![বায়ুদূষণে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বায়ুদূষণে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/oprajita-1-2406271918.jpg)
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে
‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ এমন চিরায়ত নান্দনিক প্রবাদবাক্য চিরস্থায়ী মাতৃত্বের অনবদ্য শৌর্য। মায়ের কোল যেমন শিশুর সর্বাধিক নিরাপত্তার বলয় একইভাবে একজন মাও পরিতৃপ্ত হন তার মাতৃত্বের মহিমান্বিত রূপে। তা যেন যুগ যুগান্তরের পরম ও আবশ্যিক নির্মাল্য। এর ব্যত্যয় যেমন মাতৃত্বকে কষাঘাত করে একইভাবে শিশুসন্তানটিও হয় শুধু অনাদরেরই নয় হরেক বিপত্তির ও চরম আকালের আবর্তে। এটাই বিশ্ব সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে সেই গুহাবাসী জীবনে আজ অবধি আধুনিক প্রযুক্তির বলয়কেও চিরন্তন এক সৌন্দর্যের বহমান ধারাকে নিয়তই এগিয়ে দিচ্ছে।
মা-সন্তানের নিবিড় সম্পর্কের অনবদ্য দ্যোতনায় যেন ভর করে শিশুটির অতীত, বর্তমান এমনকি ভবিষ্যৎও। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক গবেষণা প্রতিবেদনে যা দৃশ্যমান হয় সেখানে মায়ের সঙ্গে শিশুর অবিচ্ছেদ্যতাও এক আলোচিত বিষয়। বায়ুদূষণের ওপর ইউনিসেফ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু সন্তানরা। গভীরভাবে অনুধাবনের বিষয় তো বটেই। সঙ্গত কারণে সামনে এসে যান জন্মদাত্রী জননীও।
কারণ মাতৃগর্ভ থেকেই এমন বায়ু দূষিত আবহ জঠরে বেড়ে ওঠা শিশুটির ওপর দারুণ প্রভাব তৈরি করে। কম ওজন ছাড়াও ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই হাঁপানি কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অতি শৈশব থেকেই রোগাক্রান্ত হতে সময় লাগে না। যেখানে মাতৃগর্ভ থেকেই এমন দুঃসময় শিশুদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে সেখানে মাকেই সতর্ক সাবধানতায় শিশুর পরিচর্যা অবধারিত এক প্রাত্যহিক কর্মপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা সন্তানের জন্যই অপরিহার্য। শুধু একজন মায়ের শিশু সন্তান? নাকি আগামীর বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের প্রাণহানি সংক্রান্ত এক চরম উদ্বেগ, শঙ্কার অশনিসংকেত?
আজকের শিশু আগামীর বাংলাদেশের নতুন যোদ্ধা, অনন্য কারিগর। তারাই যদি সামগ্রিক নিরাপত্তার বলয়ে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার জীবন সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে গড়ে নিতে পদে পদে হোঁচট খায় তাহলে আধুনিক ও প্রযুক্তির স্মার্ট বাংলাদেশ কোন অবস্থানে দাঁড়াবে? প্রশ্ন থেকেই যায়। যেহেতু এমন বিষময় পরিবেশ মাতৃগর্ভ থেকেই শুরু হয়ে যায় তার জন্য প্রয়োজন সন্তান সম্ভবা মায়ের জন্যই এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিশীলিত, স্বাস্থ্যকর স্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতি। এখানে সাবধান বাণী এসেছে রান্নাঘরের হরেক জ্বালানির মধ্যে এমন ক্ষতিকারক দূষণজনিত দাহ্যশঙ্কা থেকেই যায়।
সে কারণে মায়েরই সচেতন সতর্কে নিজের সন্তান ধারণ করার সুসময়কে আগলে রাখতে হবে। রান্নাঘরে ক্ষতিকারক জ্বালানির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা পরিস্থিতিরই ন্যায্যতা। আমরা জানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যে জীবাশ্ম বাতাসে নিঃসরণ করে তাতে পরিবেশ দূষণ এক আশঙ্কিত বিষয়। সেই ১৭৬০ সালের ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব সারা বিশ্বকে আধুনিকতার বরমাল্য দিয়ে নতুন জগতের এক দ্বার উন্মোচন করে। তার বিপরীত দাবানল অনুধাবন করতে বিশ্বকে আরও এক শতক অপেক্ষমাণ থাকতে হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বায়ু দূষণের ক্ষতিকারক উপাদান নিয়ে সোচ্চার হলেও তেমন দুর্ভোগ দুর্গতি কমার পরিবর্তে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। বাংলাদেশ নাকি জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার করেও ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে অনেক বেশি। তবে এমন সব আতঙ্কিত প্রতিবেশকে সামলাতে সবার আগে নাকি মায়ের নিরাপদ আর নিঃশঙ্ক জীবন অবধারিত।
সেই অতি পুরনো দুর্যোগ বাল্যবিয়ে আর অকাল মাতৃত্বের কারণেই নাকি গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ার পর অবধিও এমন অতিদূষণের কবলে আবর্তিত হয়ে শেষ পর্যন্ত মরণ ছোবলকেও আলিঙ্গন করতে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে। প্রথমেই একজন মাকেই তার শরীর ও মনের স্বাভাবিক ন্যায্যতায় বিয়ের পিঁড়ি এবং মাতৃত্বের আঙিনায় প্রবেশ করা বিজ্ঞানভিত্তিক বিধিই শুধু নয় বরং সমাজ সংস্কারের নিরবচ্ছিন্ন দূষণবিহীন পরিবেশও অপরিহার্য।
যা মা ও সন্তানকে এক অবিচ্ছিন্ন সুস্থ ন্যায়সঙ্গত প্রতিবেশকে যেন নিয়ামকের অবস্থায় নিয়ে যেতে পিছু হটতে না হয়। মা এবং পারিপার্শ্বিক প্রত্যেককেই জানা-বুঝা অতি আবশ্যক মা হওয়ার জন্য মাতৃত্বের যে অবধারিত অবগাহন সেটা তার জন্য কতখানি উপযোগী কিংবা মা সন্তান গর্ভধারণ এবং জন্মদানে কি মাত্রায় সক্ষম? মাকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হলে আগত শিশুও আগামীর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বেষ্টনী কিভাবে অবারিত হবে সেটাই এখন ভাবা পরিবার থেকে সমাজ সবক্ষেত্রে জরুরি এবং অত্যাবশ্যক।
জাতির আগামীর ভবিষ্যতে জীবন-স্বাস্থ্য যেন নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঢেকে যায়। এর জন্য যা যা অপরিহার্য সবটাই করে যেতে হবে সম্মিলিত বোধে। প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে ২০২১ সালে সারা বিশ্বে বায়ু দূষিতকরণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৭ লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে অপুষ্টি আর বায়ু দূষণের ওপর কড়া নজরদারি করতে পরামর্শও আসে। অপুষ্টিজনিত শিশুর জন্ম হয় অপরিণত মাতৃত্বে। ফলে জন্মের পর শিশুটির স্বাস্থ্য পরিচর্যাও বাধাগ্রস্ত হয় পরিবেশজনিত বিপন্ন পরিস্থিতির কারণে।
সঙ্গত উপায়ে মাকেই দেওয়া জরুরি পরম নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠ অনন্য আঙিনা। সেটা ক্ষুদ্র পারিবারিক গ-ি থেকে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় সম্প্রসারিত হওয়াও বিরূপ পরিবেশের ন্যায্যতা। দূষিত জ্বালানি গৃহের অভ্যন্তরে কোনোভাবেই রান্নার জন্য ব্যবহার করা অনুপোযোগী। বিষয়টা পারিবারিক পরবর্তীতে গোটা সমাজ-সংস্কারে দায়বদ্ধতা। ঘরের ভিতরেও পরিবেশ সহায়ক জ্বালানি ব্যবহার মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। যা বাহ্যিক দূষণ মাত্রারও অনন্য এক সহনীয় প্রতিবেশ হিসেবে বিবেচনা করা পরিবেশ পরিস্থিতির অপরিহার্যতা। নতুন করে বলার কিছু নেই আজকের শিশু দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ। নতুন প্রযুক্তির স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগরের মর্যাদায়ও অভিষিক্ত।