ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

মাগুরার পাখা পল্লী

সঞ্জয় রায় চৌধুরী

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ৫ জুলাই ২০২৪

মাগুরার পাখা পল্লী

গরম পড়ায় মাগুরার পাখাপল্লী বর্তমানে সরগরম

গরম পড়ায় মাগুরার পাখাপল্লী বর্তমানে সরগরম। তালের হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত মহিলা শিল্পীরা। তাদের এক মুহূর্ত অবসর নেই। মাগুরার তৈরি তালের হাতপাখা দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান যাচ্ছে। ফলে দুই শতাধিক পরিবারের মৌসুমী কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা তালের হাতপাখা তৈরি করেন তাদের অধিকাংশ মহিলা। পাখা শিল্পীরা জানান, মাগুরার শিবরামপুর, নিজনান্দুয়ালী, সংকজখালী, আড়পাড়া, বিনোদপুর, পারিয়াট, ধনেশ্বরগাতি প্রভৃতি গ্রামে তালের হাতপাখা তৈরি হয়।

এসব গ্রামে দুই শতাধিক পরিবার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। যারা তালের হাতপাখা তৈরি করেন তাদের অধিকাংশ মহিলা। প্রথমে তালপাতা কেটে রোদে শুকিয়ে সুতা দিয়ে বাঁশের শলাকা দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় তালের হাতপাথা। তার রং করা হয় সুন্দরের জন্য। ফাল্গুন মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাখার মৌসুম। একজন শিল্পী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০/৬০টি পাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ পড়ে গড়ে ৩০ টাকা বিক্রি হয় ৫০/ ৬০টাকা।

অন্য জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে পাখা ক্রয় করে নিয়ে যায়। মাগুরা পাখার মোকামে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে গরম পড়ায় পাখা তৈরির মহিলা শিল্পীদের এত মুহূর্ত বসার সময় নেই। 
পাখাশিল্পীদের বেশিরভাগ মহিলা। তারা দৈনিক ৩/৪ শত টাকা আয় করে থাকেন। মহিলা পাখা শিল্পীরা জানান, বর্তমানে তালের পাতার সংকট রয়েছে। প্রতিটি তালপাতা ১০/২০ টাকা করে ক্রয় করে আনতে হয়। এর পর কেটে রেদে শুকাতে হয়। তারপর বাঁশের শলাকা, সুতা ও রং দিয়ে খরচ পড়ে ৩০ টাকা। প্রতিটি পাখা ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। প্রতিটি পাখায় ২০ টাকা লাভ থাকে। গরম পড়লে তাদের কাজ বেড়ে যায়। ফাল্গুন মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাখার মৌসুম। মাগুরার মহিলা পাখা শিল্পীরা জানান, সংসারের কাজের ফাঁকে তারা এই কাজ করেন। যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যয় ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়ার কাজে ব্যয় হয়।

ফলে সংসারের কর্তাদের ওপর চাপ কম পড়ে। ফলে পাখার নিখুঁত কাজের সঙ্গে মহিলা পাখা শিল্পীদের ভাগ্যের পরিবর্তনও হচ্ছে। শহরের বড় বড় লোকের বাড়িতে গৃহসজ্জার জন্য যে পাখা সোভা পায় মাগুরার গ্রামের পাকা শিল্পীদের নিখুঁত কাজ। পাখা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে পাখা তৈরির পাতার সহজলব্যতা থাকলেও বর্তমানে তালপাতার চরম সংকট পাকাশিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে। তারপরও তারা এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন। বাজারে পাখার ব্যাপক কদর থাকায় শিল্পীদের এ বছর লাভ বেশ হয়েছে। তারপর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

শহরে তালের হাতপাখার চাহিদা কম হরেও গ্রাম এলাকায় হাতপাখার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এখনো তালের হাতপাখা দেখা যায়। ফলে হাতপাখার কদর এখানো কমেনি। তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তারপরও পরিকল্পনার মাধ্যমে পাখা শিল্পীদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তারা পরিবারের বাড়তি একটু আয়ের আশায় এই পেশাকে তাদের আসল পেশা মনে করে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে পারিবারে কিছুটা হলেও মৌসুমী কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গ্রামের অসহায় দরিদ্র মহিলা পাখা শিল্পীরা কারও কোনো প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই এগিয়ে চলেছে। যার কারণে মাগুরার তালের হাতপাখার শিল্পীরা এখানো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

×