ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

শিক্ষক ও রন্ধন শিল্পী সাবিনা 

প্রকাশিত: ০১:২০, ২৮ জুন ২০২৪

শিক্ষক ও রন্ধন শিল্পী সাবিনা 

শিক্ষক ও রন্ধন শিল্পী সাবিনা 

বাংলাদেশে সমসংখ্যক নারীদের দৃষ্টিনন্দন এগিয়ে চলা যেন আধুনিক সময়ের পরম নির্মাল্য। নারী শিক্ষা অবারিত হয় গত শতকের শেষ দুই দশকে। তারও আগে নারীদের শিক্ষা ভাবনায় নতুন সময়ের চাহিদা সেভাবে অবারিত না হলেও লেখাপড়া শিখতে বালিকা থেকে কিশোরীরা এগিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকতেন। কেউবা পারিবারিক  নির্মল আবহে কিংবা ব্যক্তিগত মেধা আর উদ্যোগে নিজের শিক্ষার বলয়কে এগিয়ে নিতে নিবেদিত হওয়ার কাহিনীও প্রচলিত আখ্যান।

আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সোনার ও স্মার্ট বাংলাদেশের দারুণ অভিগামিতায় শুধু শিক্ষা নয় বৈচিত্র্যময় পেশাকেও ধারণ-লালন করতে আর পশ্চাৎমুখী হয়নি এই শতকের নারী সমাজ। সুশিক্ষিত নারীরা শিক্ষক এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের সমর্পণ করাও সময়ের অনিবার্যতা। আর প্রযুক্তির স্মার্ট বাংলাদেশ যখন পরম অগ্রগামিতায় সম্মুখ পানে ছুটছে সেখানে নারীদের সম্মানজনক পেশায় আরও কত বৈশিষ্ট্য পূর্ণতা পেয়েছে তাও নিত্যনতুন অভিযোজন।

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আসন অলঙ্কৃত করে নিজেদের যোগ্যতম প্রমাণ করে যাচ্ছেন। আবার নতুন পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন চিরায়ত রান্নাবান্নার আয়োজন। এখানে শুধু সকাল, দুপুর আর রাতের সুস্বাদু আহার সরঞ্জাম নয় বরং তাকে শিল্পসম্মত মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে নারীদের যে পেশাগত অপার বিস্ময় তাও বর্তমান শতকের দুই দশককে মাতিয়েই দিচ্ছে।

রান্না এখন শুধু গৃহকোণের, গৃহিণীর আহারের সম্ভার নয় সেখানে নতুন সময়ের আবেদনের অভিযোজন রন্ধন শিল্প। শিল্পই বটে। পাকা রাঁধুনির হাতের পঞ্চব্যঞ্জনের স্বাদ আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে। সেখান থেকে যখন তেমন সুস্বাদু আহার ছোট্ট গৃহকোণে থেকে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় সম্প্রসারিত তার দামও অমূল্য বিস্তৃত। 
যাকে নিয়ে এমন গল্প কাহিনীর অবতারণা তিনি সাবিনা ইয়াছমিন। একাধারে শিক্ষক।

আর এক অনন্য মহিমায় রন্ধন শিল্পীর আসনে পরিতৃপ্ত। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে শিক্ষকতার পেশায় নিবেদিত হয়েও রন্ধন শিল্পের প্রতি আগ্রহ, নিবেদনে কোনো বরমাল্য প্রভাবকের কাজ করে? নিজেই সাবলিলভাবে উপস্থাপন করলেনÑ তার এগিয়ে চলার গল্প কথা।
পিতা সাদেক আলী আকন্দ ও মাতা আশরাফুন নাহারের দুই সন্তানের একজন সাবিনা আর ছোটজন একমাত্র ভাই। পাহাড় ও সমুদ্র পরিবেষ্টিত চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে ওঠা সপরিবারে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেন। পরবর্তীতে বিএড ও এমএড সম্পন্ন করলেন রয়েল ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে। সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন সাবিনা অতি বাল্যকাল থেকেই নাচ, গান, অভিনয়, মডেলিং করা পছন্দ করতেন।

সঙ্গত কারণে অনেক বিষয়ে প্রাথমিক  চর্চা অভিজ্ঞতা সবই নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারা এক অনন্য নান্দনিকবোধি সত্তা। তার চেয়ে বেশি করে বলতে চেয়েছে জন্মদাত্রী, স্নেহময়ী মাতার অভাবনীয় স্নেহাতিশয্য এবং রন্ধন কারুকার্যের বাহারি স্বাদ। আজও জিহ্বায় লেগে আছে বলে উচ্ছ্বসিত হলেন সাবিনা। শুধু কি তাই? এগিয়ে চলার হরেক যাত্রাপথে মায়ের বুদ্ধি, পরামর্শ, উপদেশ, অনুপ্রেরণা কিভাবে জীবন পথে সার্বক্ষণিক অনুষঙ্গ হয় সত্যিই মুগ্ধতার বিস্ময়।

সর্বংসহা জননীকে নিয়ে বলার যেন কোনো শেষ পরিশেষই নেই। আনুকূল্যের বৃহৎ আঁধার মার হাতের রান্নার যেমন ঘর থেকেই আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রশংসিত একইভাবে পরিশ্রমী, আধুনিক চিন্তার মানুষ হিসেবেও মায়ের তুলনা মা নিজেই। সত্যিই ত্রিভুবনে মায়ের উপমা মেলা ভার। তিনি যেন নিজেই তার যথার্থ তুলনা। 
তার মধ্যে ঘটে যায় জীবনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ। কনের সাজে বিয়ের জমজমাট আয়োজনে আরেক মানুষের ঘরণী বনে যাওয়া। সেটাও যেন জীবনের অনন্য প্রাপ্তি। ¯œাতক (সম্মান) পরীক্ষার পরপরই ছন্দ পতনের নতুন আর এক আবহ, আবেদনও বটে। স্বামী একজন সামরিক কর্মকর্তা। স্বামীর বদলির চাকরি। তাই পেশাগত কারণে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘুরতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সঙ্গে জীবন বোধ আর চেতনায় এসেছে বিভিন্ন সংস্কৃতির নানামাত্রিক ভাব সম্ভার। পরিপূর্ণ আর পরিতৃপ্তও হয়েছেন। তবে অসমাপ্ত শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেন যুগলবন্দি হওয়ার পরই। সঙ্গত কারণে স্বামীর অপার সাহায্য সহযোগিতাও দাম্পত্য জীবনের হরেক কর্মযজ্ঞের অনুষঙ্গ হয়েছে। স্বামীর পেশার কারণে সাভার সেনানিবাসের ‘মর্নিং গ্লোরি স্কুলে’ শিক্ষক হিসেবে যোগদান পেশাগত জীবনের পরম অভিষেক। আনন্দ আবেগে নিজেকে সমর্পণ করাও এক অনন্য পালাবদল।

শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক চলমান জীবনের যেন সুসংহত ধারাবাহিক কর্মযোগ। পরবর্তীতে আরও কয়েক বিদ্যালয়ে যোগদান করার সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন শেষ অবধি আছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে।
সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও এক পেশার অনন্য যাত্রা। রন্ধন শিল্পীর উদ্যোক্তার কাতারে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মহান লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। দুই কন্যা সন্তানের মাতা সাবিনা সন্তানদের পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদায় বড় করতে চান। কোনো লিঙ্গবৈষম্য সামনে যেন পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে।
মায়ের হাতের রান্নার অভাবনীয় স্বাদ আজও যেন রুচিবোধে জিইয়ে আছে। শুরুতেই উল্লেখ করা হয় সাবিনার মায়ের হাতের মুখরোচক রান্নার স্বাদ। আত্মীয় স্বজনকে পরম তৃপ্তি দিত। বিশেষ করে বিরিয়ানি, ডেজার্ট ও কেকের দর্শনীয় সুস্বাদু রান্না মায়ের কাছ থেকেই আয়ত্ত করেছেন বলে জানান। সাবিনারও অনলাইন পেজে ডেজার্ট, বিরিয়ানি ও কেকের বিকিকিনি আছে, যার নাম ‘Cake Superior’। আগ্রহী ক্রেতারা যোগাযোগ করতে পারেন। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×