ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

দাম্পত্যে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ১০ এপ্রিল ২০২৫

দাম্পত্যে টানাপোড়েন

ধর্মীয় বিধিবিধান সামাজিক নিয়ম-কানুনের অনুষঙ্গ। সেই পুরাকাল থেকে। সেখানে বিয়ে থেকে বিচ্ছেদ সবই সমাজ সভ্যতার নিয়মের অধীন। আধুনিকতার নির্মাল্যে কত কিছুর পটপরিবর্তন সময়ের ন্যায্যতা। বিয়ে এবং বিচ্ছেদ দুটোতেই নারীর সমঅধিকার। আবার সামাজিক আইন-কানুনেও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। চলমান সমাজই কিছু নিয়ম সংস্কৃতি মানুষের সামনে তুলে ধরে সেখানে ধর্ম থেকে সামাজিক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এক ও অবিচ্ছেদ্যভাবে কাজ করে যায়। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি প্রত্যেক নাগরিকের যুগ ও কালের চলমান জীবনের নির্ণায়ক। সেখানে বিয়ে এক প্রচলিতই শুধু নয় ধর্মীয় নিয়ম-কানুনের অনুবর্তীও বটে। বিয়ের বেলায় যেমন সত্য একইভাবে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও তাকে আলাদা করার কোনো সুযোগই নেই। নারী-পুরুষের ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়মানুগ যে বিবাহ রীতি-নীতি তার থেকে বেরিয়ে আসার পথও ধর্ম আর সমাজ সংস্কারের নির্ণায়ক। এই সুদৃঢ় পারিবারিক সম্পর্ক সমাজ ব্যবস্থাকে শক্ত করতেও নিয়ামক শক্তি। এক সময়ের অন্তপুরবাসিনী নারীরা যুগের দাবিতে পরিস্থিতির ন্যায্যতায় বৃহত্তর সামাজিক পরিবেশেও নিজেদের সক্রিয় অংশীদারত্ব প্রমাণ করে যাচ্ছেন। বিয়েতে যেমন স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই সম্মতি মতামত গ্রহণযোগ্য একইভাবে বিচ্ছেদের কাতারেও সে ভাবেই সম অংশীদারত্ব পান উভয়েই। তবে বিয়ে কিংবা বিচ্ছেদে অন্তপুরবাসিনী নারীরা সম্মতির মাধ্যমেই তাদের সচেতন দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে যেতেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নব যুগে সেখানে মূল পরিবর্তন না হলেও পারিপাশির্^ক কিছু কার্যক্রমের রূপান্তর নতুন যুগের বরমাল্য। একসময়ের গৃহিণীরা শতবিপরীত স্রোত মোকাবিলা করেও স্বামী সংসারের ঘর ছেড়ে আসেননি। এমনকি স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলেও নয়। আজও বাংলাদেশে সতীনের সঙ্গে সংসার টিকিয়ে রাখা স্ত্রীর সংখ্যা অপ্রতুল নয়। বরং বাপের বাড়ি থেকে বলা হতো শ^শুরবাড়ি ছেড়ে তুমি না তোমার শবদেহ আসবে। যেমন যুগ, সংস্কার আর সংসার আজ বিলীনের পথে। পুরাকালের স্বল্প বয়সী কিশোরীরা জানতো না তাদের বৈবাহিক মর্যাদা, অংশীদারত্ব। এমনকি স্বামীর ঘর করা না করার দাবিটুকু থেকেও তারা যোজন যোজন দূরে থেকেছে। নারী শিক্ষা যত প্রসারিত হয়েছে ততোই তারা অধিকার সচেতন, ন্যায্য দাবি এবং স্বাধীন মতামতকেও সামনে নিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে বিয়েতে সম্মতি দেওয়ার অধিকারও। কবুল করার ব্যাপারে তাদের মতামতও ধর্মীয়, সামাজিক বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তেও তেমন দৃশ্য কমেনি। কিন্তু নব্য আধুনিকতার নির্মাল্যে নারী শিক্ষা যত বিস্তৃত হয়েছে ততোই তাদের শক্তি আর মুক্তির পথও ক্রমপ্রসারণে পেছন ফিরতে হয়নি। তাই এখন কিশোরী থেকে যুবতী অনেক নারীই বিয়েতে মত দিচ্ছেন। এমনকি বিচ্ছেদেও নাকি অনেকখানি এগিয়ে? হরেক তথ্য উপাত্তে এমন দৃশ্য স্বস্তিদায়ক হলেও সমাজ সংস্কারের সঙ্গে লড়াই আজ অবধি শেষই হয়নি। কোন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে মেয়েরাই অপছন্দের স্বামী সংসার থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন। শিক্ষাই কোনো নারীকে আত্মসম্মান, অধিকার বোধ, মর্যাদার লড়াইয়ে বিভিন্নভাবে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারাও বুঝতে পারছে সমাজ, সংস্কার, সংসারের নিয়ম অনুযায়ী অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় কেউই কারও থেকে পিছু হটবে না। তাই বিয়েতে যেমন সম্মতির অধিকার বিদ্যমান। একইভাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে স্বামীর যা অধিকার স্ত্রীও একই স্বাধীনতা অর্জন করেন। তাই সাংসারিক যাপিত জীবন যখন ভাঙনের খেলায় উম্মক্ত হয় স্ত্রীও সেখান থেকে ফিরে চলে আসা তার আইনগত ও ধর্মীয় বিধানকে মান্যতা দেওয়া। আধুনিকতার পরম নির্মাল্য তো বটেই। তবে সিংহভাগ গ্রাম বাংলার কুলবধূরা এখনো মান্ধাতা আমলের শিকল পড়ে স্বামী, সন্তান, সংসারের অর্গল খুলে বেরুতে না পারাও রুদ্ধতার কঠিনতর নিগড়।

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×