ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

কন্যাশিশু দিবস

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কন্যাশিশু দিবস

কন্যাশিশু দিবস

কন্যাশিশুকে ‘পরিবারের আলো’ হিসেবে চিহ্নিত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবসকে স্বাগত অভিনন্দিত করা হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেখানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফাওজিয়া মোসলেম দিবসটির গুরুত্ব বিবেচনায় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে জাতিসংঘের শিশু সনদ আইনে বাংলাদেশের অনুমোদন সাপেক্ষে স্বাক্ষর করা আছে। যেখানে পুত্র-কন্যার ভেদাভেদই করা হয়নি।

প্রত্যেক শিশুই সমঅধিকারের ভিত্তিতে প্রাপ্য সব অধিকার, স্বাধীনতা পেতে কোনো তারতম্যের শিকারই হবে না। কিন্তু সমাজ সংস্কারের প্রচলিত বিধি-বিধান, আইন-কানুন যেন অনেক কিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। যার কোনো যৌক্তিক কিংবা আইনত, ধর্মত, কোনো ব্যবধানই স্বীকৃতি পায়নি। একজন শিশুকে যদি শিশু হিসেবেই মূল্যায়ন করা যায় তা হলে বিবাদমান কোনো অসম পরিস্থিতি সামনেই আসে না। পুত্র-কন্যা শিশু জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার প্রাক্কালেই কেমন করে যেন সূক্ষ্ম ব্যবধান থেকে বৃহাদাকার বৃত্তে পরিণত হয় তাও চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থার চরম বিভাজন। শুধু কি বাংলাদেশ?

না বিশ্বের সর্বত্র এমন তারতম্যে কন্যা শিশুর যে অবজ্ঞা-অবহেলা সেটা কি আসলে প্রতিরোধযোগ্য? সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে নিত্য নতুন নীতি নৈতিকতা প্রণয়ন করছে সেটাও যে খুব কার্যকরী হচ্ছে তা নয়। প্রচলিত সংস্কার, বিশ্বাস, মূল্যবোধ সামাজিক কাঠামোর গভীরতম স্থানে শিকড় থেকে সুগ্রথিত। যেখানে অসাম্য, বৈষম্যও মাথাচাড়া দিতে সময় নেয় না। প্রচলিত মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণ চলে আসা দীর্ঘকালীন সংস্কারকে মুছে ফেলতে যুগ-যুগান্তরের অপেক্ষার পালাও যেন শেষ হয় না। সঙ্গত কারণে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে দাঁড়িয়েও আমাদের লিঙ্গ সমতার জন্য জোরেশোরে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। 

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম একজন চিকিৎসকের জায়গা থেকে কন্যা শিশুদের জন্য আরও কিছু অধিকার, ন্যায্যতার প্রতি বিশেষ নজর দিতে সুপারিশ করেন। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের স্পর্শকাতর সময়ে এক উদীয়মান কিশোরীর স্বাস্থ্য সচেতনতা তার সব ধরনের নিরাপত্তার জন্য জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। বাল্যবিয়ের মতো মান্ধাতা আমলের প্রচলিত অপসংস্কারকে জোরেশোরে প্রতিরোধ করা কন্যা শিশুর শরীর-মনের জন্য নিতান্ত দায়বদ্ধতা। যা সবার আগে পরিবার থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয়।

আর কন্যা শিশুর ওপর কোনো ধরনের সহিংস আঁচড় বিধিগতভাবে শুধু প্রতিরোধ নয় বাতিলের পর্যায়ে নিয়ে আসা পরিস্থিতির ন্যায্যতা। পারিবারিক দায়বদ্ধতার পরবর্তী পর্যায়ে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বলয় নিশ্চিত করা। যা সম্মিলিত এক মহা কর্মযোগ। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে নৃশংসভাবে উঠে আসে একজন কন্যা শিশুর নাকি তার নিজ পারিবারিক পরিবেশেও নিরাপত্তার বেষ্টনী পেতে হিমশিম খেতে হয়। আর উত্তরাধিকার আইনে পিতার সম্পত্তিতে সম অধিকার না পাওয়া ও কন্যা শিশুর জন্য আর এক বৈমাত্রেয় বিভাজন তো বটেই।

যাকে কোনোভাবেই সমতার বাতাবরণে আজ অবধি আনাই গেল না। সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তান সব সময় আদৃত হয়ে পরিবারে আসে না। নিজ পিতৃগৃহেই তার জন্মটাই হয়ে যায় যেন আজন্মের পাপ। সেখানে জন্মদাত্রী জননীও সমাদৃত না হওয়ার দৃশ্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ডা. ফাওজিয়া প্রশ্ন তোলেন অত্যন্ত যৌক্তিক আর প্রাসঙ্গিকভাবে কন্যা সন্তানই যদি অনাদৃত হয় তা হলে পুত্রকেই বা গর্ভে ধারণ করবেন কে? শুধু কি জন্মদান? লালন পালন থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত কত কিছুই সর্বংসহা জননীকেই নিজের মধ্যেই ধারণ করতে হয়। প্রকৃতিই নির্ধারণ করে জীবনচক্রের জন্য পুত্র-কন্যা উভয়েই জরুরি ও অত্যাবশ্যক। কাউকে ছোট কিংবা হেয় করার কোনো সুযোগই নেই। 
বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিবেদনে স্পষ্টতই উঠে আসছে মায়ের গর্ভ থেকেই কন্যা শিশু কেমন যেন অবস্থায় বাড়তে থাকে। আর জীবনভর তেমন তারতম্য মেনে ও মানিয়ে নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া অত সহজসাধ্য নয়। তবে কন্যা আর পুত্র শিশুর বিভাজন যতই প্রকট আর অপ্রাসঙ্গিক হোক না কেন বর্তমানে নারী সমাজ নিজেদের দক্ষতায় কৃতিত্বে সব ভেদাভেদ পেছনে ফেলে পারিবারিক যত বিপন্নতা সেখানে পরের সন্তানও যদি সমাজে নিজের যথার্থ আসন অলঙ্কৃত করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্নভাবে দৃশ্যমান হয় প্রথম কন্যা সন্তানের জন্মে কন্যা হয় তেমন দুর্গতি সামলানো মায়ের জন্যও কঠিন হয়ে পড়ে। মা কন্যা সন্তানের সম্পর্কেও নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব, আপত্তি, অভিযোগ যেন ভেতরের বোধে দানা বাঁধতে থাকে।

পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হয়। কন্যা ও মাতা দুজনেই হীনম্মন্যতায় ভোগেন। বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তেমন করুণ চিত্র উঠে আসতে সময় লাগে না। আরও এক ভয়াবহ ভ্রƒণ হত্যা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে বিষাদঘন করে তোলে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে নিত্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে গর্ভে থাকা শিশুটির পরিচয় জানা যায়। শ্বশুরবাড়িতে যদি কোনো সময় তা প্রকাশ হয়ে পড়ে নতুন প্রজন্ম যে আসছে সে মেয়ে। তা হলে তো কথাই নেই। গর্ভপাতের হুকুম জারি হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। সেখানে স্বামী, শাশুড়ি, ননদ, দেবর সবাই সম্মিলিতভাবে জড়িত থাকার করুণ দৃশ্যও গণমাধ্যমের সংবাদ হয়।

তবে যেখানে কন্যা শিশু অপেক্ষাকৃত অনাদর, অবহেলায় গড়ে উঠেও নিজেকে সমাজের একজন যথার্থ নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে বেগ পাচ্ছে না। সেখানেই তো সে অপরাজেয় এক রমণীয়, কমনীয় সত্তা, সমাজে নিয়তই দৃশ্যমান সমসংখ্যক নারী আজ তাদের যে কোনো অবস্থানে নিজের আসন অলঙ্কৃত করে যাচ্ছে। শুধু জ্ঞানে, গরিমায় নয় বরং নানামাত্রিক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে দুরন্তগতিতে নারীদের পদচারণায়। 

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×