ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

গ্রামীণ নারীদের সফলতার সিঁড়ি

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

গ্রামীণ নারীদের সফলতার সিঁড়ি

গ্রামীণ নারীদের সফলতার সিঁড়ি

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ গৃহবধূরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি পালন করে নিজেরাই হচ্ছেন স্বাবলম্বী। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি বড় ভূমিকা রাখছেন গ্রামীণ গৃহবধূরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এবার গ্রামের গৃহবধূদের  লালন-পালনের জন্য নতুন জাতের মুরগি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মুরগির নাম দেওয়া হয়েছে বাউ মুরগি। 
‘নানা কারণে দেশী মুরগি কমে যাচ্ছে। তাই  নতুন যে জাতটি তৈরি করা হয়েছেÑ সেটি কোনো রকম অতিরিক্ত যতœ ছাড়াই গ্রামে লালন-পালন করা যাচ্ছে।’ ইতোমধ্যে এই বাউ মুরগি পালন করে অনেকেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেখতে ও স্বাদে দেশী মুরগির মতো হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ মুরগি। ফলে চাহিদা ও দাম থাকায় দিন দিন বাড়ছে এই মুরগি পালন।
জানা যায়, গ্রামীণ গৃহবধূদের জন্যই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্র্রি বিজ্ঞান বিভাগ এই মুরগি উদ্ভাবন করেছেন।  সূত্র মতে অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন গবেষণা করে বাউ ব্রো মুরগি বা বাউ মুরগি নাম দিয়ে নতুন জাতের দুটি স্টেইন বা জাত উদ্ভাবন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরগির জাত দুটি এখন টেকসই প্রযুক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির মতো এগুলো ঘরের মধ্যেও পালন করা যায়। ৪২-৪৫ দিনে এ মুরগির ওজন হয় এক কেজির ওপর, যা বাজারজাত করা যায়। বর্তমানে দেশীয় মুরগির মতো ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
বাউ মুরগি পালনকারী নীলফামারীর চিলাহাটির ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের কাঁঠালতুলী গ্রামের আব্দুর সাত্তারের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে ও সেলফ-হেল্প অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প)-এর সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিস¤পদ খাতের নিরাপদ মাংস উৎপাদনে জলবায়ুসহিষ্ণু বাউ মুরগি পালনের জন্য আমাদের  চিলাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত গৃহবধূর প্রত্যেককে ৪৩ দিনের জন্য ১৫০টি করে মুরগি পালনের জন্য দেওয়া হয়।

যা আমরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বাউ মুরগি পালন করে নিজেরাই এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছি। আমাদের প্রশিক্ষণ শেষে সংস্থা থেকে আমাকে ১৫০টি বাউ মুরগি পালনের জন্য দেওয়া হয়েছিল। বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এই মুরগি পালনে সুবিধা হলো দেশী মুরগির তুলনায় অল্প দিনে বাজারজাত করা যায় এবং অন্য মুরগির তুলনায় ওজন খুবই ভালো আসে।
চিলাহাটি গ্রামের আবুলের চৌরাস্তা মনি আক্তার নামের অপর গৃহবধূ খামারি জানান, বাউ মুরগি পালন ও বাজারজাত করে আমি আর্থিকভাবে লাভবান ও স্বামীর সংসারে উন্নতি করতে পেরেছি। আমার মুরগিগুলো পাইকাররা এসে বাসা থেকে কিনে নিয়ে যায়। এই মুরগি নষ্ট হওয়া বা মারা যাওয়ার  কোনো ভয় নেই। এ ছাড়াও আমাদের স্থানীয় বাজারে এর যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তাই আবারও বড় আকারে বাউ মুরগির খামার তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি।
সেলফ-হেল্প অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প)-এর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বাউ মুরগি এখন সবার কাছেই পরিচিত। 
খেতে সুস্বাদু, মৃত্যুহার কম, উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণেই খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদাও অনেক। ৪৩ দিনের মধ্যে এর বাচ্চা ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, একেকটি মুরগি ২ থেকে ২.৫ কেজির মতো খাদ্য গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে একটি মুরগি পালনে ব্যয় হয় ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সেটা বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। 
এভাবে যদি কেউ ১০০ মুরগি পালন করে তা হলে ব্যয় বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে। এ মুরগি পালনে গ্রামীণ পুষ্টি ও আমিষের অভাব পূরণসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

×