ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ভুগছেন? জেনে নিন ১৬টি সমাধান

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ভুগছেন? জেনে নিন ১৬টি সমাধান

ছবি: প্রতিকী

মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তা দৈনন্দিন জীবনে সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে কিছু পুষ্টিগত পরিবর্তন, ওষুধ সেবন কিংবা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি এক বা দুই মাসিক চক্রের মধ্যে কোনো উন্নতি না দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর যদি শ্বাসকষ্ট হয়, বড় আকারের রক্তের জমাট বের হয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে।

পুষ্টিগত পরিবর্তন

. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
রক্তক্ষরণ বেশি হলে প্রতিদিন থেকে কাপ বেশি পানি পান করুন। এর সঙ্গে ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় খেলে বা খাবারে সামান্য লবণ যোগ করলে শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

. লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান
মাসিকের সময় আয়রন ক্ষয় হয়। আয়রন ঘাটতি রোধে খেতে পারেন - ঝিনুক, পালং শাক, কলিজা, মটরশুটি জাতীয় খাবার, গরুর মাংস, কুমড়োর বীজ, কুইনোয়া, টার্কি, ব্রকলি তোফু।

. কাস্ট আয়রন পাত্রে রান্না করুন
কাস্ট আয়রন পাত্রে রান্না করা খাবারে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা আয়রন মিশে যায়, যা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।

. ভিটামিন সি গ্রহণ বাড়ান
ভিটামিন সি রক্তক্ষরণ কমাতে সহায়ক হতে পারে এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে। কাকাডু প্লাম, এসেরোলা চেরি, গুয়ারা, কাঁচা মরিচ, হলুদ বেল পিপার ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।

. ব্রাউন সুগারের পরিবর্তে ব্ল্যাকস্ট্র্যাপ মোলাসেস ব্যবহার করুন
এই পুরু সিরাপজাত খাদ্য উপাদানে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম রয়েছে।

ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা

. ঠিক ওষুধ নির্বাচন করুন
অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি রক্তক্ষরণ বাড়াতে পারে। বরং অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল) অথবা আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল), ন্যাপ্রোক্সেন (অ্যালিভ)-এর মতো ওষুধ নিতে পারেন।

. হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা আইইউডি uterine lining পাতলা করে দেয়, ফলে রক্তক্ষরণ কমে।

. প্রজেস্টিন ট্যাবলেট ব্যবহার
প্রজেস্টিন ট্যাবলেট uterine lining পাতলা করে মাসিকের রক্তপাত কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি গর্ভনিরোধক নয়।

. GnRH থেরাপি
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন কমানো হয়, ফলে uterine lining পাতলা হয় এবং রক্তক্ষরণ কমে।

১০. অ্যান্টিফাইব্রিনোলাইটিক ওষুধ
ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড (TXA)-এর মতো ওষুধ রক্তক্ষরণ কমাতে সহায়তা করে।

অপারেশন নন-সার্জিক্যাল পদ্ধতি

১১. হাই ইন্টেনসিটি ফোকাসড আল্ট্রাসাউন্ড (HIFU)
শুধুমাত্র ফাইব্রয়েডের কারণে রক্তক্ষরণ হলে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে টিস্যু নষ্ট করার একটি বিকল্প পদ্ধতি।

১২. ইউটেরিন আর্টারি এম্বোলাইজেশন (UAE)
ফাইব্রয়েডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে তা ছোট করা হয়।

১৩. মায়োমেকটমি
শুধু ফাইব্রয়েড অপসারণ করে জরায়ু অক্ষত রাখা হয়।

১৪. এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাব্লেশন
জরায়ুর আস্তরণ ধ্বংস করার পদ্ধতি। এরপর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

১৫. এন্ডোমেট্রিয়াল রিসেকশন
এলেকট্রিক তারের সাহায্যে জরায়ুর আস্তরণ কেটে ফেলা হয়।

১৬. হিস্টেরেক্টমি
পুরো জরায়ু অপসারণ করা হয়। এটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ, যার ফলে গর্ভধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মাসিকের সময় মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক হলেও যদি এটি নিয়মিত হয় বা জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত হতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ আপনার উপসর্গের কারণ নির্ণয় করে আপনার জীবনধারা পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন।

 

সূত্র: https://www.healthline.com/health/how-to-stop-heavy-periods

রবিউল হাসান

×