ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সন্তানের মাঝেই নিজের স্বপ্ন দেখেন আলেয়া

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সন্তানের মাঝেই নিজের স্বপ্ন দেখেন আলেয়া

দেশের মানুষের সেবা করার স্বপ্ন ছিল আলেয়া খাতুনের

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের মানুষের সেবা করার স্বপ্ন ছিল আলেয়া খাতুনের। কিন্তু বাল্যবিয়ের কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি। তবে থেমে যায়নি তার স্বপ্ন। তাই সন্তানদের নিয়ে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন তিনি। এক মেয়ে বিসিএস ক্যাডার। আরেকজন পড়ছেন ডাক্তারি। নিজে ব্যবসা করেন। সব মিলিয়ে আলেয়া খাতুন লাভলী তার স্বপ্ন পূরণ করছেন।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর শহরে গণেশপুরে তার টিনসেডের একটি বাসাতে তার বসবাস। ১৯৭৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে তিনি। সেই সময় বিয়ে হয়ে যায় তার। স্বামী আব্দুস সামাদ কৃষি অফিসের প্রধান অফিস সহকারী। নিজের অদম্য ইচ্ছা আর স্বামীর সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকেন। পরবর্র্তীতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েন তিনি।

নিজের লুকায়িত স্বপ্নকে বাস্তবায়নে ২০০০ সালে ছোট মেয়ের নামে মোনালিসা সিল্ক সেন্টার শুরু করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তিনি গুণীজন হিসেবে সম্মাননাও পেয়েছেন।  তার বড় মেয়ে উম্মে হাবিবা সাথী ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে কৃষি অধিদপ্তরে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

২য় মেয়ে আসমাউল হুসনা মোনালিসা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসের শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। মেজ মেয়ে উম্মে মুক্তা ডিগ্রি পাস করার পর ২০১২ সালে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
আলেয়া খাতুন প্রসঙ্গে স্বামী আব্দুস সামাদ বলেন, সন্তান মানুষ করতে গিয়ে আর পড়ালেখা করতে পারেনি। তবে সন্তানের পেছনে সব সময় লেগেছিল সে। যার কারণে মেয়েরা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
আলেয়া খাতুন লাভলী বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে দেশ ও মানুষের সেবা করার। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে দমে যাইনি কখনো। আমার স্বপ্ন আমি সন্তানের মাঝে দেখেছি। সেই স্বপ্ন পূরণে দিনরাত ছুটেছি। যার কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমাদের ছেলে-সন্তান নেই। আমরা মেয়েদের মানুষের মতো গড়ে তুলেছি। ছেলে-সন্তানের কোনো অভাব বোধ করি না। বড় মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। সে কৃষি অধিদপ্তরে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মেয়ের স্বামী ড. সোহেল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে আছেন। 
ছোট মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে। এবারে শেষ বর্ষে আছে। তারা দুজনেই দেশের কল্যাণে আর মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আমি তাতেই খুশি। আমি চাই সন্তানরা সমাজ ও দেশের কাজে এসে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকুক। নিজের আলোয় সমাজকে ও মানুষকে আলোকিত করুক।

×