নারী অধিকার
মানুষ হিসেবে বিবেচনায় আনলে সমসংখ্যক নারীর অধিকার আর দাবির কোনো জায়গাই থাকে না। সমস্যাটা সেখানেই গভীরভাবে জিইয়ে আছে। নারীকে মানুষ ভাবতে না পারার চিরায়ত অপসংস্কার আজ অবধি ঘোচানো গেল না। আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নত বিশ্বেও শারীরিকভাবে কোমল আর নমনীয় নারীরা সমান তালে এগিয়ে চলতে না পারাও পরিস্থিতির দুর্বিপাক। অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষায় মৌলিক অধিকার প্রতিটি রাষ্ট্রের সর্ব মানুষের। সেখানে পাহাড় সম ব্যবধানে প্রাচীর তৈরি করা হয় শুধু মাত্র নারী বলে।
এমন অন্যায়, অবিচার নতুন সময়কেও আমলে নিচ্ছে না। সেখানে তারা দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সাবলীল আর নিয়ত দক্ষতায়। কোনো ধর্মীয় বিধানে নারী-পুরুষের তারতম্য কিংবা অধিকার রহিতের ওপর নির্দেশই দেওয়া নেই। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও পরস্পর পরস্পরের অলঙ্কার বলা হয়েছে। আর সামনে তোড়জোড় চলছে সনাতন ধর্মের দুর্গাপূজা নিয়ে দেবী দুর্গার আবাহন, অর্চনা। সেখানে নারীই শক্তির আধার। দুর্গতি নাশিনী দুর্গা থেকে শুরু করে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা চিরায়ত এই সনাতনী প্রথার যুগ-যুগান্তরের নির্মাল্য। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র।
সময় অসময়ে নারী নিপীড়ন, অধিকার হরণ, মান্যতা না দেওয়া সর্বোপরি প্রাণে মেরে ফেলার দুঃসহ, দুর্ঘটনা আজও হৃদয় কাঁপানোর মতো। তাই সব সময় বিভিন্ন নারী সংগঠন বাদ প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ন্যায্য দাবি আর সব ধরনের বঞ্চনার প্রতিপক্ষ হয়ে সোচ্চার হতে। বারবার এক দাবিই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সমঅধিকার দিতে হবে।
সম্প্রতি সংগঠন ‘নারী সংহতির’ পক্ষ থেকেও জোর আওয়াজ উঠেছে অধিকার কমিশনসহ ৭ দফা দাবি নিয়ে। জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণও ছিল নজর কাড়া। সমাজের গভীরতম ক্ষতস্থানে জড়ানো হরেক বিভাজনের নৃশংস আঁচড়। বৈষম্য শুধু বিত্ত, শ্রেণি, ধর্ম, মর্যাদা কিংবা বংশ পরিচয়েই নয় বরং সেখানে নারী-পুরুষের বিষদৃশ্য পার্থক্য পুরো সমাজে বিভেদের আঁচড় বসায়। অধিকারহীনতার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার রাজনীতিতে নারীর দৃশ্যমান অংশগ্রহণ আজও হাতেগোনার অবস্থায়। শুধু কি অধিকার?
নিরাপত্তাহীনতার বলয় কতখানি বিস্তৃত আর ক্ষত-বিক্ষত তা তো নিত্য সংবাদমাধ্যমের কষ্টকর খবর। নতুন করে বিভিন্ন কমিশনের সঙ্গে নারী অধিকার কমিশন গঠনের দাবি নিয়ে ‘নারী সংহতি’ ৭টি অধিকার আদায়ের প্রস্তাব ঘোষণা দিয়েছে। বৈষম্য থেকে সংস্কার কর্মসূচিতে আপামর জনগোষ্ঠীর যেমন সম্পৃক্ততা থাকা বাঞ্ছনীয়। একইভাবে নারী-পুরুষের সংস্কারের জালে আটকে পড়া বিভেদেরও আশু নিষ্পত্তি হওয়া সচেতন দায়বদ্ধতা। নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানামাত্রিক বৈষম্যের সুরাহা ছাড়াও অসাম্য-বৈপরীত্যের শিকার হওয়া নারীর সহজাত অধিকারও পূরণ করা ন্যায্যত, সঙ্গত। এর ব্যত্যয় সমাজ সংস্কারের যথার্থ শৃঙ্খলা ফেরানো আসলেই কঠিন।
প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং অধিকারের মাত্রায়ও যথার্থ দাবিদার। সেখানে সমাজ সংস্কার কিংবা ব্যক্তি মানুষের অকারণ, অযাচিত হস্তক্ষেপ আইনত, ধর্মত কারোর হাতে বর্তায়ই না। তবে কেন এই বিভেদ, পার্থক্য আর দৃষ্টিকটু ফারাক? যেসব দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেত্রীরা জোরেশোরে আবেদন জানাচ্ছেন তা সত্যিই বাঞ্ছনীয় এবং ন্যায্যতা দাবি করে। আগেই উল্লেখ করি প্রথম দাবিটাই নারী অধিকার কমিশন গঠন। পরবর্তীতে উল্লেখ করতে চাই ‘নারীর প্রতি বৈষম্য নিরোধক’ সিডও সনদের কয়েকটি পর্যায়। যা বহুবার উপস্থাপন করা সত্ত্বেও আজ অবধি ফলপ্রসূ হয়ইনি। সম্প্রতি আমরা পার করলাম বাংলাদেশে সিডও সনদ অনুমোদনের ৪০ বছর পূর্তি।
সেখানে সন্তানের অভিভাবকত্ব তো আছেই। সবচেয়ে বেশি করে আছে উত্তরাধিকার আইনে পিতার সম্পত্তির সমান অংশীদার না হওয়া। যা আজও ধনে নয় বরং মানে সংশ্লিষ্টদের চরম বিপর্যয়। শুধু কন্যা সন্তান হওয়ার কারণেই। বাবার সম্পত্তির ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হওয়া সমসংখ্যক নারীর জন্য বিরাট এক পাহাড় সময় অসম্মান। বিভিন্ন প্রতিবেদনই নয় বরং জীবনের সাংসারিক, ব্যক্তিগত আচরণে দৃষ্টিনন্দনভাবে উঠে আসে পিতার সঙ্গে কন্যার গভীর হৃদ্যতা। আর জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে পুত্রের একটু বেশি পক্ষপাতিত্ব। সেই বাবাই তার আদরের কন্যাকে নিজের সম্পত্তিতে আজও কেন সমান অংশীদারিত্ব দিতে পারলেন না? স্বইচ্ছায় দেওয়াও যায়। সেটা একমাত্র পিতার হাতেই।
সরকারও অভিন্ন পারিবারিক আইন করে তার সংস্কারও করতে পারেন। নারী সংহতির আরও এক দাবি উল্লেখ করার মতো। শারীরিক মানসিক হেনস্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেল গঠনই শুধু নয় সময়মতো যথার্থভাবে কার্যকরীও করা। যাতে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে সামনে বেগ পেতে না হয়।
অপরাজিতা প্রতিবেদক