ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

ইশরাত ॥ ৬৪ জেলায় পা

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইশরাত ॥ ৬৪ জেলায় পা

মফস্বলে বড় হওয়া ইশরাত জাহান অনন্যা সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে যোগ দেন বিএনসিসিতে। কলেজে পড়ার সময় থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা জাগে। ৭২ বিএমএ লং কোর্সে আইএসএসবির জন্য ডাক পেলেও বাবা অনুমতি না দেওয়ায় আর সেখানে যাওয়া হয়নি। তিন ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র মেয়ে বিধায় অনেক স্বপ্নই অধরা রয়ে গেছে, বাসা থেকে অনুমতি না পাওয়ায়। তবে সব সময় সোজাসাপ্টা কথা বলার অভ্যাসের কারণে বাবা বলতেন রাজনীতিতে জড়াতে। সেসবের প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। পরবর্তীতে সাংবাদিক হওয়ারও ইচ্ছা জাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ায় ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা বাদ দেন- পড়াশোনা শেষ হোক তো আগে।
ভ্রমণকারী হবার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণ সংগঠন ডিইউটিএস এর সক্রিয় সদস্য হলেন অনন্যা। পেশাগত জীবন হিসেবে প্যাশনকে গুরুত্ব দিলে আয় আর স্বস্তি দুটোই হয়তো পাওয়া যেত। কিন্তু পরিবারের সম্মতি মিলল না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে মুক্ত পাখি হওয়ার সাধ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় দূর-দূরান্তে ঘুরে বেড়ানোর শখ পূরণ করতে শুরু করলেন। একটি অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্সির মডারেটর হিসেবেও যুক্ত হয়ে গেলেন। প্রথমেই পার্বত্য জেলাগুলো ভ্রমণ শেষ করলেন। উল্লেখযোগ্য কয়েক জায়গায় ট্রেকিং করে পাহাড়চূড়া আর ঝর্ণা জয় করলেন।
তখনই অনন্যা সিদ্ধান্ত নিলেন- ‘আমাকে ৬৪ জেলা ঘুরে দেখতে হবে।’ শুধু একটি টিউশন আর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছেন অনন্যা। খুব কম খরচে ২/১ জন বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গী করে একেকটি জেলার ট্যুর সম্পন্ন করেন। ২০১৬-২০১৯ এর মধ্যে ৪৬টি জেলা দেখা শেষ করেন। কিন্তু করোনাকালে সব জায়গায় চলাচল সীমিত হওয়ায় আর নিজের অসুস্থতার কারণে ২০২০-২১ এ তেমন ঘোরাঘুরি সম্ভব হয়নি। বাকি ১৮টি জেলা দেখা সম্পন্ন করেন চাকরি পাওয়ার পর।
ভ্রমণের পাশাপাশি অনন্যা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নতুন কিছু শেখা বা জানার আগ্রহ তার ছোটবেলা থেকেই প্রবল। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে কোরিয়ান ও স্প্যানিশ ভাষায় জুনিয়র ও সিনিয়র কোর্স এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট থেকে চাইনিজ লেভেল ওয়ান পাস করেন। শুধু শখের বসেই এসব ভাষা শেখা। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। এসব কাজের জন্য ‘দ্য ডিউক অব এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড’ এর তিনটি পদক ব্রোঞ্জ, সিলভার ও গোল্ড এওয়ার্ড পেয়েছেন। তার জন্য পড়ালেখার কোনো ক্ষতি করেননি কখনো। নিয়মিত ক্লাস, টিউশন, ফ্রিল্যান্সিং, ঘোরাফেরা সব কিছুই সমানতালে করেছেন। ২০১৮ তে বিবিএ শেষ করে ইন্টার্নশিপ করেন এসবিএসি ব্যাংক পিএলসিতে। এরপর এমবিএ পাস করে ২০২২ সালে সেই এসবিএসি ব্যাংক পিএলসিতেই ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারের দ্বিতীয় ব্যাচের একজন হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ২০২২ সালের ২৮-৩১ ডিসেম্বরে সাতক্ষীরা, মাগুরা আর নড়াইল ঘুরে ৬৪ জেলা দেখা শেষ করে তার স্বপ্নও পূরণ করেন।
২০২৩ সালের জুলাইতে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অনন্যার ভ্রমণে কিছুটা ধীর গতি চলে আসে। তার স্বামী ইনভেন্টরি ম্যানেজার হিসেবে একটি লজিস্টিকস কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনিও অবশ্য ঘুরতে পছন্দ করেন। তবে অনন্যার মতো ঠিক ভ্রমণপিপাসু বলা যায় না। তার কথা, যেখানেই যেতে চাও একা যাওয়া যাবে না। সময় করে দুজন একসঙ্গে বেড়াব। যাক, অবশেষে একজন সঙ্গী পাওয়া গেল। বেড়ানোটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল না। তাই ৬৪ জেলার পর এখন চলছে তাদের বিভিন্ন জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা। মেয়েরা ঘর থেকে উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে রাজ্যও জয় করতে পারে, অনন্যা তার উদাহরণ। তবে থাকতে হবে সততা। চাকরি, সংসার, ঘুরাঘুরিÑ তিন নিয়ে চলছে অনন্যার উড়ে বেড়ানো। অনন্যা উড়ে বেড়াক ভ্রমণপিপাসু মেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে।

×