ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

নারী শ্রমিক

বঞ্চনার অবসান হোক

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২৮, ৩০ আগস্ট ২০২৪

বঞ্চনার অবসান হোক

উন্নয়নশীল দেশের শ্রমশক্তি এক বিরাট টেকসই উপাদান

যে কোনো অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের শ্রমশক্তি এক বিরাট টেকসই উপাদান। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ আর পোশাক শিল্প কারখানায় নারী শ্রমিকের দৃশ্যমান কর্মযোগ দেশের সম্ভাবনাময় বলয়। তবে সমসংখ্যক নারীর যেমন পশ্চাদবর্তিতা, নিপীড়ন আর বঞ্চনার করুণ কাহিনী তাও প্রাতিষ্ঠানিক এক চরম নিগ্রহ। সমাজে নারী পুরুষের শ্রমশক্তির যে অনবচ্ছেদ পালাক্রম তাও কঠিন বাস্তবতার নিঃশর্ত অবদান।

তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প বিপ্লব নতুন বিশ^ উপহার দেয় প্রযুক্তির নবতর অভিগমনে। কিন্তু মূল শ্রম বিনিয়োগ শক্তি অতি সাধারণ মানুষ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস সেই পুরাকালের। শুধু শ্রমিক-মালিকের দ্বন্দ্ব নয় পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্যও যে কতখানি বিস্তৃত আর অপরিণামদর্শিতায় আটকানো সেটা ভয়ংকর এবং হতাশাব্যঞ্জক।

বিত্ত আর নির্বিত্তের ফারাকে সমাজে যে শ্রেণিবিন্যাস সেটা পুরনো দাস সভ্যতার যুগ থেকে আজ অবধি চলমান এক বেসামাল পরিস্থিতি। আধুনিক প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়া বিশ^ তেমন তারতম্যকে আরও লাগামহীন করে দিচ্ছে বলে সমাজ বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের হরেক মতবাদে বিধৃত। আবার সেখানে নারী পুরুষের চরম বিভেদ ও প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সুতীব্র দাবানল।

শ্রম মজুরিতে যথার্থ পাওনার অধিকারহীন গোষ্ঠী আন্দোলন সংগ্রামে যতই আস্ফালন করুক উপরে বসা মালিক পক্ষ তাতে কর্ণপাতও করে না। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত কোমল ও পিছিয়ে পড়া নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেই গৃহের ক্ষুদ্রতম আঙিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমের যে অসহনীয় দুর্বিপাক তাও এক লড়াকু কর্মজীবনের সীমাহীন যাতনা। 
সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের যা সবচেয়ে বড় অন্তরায়। এটা শুধু বাংলাদেশের নয় সারা বিশে^ নারী শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ইতিহাসের এক নিকৃষ্টতম অধ্যায়। এমনিতে সব শ্রমিকই তার ন্যায্য অধিকার থেকে প্রায়ই বঞ্চিত। সেখানে নারী শ্রমিকরা তো পূর্ণ বঞ্চিত বলে ধারণা করা হয়।

শুধু শ্রম অধিকারে পেছনে পড়া নয় নারী হিসেবে মানসম্মানের যে পেষণ, নিপীড়ন তা বর্ণনার মতো থাকেও না। তার ওপর পুরুষ শ্রমিকের বেতন আর নারী শ্রমিকের মজুরি কোনোভাবেই এক হিসেবে বিবেচিত হয়ই না। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও নারীর জন্য বৈষম্যহীন সিডও সনদ কোনোভাবেই এমন সব অধিকারহীনতাকে মান্যতা দেয়ইনি।

কোনো কিছুকে তোয়াক্কা পর্যন্ত করে না বিত্তবান মালিক পক্ষ। সবচাইতে আরও এক অন্তজর্¦ালা সত্যিই বেদনাদায়ক। শ্রমিক কিংবা নারী শ্রমিকরা বুঝতেই পারে না পর্যন্ত তারা প্রতিনিয়ত কত বঞ্চনা আর ন্যায্য পাওনা থেকে দূরে থাকছে। যে কোনো উন্নয়ন অগ্রগামিতায় শ্রমিকদের জোরালো অংশগ্রহণ সেটা কায়িক কিংবা মানসিক শ্রম যাই হোক না কেন নিরবচ্ছিন্ন এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

সেখানে পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় নারীর মজুরি আয় অপেক্ষাকৃত কম। তবে শ্রমঘণ্টা, ধরন কোনো কিছুতে বিন্দুমাত্র ফারাক নেই কিন্তু মজুরি পার্থক্য আসলেই বোধগম্যের বাইরে। আমরা যদি গৃহ নারী কর্মী নিয়ে আলোকপাত করতে চাই সেখানেও তাদের শ্রমের যে যাত্রা তা হিসাব-নিকাশেও কুলায় না। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে মাঝরাতে ঘুমাতে যাওয়া অমানবিকতার চরম নিদর্শন।

এমনও দেখা যায় গৃহকর্মী কন্যা শিশুটির বয়স দশ। সেখানে গৃহকর্ত্রীর ১০ বছরের সন্তানকে তার দেখভালের দায়দায়িত্ব নিতে হয়। অসহনীয় এক কর্ম যন্ত্রণা তো বটেই। নীরবে, নিঃশব্দে মুখ বুজে সহ্য করাটাও তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এর বাইরে অন্য কোনো জগত তাদের কল্পনার অতীত। নারী শ্রমিকদের দুর্গতিও সেভাবে বর্ণনাই আসে না। বিশেষ করে দালান, কোঠা, রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণেও নারী শ্রমিকের দৃশ্যমান অংশগ্রহণ পরিস্থিতির অনিবার্যতা।

সেখানে অকারণে অপ্রয়োজনে বেতন কম ধার্য করা অমানবিক বিবেকহীনতার শামিল। পুরুষ সহকর্মীর মতো মাথায় ইট, বালুর ঝাঁকা বহন করতে হয় তাকেও। শক্ত ইটকে ভাঙতেও দেখা যায় নারী নির্মাণ শ্রমিকদের। মাথায় করে যখন অনেক শিশু বালি, সিমেন্ট, ইটের গুঁড়া ইত্যাদি নিয়ে যায় সেখানে কন্যা শিশুও তাদের সাধ্যমতো শ্রম দিয়ে নিত্যনতুন অবকাঠামো তৈরিতে প্রাসঙ্গিক ও যুগোপযোগী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

কিন্তু তাদের প্রাপ্য মজুরির বেলায় কেন এমন কাটছাঁট, হীনম্মন্যতা? সেটা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অজানা এক বিস্ময় আর যন্ত্রণা। একজন নারী শ্রমিক শুধু কি তার কর্মজগত সামলায়? নিজের পারিবারিক আঙিনাও তাকে ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে কাজে আসতে হয়। সেখানে যদি বয়োবৃদ্ধ আর শিশুরা থাকে সব দিক বিবেচনায় রেখে নারী শ্রমিক তার বাসা থেকে বের হয়ে কর্মসংস্থানে যেতে হয়। সেখানেও সর্বক্ষণ হাড় ভাঙা খাটুনি।

বিরাম, বিরতি কিংবা বিশ্রামের সুযোগ পর্যন্ত নেই। অনেক গৃহকর্ত্রী শুধু গৃহিণীই নন তিনি একজন ব্যস্ততম কর্মজীবীও হয়ে থাকেন। সেটা আরও বেদনাদায়ক আর নির্মম। সংসারের সামান্য ক্ষতির দামও গুনতে হয় কর্তা বাবুটিকে নয় কর্মজীবী গৃহিণীকেই। 

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×