ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

স্বীকৃতিতে কার্পণ্য কেন

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

স্বীকৃতিতে কার্পণ্য কেন

স্বীকৃতিতে কার্পণ্য কেন

সমাজের সমসংখ্যক নারীর উন্নয়ন থেকে দুর্ভোগ, দুর্যোগে অংশ নেওয়া দৃষ্টিনন্দন এবং লড়াকুও বটে। কিন্তু যখন কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সার্বজনীন স্বীকৃতি জরুরি সেখানে নারীর পেছনে পড়ে থাকা অস্বস্তিকর। কোটা সংস্কার থেকে বিদ্যমান সরকার পতনের আন্দোলনে বৈষম্যনিরোধক ছাত্র সমাজের সঙ্গে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ এক অনন্য যাত্রাপথ। কিন্তু ক্ষুব্ধ নারীরা লক্ষ্য করছেন এমন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রগামী ভূমিকা নেওয়ার পরও তাদের স্বীকৃতির বিষয়টা কেমন যেন অদৃশ্য থাকছে।

ছাত্রীরা স্পষ্ট করে এমন আওয়াজও তুলছেন যে কোনো রকম স্বীকৃতি পাওয়ার অভিপ্রায়ে কেউ লড়াইয়ের ময়দানে সম্মিলিত হতে পারে না। দেশাত্মবোধ অধিকার সচেতনতা, প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতার অন্তর্নিহিত লক্ষ্যে সংগ্রামকে আলিঙ্গন করা মাত্র। জুলাইয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা কিন্তু তাদের জন্মভূমির প্রতি সচেতন দায়বোধও বটে। আলোচনা কিংবা স্বীকৃতিকে আমলে না নিয়ে অধিকার আদায়ের সম্মুখ সমর নারীদের বরাবরই সামনের দিকে টেনেছে। 
সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ’৭১ এর নয় মাসের যুদ্ধোম্মত অস্থিরতায়ও সবল, সক্ষম নারী ঘরে বসে অলস সময় পার করেননি। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াই শুধু নয় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া থেকে নিত্য আহার সংস্থান নারীরা গৃহকোণেই তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্বকে আন্তরিকতভাবে পালনও করেছে। সেখানে নারী নয় একজন যথার্থ দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে নিজেদের বিরতও রাখেনি।

একদিকে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে অন্যদিকে আহত, লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে মোটেও পিছু না হটা দেশের প্রতি নিবেদন, সমর্পণে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়া। যা দেশ আর ইতিহাসের পরম নির্মাল্য, কোনো সময় চাওয়া-পাওয়াকে তোয়াক্কাই করা হয়নি। বরং উপস্থিত অস্থির সময়ের প্রয়োজনে লড়াকু অভিগমনে নিজেদের ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসাও জাতির জন্য পরম গৌরবের।

শুধু উন্নয়ন মহাযজ্ঞই নয় বরং নানামাত্রিক লড়াই-সংগ্রামের উত্তপ্ত রণাঙ্গনেও যদি সমসংখ্যকের উপস্থিতি দৃশ্যমান হতে বাধাগ্রস্ত হতো তা হলে বরাবরই অর্জন অধরা থাকত নয়তো বা আরও দীর্ঘমেয়াদি হতো।
সম্প্রতি স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে শিক্ষার্থী আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ দেশের জন্য ভিন্নমাত্রার নতুন সময়ের নব অভ্যুত্থান তো বটেই। সম্প্রতি সব শ্রেণি-পেশা নারী সমাজের সম্মিলিত আয়োজনে একমত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাগর-রুনী’ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থান ও নারী প্রশ্ন’ শীর্ষক সংলাপে এমন ক্ষোভ জানানো হয় নারীদের পক্ষে।

উপস্থিত বক্তারা দৃঢ়তার সঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব পদ ছাড়াও পেশাজীবী ও শ্রমিক নারীরা আজ সমানভাবে দেশের উন্নয়ন আর সংগ্রামকে বেগবান করে তুলছে। কোথায় নেই নারীরা? বহুবার প্রশ্ন ওঠা আরও একটি বাক্য ‘নারী তুমি কোথায় নিরাপদ?’ তার পরেও সমানতালে সমাজের হরেক অপসংস্কারের বিরুদ্ধে নারীদের উচ্চকণ্ঠ আজ সরবে সম্প্রসারিত। তবে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি হয়তো আসে কিন্তু নারীর প্রশ্নে তাও উচ্চারিত হয় না। কন্যা, জায়া, জননীর মহিমান্বিত রূপের আধারই যেন নারীর চিরস্থায়ী সম্পদ। 
সেখানে ছাইচাপা আগুনের মতো কোনো শিখাই বিচ্ছুরিত হয় না। বিদ্রোহী আর বিপ্লবী সত্তায় জেগে ওঠা নারীর লড়াই, সংগ্রামকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে সমাজ কেমন যেন পিছু হটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এই সংলাপে উপস্থিত থেকে তার সময়োচিত ও প্রাসঙ্গিক মতামত তুলে ধরেন। তিনি অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি, থেকে সরে এসে নতুন সময়ের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান। শুরুতে নারীর প্রশ্নেও স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

নারীর যথার্থ কর্মযোগ, পাথেয়, অংশীদারিত্বও স্পষ্ট করে তোলা জরুরি এমন বাক্য বরাবরই উঠে আসলেও আজও তার যথার্থ সমাধান না পাওয়াও সমসংখ্যকের দায়িত্ব-কর্তব্যকে অবহেলা করে পেছনে রেখে দেওয়া। সেটা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ও সম্মুখ সারির লড়াকু সৈনিক।

তাকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনো পদ তিনি পাননি। সেটা কি শুধু নারী বলে? এমন প্রশ্নও সভায় জোরেশোরে তোলা হয়। সমন্বয়ক ফরিদার সংস্কার আন্দোলনে তার যথার্থ দায়িত্ব- কর্তব্য পালনই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবির আকাক্সক্ষায় তিনি লড়াইয়ের ময়দানে ছুটে যাননি। সভায় নারী নেত্রী সীমা দাস ক্ষুব্ধ নারী সমাজের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। 
আলোচনায় উঠে আসে নারী নিপীড়নসহ সব ধরনের বৈষম্য নিরোধক সুব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে মানুষের অধিকার আদায়ের সুসংবদ্ধ পথযাত্রা।
সেখানে শুধু নারী বলে নয় মানুষ হিসেবেও আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সব অধিকার থাকা নিতান্ত বাঞ্ছনীয়। নারীকে হরেক মাত্রায় হেনস্তা করার অভিযোগ আপত্তিতে সভা সরগরম হয়ে ওঠে। শারীরিক আর পাশবিক নির্যাতনেরও শিকড় থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আবেদন স্পষ্ট করা হয়। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×