁসি আটকানোর দাবিতে মিছিল। ভাবা যায়! সেই কালজয়ী চরিত্র বাকের ভাই আর তার নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন যে প্রতিটি ক্ষেত্রে। সাফল্য ছিল তাঁর ধারা আর বৃহস্পতি ছিল সব সময় তাঁর সঙ্গে। সমালোচকরা অবশ্য মুখ বন্ধ করে থাকেননি। তবে তা যে তাঁর বিশাল পাঠককুলকে একটুও বিচলিত করতে পারেনি, তা তাঁর মৃত্যুর পরেও বেশ বোঝা যায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ, আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। যাঁর চরিত্রে ছিল সারল্য, চিন্তা শক্তি ছিল গভীর আর কল্পনাশক্তি ছিল প্রবল। তিনি সৃষ্টি করেছেন নতুন জগৎ, সে তাঁর লেখাতেই হোক আর নাটক বা চলচ্চিত্রেই হোক। বাংলাদেশের সাহিত্যে প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ। যাঁর সাহিত্য রচনায় পাঠক মুগ্ধ থেকেছে যুগের পর যুগ। বেঁচে থাকতে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গস্পর্শী এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি। বরং তাঁকে জানার আগ্রহ আরও বেড়েছে। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। তখনই বোঝা গিয়েছিল কথাসাহিত্যের বিশাল জগতে তিনি অল্প সময়ের জন্য আসেননি, তিনি এসেছেন রাজত্ব করতে। তিনি সাহিত্যের ভুবনে ছিলেন সম্রাট। তাঁর পাঠকশ্রেণি ছিল আলাদা। যারা গোগ্রাসে তাঁর লেখা পড়তো। অবশ্য তাঁর সমালোচক শ্রেণিরও অভাব ছিল না। সে সমালোচনা তাঁকে আরও উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের লজিক ও আ্যান্টিলজিক চরিত্র হিমু ও মিসির আলী চরিত্র দুটি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এ চরিত্র নিয়েই দেশে বহু আলোচনা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে মেলানোর প্রচেষ্টাও করা হয়েছে। অনেক সময় চরিত্র দুটির স্রষ্টাকেই এই চরিত্রের সত্যিকারের মানুষ বলে মনে হয়েছে। কোনো কোনো লেখকের বই পাঠক গোগ্রাসে গিলে, আবার কোনো কোনো বই পাঠক গোগ্রাসে না গিললেও তার গভীরতা পাঠককুলকে আকৃষ্ট করে। হুুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশে যে এক তুমুল জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ছিলেন, সে কথা দ্বিধাহীনভাবেই বলা যায়।  তাঁর উপন্যাসের স্বকীয়তা, সহজ স্বাভাবিক ভাবে জটিল তত্ত্বগুলোর বর্ণনা দিয়ে যাওয়া, চরিত্রের তুমুল জনপ্রিয়তা কেবল তাঁর লেখনীতেই সাজে। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ঢল নেমেছিল। মাসের পর মাস এই চলচ্চিত্রটি বক্স অফিস দখল করে রেখেছিল।  হুমায়ূন আহমেদের কাজ, তাঁর সৃষ্টি বিশাল। হুমায়ূন আহমেদকে স্বাধীনতাপরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই প্রশ্নটা জোরালো হয়। কেন সাহিত্যে হুমায়ূন যুগ বিভাগ থাকবে না? বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন বলতে যাকে বোঝায় তিনি ছিলেন  সে রকম মানুষ। তিনি ছোলগল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিনি উপন্যাস, নাটক এবং চলচ্চিত্র জগতে এদেশে নতুন যুগের সূচনা করেছেন। কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি না দেয়ার দাবিতে মিছিল হয়েছে। যা দেশের নাটকে একটি ইতিহাস। এই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে উপন্যাস, নাটক বা সিনেমার চরিত্রকে তিনি মানুষের মনে জীবন্ত করে তুলতে পেরেছিলেন। অনেকেই হিমু সেজে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেছে। তিনি লেখনীর ধারায় পাঠক টেনেছেন, তিনি নাটকের চিরাচরিত ধারার বাইরে অনবদ্য কাহিনী সৃষ্টি করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্র মধ্যবিত্ত দর্শকদের হলমুখী করেছিল বহুদিন পর। তাঁর চিন্তা ছিল অন্যদের থেকে একটু আলাদা। তাঁর কাছে গুরুত্ব পেত পাঠক বা সিনেমা, নাটকের দর্শক। বাণিজ্যের জন্য নয়, বরং পাঠকের জন্য তিনি লিখেছেন, দর্শকের জন্য সিনেমা নাটক তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁর নাটক ও সিনেমায় প্রচারিত গানগুলো তো মানুষের মুখে মুখে। তাঁর হাত ধরে কত গুণী অভিনেতা নাট্যজগতে এসেছেন। পৃথিবীজুড়েই তাঁর বহু ভক্ত পাঠক রয়েছে। তাঁর অসংখ্য পাঠকের মধ্যে একজন আমি। হুমায়ূন আহমেদের স্পর্শ যেন সফলতার অন্য নাম। সহজ, সরল সাবলীল ভাষায় পাঠককে গল্পের ভেতর টেনে নেওয়ার যে ক্ষমতা তা তাঁর ছিল। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি ঔপন্যাসিকদের তিনি অন্যতম।  

কাজী আবদুল ওদুদের মনন ও সাহিত্য ভাবনা

কাজী আবদুল ওদুদের মনন ও সাহিত্য ভাবনা

কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সাহিত্যিক। রক্ষণশীল সমাজের নিগড় ভেঙে সংস্কারমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ গঠন ছিল এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য। আর এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য কলকাতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সৃষ্টি হয় ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’। উক্ত সময় বিশেষ করে মুসলমানরা সমাজের সর্বক্ষেত্রে বেশি গোঁড়ামি মনোভাবাপন্ন হওয়ায় তাদের মধ্যে সুমননশীল মানসিকতা সৃষ্টির জন্য বেশ কয়েকজন মুক্ত মনের সাহিত্যিক রক্ষণশীল সমাজের প্রাতিরোধ উপেক্ষা করে এ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, কাজী ইমদাদুল হক, কাজী গোলাম মোস্তফা, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শশাঙ্কমোহন সেন প্রমুখ। কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন এঁদেরই দলে। শুধু দলে নয়, এঁদের সবার চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যময় একাগ্রতায়। দেখা যায় নামে ‘মুসলমান মুসলমান সাহিত্য সমিতি’ হলেও সমকালীন অনেক খ্যাতিমান হিন্দু সাহিত্যিকরাও এর সদস্য ছিলেন। এর কারণ হচ্ছে, ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’টি ছিল একটি সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন। আর এ প্রতিষ্ঠানটিও তাই। হিন্দু-মুসলমান সকল সাহিত্যিক মিলে এ আন্দোলনকে গতিশীল করেন। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে ১৯২৫ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’। এর মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে ‘শিখা’ নামে একটি বার্ষিক সাহিত্যপত্র। ‘শিখা’র আদর্শ হিসেবে এর প্রতিটি সংখ্যার প্রতিটি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় লেখা থাকতো, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। এ লেখাটির উদ্ভাবক ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। পুর্বোক্ত সাহিত্যিকগণই এতে লিখতেন। তাঁদের সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হলেন মোতাহার হোসেন চৌধুরী, আবুল ফজল, কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আনোয়ারুল কাদির প্রমুখ। অবশ্য সব লেখকদের মধ্যমণি ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। তাঁরই নির্দেশিত আদর্শে পত্রিকার লেখা সংগৃহীত হতে থাকে। ‘বুদ্ধির মুক্তি’র আদর্শে অন্যান্য লেখকদের লেখা ছিল তাঁদের সৃষ্টির একাংশ। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন চিন্তাধারার লেখা তাঁরা লিখতেন। ‘শিখা’র জন্য যা তাঁরা লিখতেন, তা ছিল কাজী আবদুল ওদুদের অনুুরোধে। অর্থাৎ অনেকটা ফরমায়েশি লেখার মতো। কিন্তু কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন তাঁদের থেকে স্বতন্ত্র। সম্পূর্ণ ‘বুদ্ধির মুক্তি’র আদর্শই ছিল তাঁর লেখার রসদ। এ চিন্তাধারার বাইরে একটি লেখাও তিনি লেখেননি। মূলত তিনি ছিলেন গদ্য লেখক। তাঁর সে গদ্যের ভাষাও ছিল অন্যের থেকে স্বতন্ত্র। ভারিক্কি আর তেজক্রিয়তায় সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। কোনো আয়েশী অথবা হালকা বর্ণনা কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিন্যাস তাঁর সাহিত্যে নেই। এটা তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব রচনাশৈলী। পড়লেই বোঝা যায় যে, এটা কাজী আবদুল ওদুদের লেখা। যেমন বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গদ্য। কাজী আবদুল ওদুদের গদ্যকে তেমনি আমরা নাম দিতে পারি ‘ওদুদী গদ্য’ বলে। সকল লেখকই তাঁর আদর্শের কিংবা সম্মানের পাত্র ছিলেন না। বিনোদনমূলক রচনাকে তিনি সাহিত্যের পদবাচ্য মনে করতেন না। যে সাহিত্যের মধ্যে মুক্তবুদ্ধির চর্চা নেই, তেমন সাহিত্যকে লেখকের পণ্ডশ্রম বলে মনে করতেন তিনি। সস্তা কাহিনীর আবেগী উপন্যাস তাঁর কাছে কখনো শ্রেয় সাহিত্যের মর্যাদা পায়নি। এটাকে তিনি মনে করতেন ক্ষণিকের অপ্রয়োজনীয় আয়োজন। স্বল্পকালজীবী। কখনো দীর্ঘস্থায়ী সাহিত্য নয়। তাঁর মতে, এসবের মধ্যে মুক্তজীবনের কথা হয়তো থাকতেও পারে; কিন্তু তা প্রচ্ছন্নভাবে। প্রচ্ছন্নতাকে তিনি সাহিত্যের বিষয়বস্তু বলে মানতে রাজি ছিলেন না। তাঁর সাহিত্যসংজ্ঞা ছিল খোলাখুলিভাবে মুক্ত জীবনের দৃপ্ত আহ্বান। সংস্কার আর রক্ষণশীলতামুক্ত সৃষ্টির উপকরণ। এ জন্য তিনি শ্রদ্ধা করতেন বাংলা সাহিত্যের রামমোহন আর রবীন্দ্রনাথকে, যদিও তাঁদের ভাষাকে তিনি কখনো অনুসরণ করেননি। তাঁদের আদর্শই ছিল কাজী আবদুল ওদুদের শ্রদ্ধার বিষয়। সংস্কৃত কবি কালিদাসও তাঁর আদর্শ। বিদেশীদের মধ্যে পারস্যের কবি শেখ সাদী এবং জার্মান কবি গ্যেটে ছিল তাঁর প্রিয়। বিশেষ করে গ্যাটের প্রতি তাঁর অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। গ্যেটের ওপর তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ‘কবিগুরু গ্যেটে’ নামে দু’খণ্ডের দুটি গ্রন্থ লিখেছেন ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে। গ্রন্থের নামকরণে গ্যেটের প্রতি তাঁর ভক্তির প্রমাণ মেলে। গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘... এই মহাজীবনের প্রতি আমার ঘনীভূত অনুরাগ যে মন্দীভূত হয়নি, এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। গ্যেটে সম্বন্ধে বাংলাভাষায় কোনো গ্রন্থ নেই বললেই চলেÑ তেমন বিষয় আলোচনাও নেই। কিন্তু বাংলার জীবন ও সাহিত্যের সঙ্গে গ্যেটের যোগ নিবিড়।... কালে কালে সবাই হয়তো এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ হবেন যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপের যে নবমানসিকতার সাধনা ঘবি যঁসধহরংস -পাশ্চাত্যে তার শ্রেষ্ঠ মূল গ্যেটে, আর প্রাচ্যে তার শ্রেষ্ঠ ফল ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার জাগরণ তার ব্যাপকতম প্রমাণ রবীন্দ্রনাথে।’ প্রসঙ্গত এভাবেই তিনি গ্যেটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে মিলিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথও ছিলেন তাঁর ভালোবাসার মানুষ। তার কারণ হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের মুক্তবুদ্ধি ও সাহিত্যাদর্শ ছিল তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই রবীন্দ্র-রচনা পড়েছেন অতি আগ্রহের সঙ্গে। অনেক ভাবনা-চিন্তা করেছেন রবীন্দ্র-সাহিত্য নিয়ে। রবীন্দ্র-সাহিত্যের ওপর একখানা গ্রন্থও লিখেছেন। ‘মাসিক জাগরণী’ পত্রিকার ১৩৩৫ সনের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যাতে  গ্রন্থটির আলোচনায় বলা হয়Ñ ‘রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন এবার শক্ত হাতে।... এই পুস্তকখানি আকারে ছোট কিন্তু এর মধ্যে যে অধ্যবসায়, পরিশ্রম, মস্তিষ্ক শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা অতীব বিস্ময়কর। আর এর প্রত্যেক শব্দই এক একটি মনোহর সৃষ্টি।’ আলোচনাটি রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ হলেও এতে কাজী আবদুল ওদুদের সাহিত্যশৈলীর পরিচয় মেলে। তিনি লিখেছেন ‘নজরুল প্রতিভা’ নামে একখানা গ্রন্থ। যেটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ’ নামে দু’খণ্ডে তিনি আরও দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থ দুটির প্রকাশকাল যথাক্রমে ১৩৬৯ ও ১৩৭৬ বঙ্গাব্দে। এ দুটি গ্রন্থে রবীন্দ্র-সাহিত্যের জীবনবাদিতা সম্পর্কে বিশদ আলোচিত হয়েছে। রবীন্দ্র-সাহিত্যের ওপর তাঁর একটি ইংরেজি গ্রন্থের নাম ‘ঞধমড়ৎ’ং জড়ষব রহ ঃযব জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ওহফরধহ ঞযড়ঁমযঃ’ এটি রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর একটি লিখিত বক্তৃতার  বিষয়বস্তু ও মানব জীবনবাদিতামূলক। ভাষা নয়, বিষয় বিচারে এটি কাজী আবদুল ওদুদের চিন্তাধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য-ভাষা নয়, তাঁর ভাবাদর্শ, নির্জীব পুরনো সবকিছুকে ভেঙে নতুন করে গড়ার তাঁর দুর্বার সাহস, দুরন্ত স্পর্ধা কাজী আবদুল ওদুদকে আকর্ষণ করেছিল। নজরুলের ব্যক্তি-মানস তাঁকে করেছিল মুগ্ধ। সেই মুগ্ধতার কৃতজ্ঞতায় তিনি লিখেছেন ‘নজরুল প্রতিভা’ নামে একখানি আলোচনা-গ্রন্থ, যেটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে।  গ্রন্থটি লেখার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘...আমি নিজে অনেকখানি খুশি হতে পেরেছি কবির কাব্য প্রতিভার একটি নতুন ছটা উপলব্ধি পেরেছি বলে।’ বলাবাহুল্য,  এই ‘ছটা’ই তো সেই বস্তু, যার সাধনা ওদুদ সাহেব করেছেন ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনে।’ সমাজের অচলায়তনকে অস্বীকার করে নতুন যাত্রার পথ নির্দেশ আছে শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন লেখায়, তাঁর উপন্যাসে। উপন্যাস হলেও লেখকের বক্তব্য অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে তাঁর  বিদ্রোহ অনমনীয়। এটা মুগ্ধ করেছে কাজী আবদুল ওদুদকে। তাঁর সেই মুগ্ধতার স্বীকৃতি ‘শরৎচন্দ্র ও তারপর’ গ্রন্থটি। এটির প্রকাশকাল ১৯৬১। পবিত্র আল-কোরআন বিশ^ মানবতাবাদের পরম নির্দেশিকা গ্রন্থ। কাজী আবদুল ওদুদ মনেপ্রাণে তা বিশ^াস করতেন। আল-কোরআনের শিক্ষা মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এ প্রত্যয় থেকেই তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আল-কোরআন। ভাষা সরল হলেও তেজোদীপ্ত। তিনি এ কথা অতি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করতেন, তাঁর ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ এবং আল-কোরআনের বাণীর মধ্যে কোনো আদর্শগত বিরোধ নেই। এ বিশ^াস থেকেই তাঁর এ অনুবাদ। বিশ^নবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) নবুয়তির চেয়ে তাঁর মানবতাবাদী আদর্শ অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করতেন। তাই তাঁর সেই মানবতার বিশ্লেষণ করে তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে ধারণ করে জীবনের ন্যায্য অধিকারকে অর্জন করে নেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি রচনা করেন ‘হযরত  মোহাম্মদ ও ইসলাম’ গ্রন্থখানি। জাতীয় জাগরণমূলক তাঁর রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থগুলো হচ্ছেÑ ‘নব পর্যায় : প্রথম খণ্ড’ (১৩৩৩ বঙ্গাব্দ), ‘নব পর্যায় : দ্বিতীয় খণ্ড’ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), ‘সমাজ ও সাহিত্য’ (১৩৪১ বঙ্গাব্দ), ‘হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ’ (১৩৪২ বঙ্গাব্দ), ‘আজকের কথা’ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), ‘স্বাধীনতা দিনের উপহার’ (১৯৫১ খিস্টাব্দ), ‘শাশ^ত বঙ্গ’ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ) ও ‘বাংলার জাগরণ’ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ)। এ ছাড়া সমাজ গঠন ও দেশ মুক্তিমূলক উপন্যাস লিখেছেন দুটিÑ ‘নদীবক্ষে’ (১৯১৯) ও ‘আজাদ’ (১৯৪৮)। দুটি গল্পগ্রন্ধÑ মীর পরিবার’ (১৯১৮) ও ‘তরুণ’ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ)। ‘পথ ও বিপথ’ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ) নামে একটি একাঙ্কিকাও লিখেছেন তিনি। এসব গ্রন্থের বিস্তারিত বর্ণনা না দিয়ে স্বল্প কথায় একসঙ্গে বলা যায়, কাজী আবদুল ওদুদের যে জীবনসাধনা, যে মনন আবেদন, সমাজ পরিবর্তনের দুর্জয়ী প্রত্যয়Ñ তার সবকিছুরই রসদ আর শক্তি আছে তাঁর এ সবগুলো রচনাতে। অত্যন্ত শক্তিশালী ভাষা আর আবেগে তিনি কলম ধরেছিলেন তাঁর যে কোনো লেখাতে। কাজী আবদুল ওদুদের সাহিত্য ও রচনাশৈলী সম্পর্কে আবুল ফজল বলেন, ‘বাংলাদেশের এ যুগের চিন্তাশীলদের মধ্যে নিঃসন্দেহে কাজী আবদুল ওদুদের স্থান প্রথম সারিতে। রচনার বৈচিত্র্য ও গভীরতার দিক দিয়ে প্রবন্ধ সাহিত্যিকদের মধ্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।’ তাঁর সাহিত্য মনন সম্পর্কে আবুল ফজল আরও বলেন, ‘... বুদ্ধির মুক্তির কথাটার মধ্যে কাজী আবদুল ওদুদের সম্স্ত চিন্তাধারার বীজ নিহিত রয়েছে। তাই যেখানে যত বুদ্ধির মুক্তি-মন্ত্রের সাধকের পরিচয় তিনি পেয়েছেন, তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারেননি।’ তাঁর রচনাশৈলী সম্মর্কে আবুল ফজলেরই অভিমত, ‘তিনি যতখানি লেখেন, তার অনেক বেশি ভাবেন এবং লিখতে বসার আগেই তিনি সেই ভাবনা সেরে ফেলেন। লেখা নিয়ে তিনি এত বেশি ভাবেন যে লেখার আগেই তার ভাষা ও ভাব তাঁর মনের ভিতর কাগজ কলমে রূপ নেওয়ার আগে এত বেশি পুনরাবৃত্তি হতে থাকে যে, তা তাঁর প্রায় মুখস্থ হয়ে পড়ে। ফলে এমনকি তাঁর সুদীর্ঘ প্রবন্ধও তিনি মুখে মুখে শুনিয়ে দিতে পারেন। এভাবে ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ভাষা গড়ে ওঠে, মনে মনেই চলতে থাকে তার মাজঘষা। তাঁর বিশিষ্ট রচনাশৈলী এই ভাবেই রূপ গ্রহণ করে। কাজী আবদুল ওদুদের ব্যক্তি-মানস সাহিত্যকর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমকালীন অন্যান্য আরও খ্যাতিমান সাত্যি-সমালোচকগণ বিভিন্ন ধরনের প্রশংসামূলক মন্তব্য করেছেন। অন্নদাশঙ্কর রায় বলেন, ‘ ... আজকের বাংলাসাহিত্যে সমালোচনা বিভাগে ওদুদ সাহেবের চেয়ে শক্তিমান ব্যক্তিত্ব দু’একজন আছেন, কিন্তু তাঁর মতো জীবন অধ্যয়নে সুনিপুণ স্থিধি সুধী আর একজনও আছেন কিনা সন্দেহ। তিনি কেবল বই পড়ে বইয়ের বিচার করেন না, মানুষের ভিতরে যে আছে, তাকে দেখেই চিনতে পারেন। গভীর অনুসন্ধিৎসা তাঁকে নিয়ে গেছে এমন এক স্তরে যেখানে নেই কোনো সাম্প্রদায়িকতা বা দলীয়তা বা মতবাদদৃষ্ট বৈজ্ঞানিকতা।’ এস. এন. কিউ. জুলফিকার আলী বলেন, ‘তাঁর (আবদুল ওদুদের) বলার ভঙ্গি ছিল অদ্ভুত, সাহিত্য বিচারে ছিল অতি সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি।’ কবি আবদুল কাদির বলেন, ‘তাঁহার উদার আদর্শ সুন্দর শিল্পমূর্তিই লাভ করিয়াছে।’ সর্বোপরি তাঁর সম্পর্কে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুধাবন, ‘তাঁর মনের জোর, বুদ্ধির জোর, কলমের জোর একসঙ্গে মিশেছে।’ ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত সাহিত্যসাধক কাজী আবদুল ওদুদের সার্বিক স্বীকৃতি অল্প কথায় এরচেয়ে বড় আর কি হতে পারে?

অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল হান্নান ও কবি তালাত মাহমুদকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান

অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল হান্নান ও কবি তালাত মাহমুদকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মহারশি সাহিত্য পরিষদের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদর বাজারের মিল মালিক ও খাদ্য ব্যবসায়ী সভাকক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, কবি প্রফেসর ড. মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী। মহারশি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি জামাল শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন কবি ডা. আব্দুল্লাহেল ওয়াফি হুমায়ূন কবীর। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সরকারি আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কবি শহীদুল ইসলাম, কবিসংঘ বাংলাদেশের সভাপতি কবি রফিকুল ইসলাম আধার, বাংলা একাডেমিক জীবনসদস্য ও বিশিষ্ট ছড়াকার আতিক হেলাল, কবি-অভিনেতা এবিএম সোহেল রশিদ, কবি মলয় চন্দন মুখোপাধ্যায়, কবি মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু ও কবি-প্রাবন্ধিক ড. আবদুল আলীম তালুকদার। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক শামীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় প্রধান আলোচক ছিলেন শেরপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি ও খবর পাঠক রবিউল মাশরাফী, আইয়ুব আকন্দ বিদ্যুৎ, নজরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুল হক, মনিরুজ্জামান মুনির, আশরাফ আলী চারু, জীবন কুমার চক্রবর্তী, আবুল কালাম আজাদ, শাহজাহান মোহাম্মদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক-শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল হান্নান ও কবিসংঘ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি-লেখক তালাত মাহমুদকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া অতিথিসহ উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উত্তরীয় ও ব্যাগ প্রদান করা হয়। একই অনুষ্ঠানে সংগঠনের ম্যাগাজিন ও সম্পাদিত গ্রন্থ মহারশির কাব্যকথাসহ কবি শামছুল হক শামীমের জোছনার জল, এরশাদ জাহানের রাতের নাকে চাঁদের ফুল ও জোবাইর আহমাদের স্রষ্টার প্রেমে কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যায় আবৃত্তিতে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন আবৃত্তিকার টিটু মুন্সি। ওইসময় আবৃত্তিকার হৃদয় লোহানীসহ অতিথি ও স্থানীয় কবিদের মধ্যে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি-বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, কবি-ছড়াকার নুরুল ইসলাম মনি, কবি হাফিজুর রহমান লাভলু, কবি রবিউল ইসলাম টুকু, কবি হাসান শরাফত, কবি মঞ্জুরুল ইসলাম, কবি আজাদ সরকার, কবি জোবাইর আহমাদ, কবি এরশাদ জাহান, কবি মিলন আহমেদ, কবি দুলারী রহমান, কবি মোহাম্মদ শামীম মিয়া, কবি নুরুল ইসলাম নাযীফ, কবি হামিদা ইয়াসমীন, কবি মো. হানজালা, কবি নাসরিন জাহান শিপা, কবি রোজিনা আক্তার, কবি আসমা আক্তার, কবি সুমাইয়া আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কবিগণ একত্র হওয়ায় অনুষ্ঠানটি কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।