
যখন আপনি আদেশ দেন, মানুষ বুঝে যায় যে আপনি ক্ষমতাশালী। যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিতে ভীত হন, তারা জানে আপনি সন্দিহান।এটি সহজ মনে হচ্ছে, তাই না? তবে আসলে তা নয়।সত্যিকারের নেতৃত্বের পথ কখনোই সরল নয়। এটি একটি বেষ্টিত পথ, যেখানে পুরানো অভ্যাসগুলিকে বাদ দিতে হয় এবং নতুন গুণাবলী গ্রহণ করতে হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে কঠিন বোধ করেন। কিন্তু আপনি যদি আরও একজন নেতা হতে প্রস্তুত থাকেন, তবে আপনাকে এই ৮টি অভ্যাসকে বিদায় জানাতে হবে। চলুন শুরু করা যাক!
১) প্রতিক্রিয়া প্রদানের বদলে প্রোঅ্যাকটিভ হওয়া
জীবন হলো ঘটনাবলীর এক ঝড়, যা আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে দেয়।এটা সহজ, যেভাবে আসে, তেমনই স্রোতের সাথে চলে যাওয়া। কে না চায় স্রোতের সাথে ভেসে চলতে?
কিন্তু কথা হলো, যদি আপনি নেতা হতে চান, তাহলে শুধু প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়, আপনাকে পূর্বানুমান করতে হবে। আপনাকে নিজের দিশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এবং জীবন যেভাবে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে শুধু প্রতিক্রিয়া জানানো নয়।নেতারা প্রোঅ্যাকটিভ। তারা পরিবর্তনের হাওয়ায় স্রোতের মতো ভেসে যায় না, বরং তারা সেই হাওয়া তৈরি করে। তারা আগেভাগে পরিকল্পনা করে, ফলাফল অনুমান করে এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।
তাহলে যদি আপনি এখনো প্রতিক্রিয়া প্রদানে আটকে থাকেন, তবে এই অভ্যাসটিকে বিদায় জানান।কারণ নেতৃত্ব? এটি সবসময় নিজের পথ তৈরি করা এবং শিপটিকে সঠিক পথে পরিচালনা করা।
২) কঠিন কথাবার্তা এড়িয়ে চলা
যখন কেউ কঠিন আলাপ এড়িয়ে চলে, তখন তারা নিজেদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এমন মানুষরা সবসময় ভয় পান, অস্বস্তিতে পড়েন, এবং চান না যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। কিন্তু এর ফলে তারা কখনোই সেই উন্নতির পথে পা বাড়াতে পারেন না যা তাদের সাফল্য এনে দিতে পারে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, নেতারা কখনোই কঠিন কথাবার্তা এড়িয়ে যান না। তারা জানেন, এই ধরনের আলোচনা তাদের জন্য শুধুমাত্র সমস্যা সমাধান করে না, বরং তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন কথাবার্তা হল সেই শক্তি, যা তাদের আরও দৃঢ় ও উন্নত করে তোলে।
সুতরাং, যদি আপনি এমন কাউকে দেখেন যিনি সবসময় কঠিন আলাপ থেকে দূরে থাকেন, বা কোনো সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যান, তাদের থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করুন। তাদের সঙ্গ আপনার আত্মবিশ্বাস এবং সামগ্রিক উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, সবসময় সেই মানুষদের সাথে থাকুন যারা আপনাকে উন্নতির দিকে পরিচালিত করবে এবং যাদের সাহস ও পজিটিভ মনোভাব আপনার জীবনকে উন্নত করবে।
এটি আপনার ভবিষ্যত এবং সাফল্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
৩) প্রতিটি সিদ্ধান্তের বেশি বিশ্লেষণ করা
শত-চালচিত্রের খেলায়, যারা পরবর্তী চাল চিন্তা করতে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে, তারা প্রায়ই হারিয়ে যায়। কারণ তারা বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকে, আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কাজের মধ্যে থাকে।এটি লিডারশিপ এও প্রযোজ্য। অতিরিক্ত চিন্তা করা একটি বিপজ্জনক অভ্যাস যা আপনাকে ধীর করে দেয় এবং অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে।যদিও বিষয়গুলো ভেবে দেখা জরুরি, কিন্তু হিসেবের জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এবং বিশ্লেষণ করা মাঝে মাঝে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার মতো।
নেতারা বিশ্লেষণের মধ্যে আটকে যান না। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে, বিকল্পগুলো ভাবেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেন।তারা বুঝে যে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া, কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার চেয়ে অনেক ভালো।
তাহলে, যদি আপনি একজন যিনি সবসময় অতিরিক্ত চিন্তা করেন, তাহলে এই অভ্যাসটিকে বিদায় দিন।কারণ নেতৃত্বের খেলায়, কাজ করা, কাজ না করার চেয়ে অনেক ভালো।
৪) ঝুঁকি নেওয়ার ভীতি
আমরা জানি, ঝুঁকি নেওয়া ভয়ানক হতে পারে। এটি এমন যেন আপনি একটি উঁচু পাহাড় থেকে অজানা পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছেন – আপনি জানেন না নিচে কী অপেক্ষা করছে, যতক্ষণ না আপনি ঝাঁপ দেন।কিন্তু লিডারশিপ -এর কথা হলো – এটি সঠিক ঝুঁকি নেওয়ার ব্যাপার। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে নতুন জায়গায় যাওয়ার মতো, নেতাদের প্রায়ই তাদের নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে যেতে হয়।আপনি যদি ঝুঁকি নেওয়া থেকে দূরে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনাকে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কারণ নেতৃত্ব মানে গভীর পানিতে ডুব দেওয়া, কেবল পুকুরে থাকাটা নয়।
তাহলে ঝুঁকি নেওয়ার ভয়কে বিদায় দিন এবং মনে রাখবেন, কোনও মহান নেতা কখনোই কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি ঝুঁকি ছাড়া।
৫) ব্যক্তিগত উন্নতি উপেক্ষা করা
নেতৃত্বের জন্য ব্যক্তিগত উন্নতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু নতুন দক্ষতা অর্জন করা কিংবা নতুন কিছু শিখতে থাকা নয়, বরং নিজের অনুভূতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারা এবং সর্বদা নিজের আরও ভালো সংস্করণ হওয়া।
সর্বোচ্চ নেতারা কখনো থেমে যান না, তারা সর্বদা শেখেন এবং নতুন আইডিয়া গ্রহণ করেন।তাহলে, যদি আপনি আপনার ব্যক্তিগত উন্নতি উপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে এখনই এটি পরিবর্তন করুন এবং মনে রাখবেন, যত বেশি আপনি উন্নতি করবেন, তত বেশি আপনি অন্যদের সাহায্য করতে পারবেন।আর লিডারশিপ তো এরই নাম, না কি?
৬) জনপ্রিয়তা চাওয়ার চেয়ে শ্রদ্ধা কামনা করা
একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো, নেতাদের সবাইকে ভালোবাসতে হবে। কিন্তু একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ হলো: সফল leadership হল শ্রদ্ধা অর্জন, জনপ্রিয়তা নয়।মানুষের পছন্দ হতে চাইলে আপনি প্রায়ই তাদের পছন্দের জন্য কিছু করতে গিয়ে অজান্তে অনেক ভুল করতে পারেন, কিন্তু শ্রদ্ধা আদায় করতে হলে আপনাকে নিজের জায়গা স্পষ্ট রাখতে হবে, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং কখনো কখনো কারও মনোবাবস্থা নড়বড়ে করতে হবে।নেতারা অনুমোদন চান না, তারা চায় ন্যায়। তারা সবাইকে বন্ধু বানাতে চাই না, তারা চায় সৎ, নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য হতে।
তাহলে, যদি আপনি শ্রদ্ধার চেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান, তাহলে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার সময় এসেছে।কারণ, শ্রদ্ধা কখনোই জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি টেকসই হয়।
৭) পারফেকশন নিয়ে অবসেশন
পারফেকশন একটি প্রশংসনীয় লক্ষ্য মনে হতে পারে, তবে বাস্তবে এটি প্রায়ই সফলতার পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।যখন আপনি সবকিছু নিখুঁত করতে মনোনিবেশ করেন, আপনি অনেক বড় সুযোগ মিস করতে পারেন।
সত্যিকার নেতারা বুঝেন, পারফেকশন কখনোই অর্জনযোগ্য নয়। তারা নিখুঁততার পেছনে না দৌড়ে, অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দেন।
তাহলে, যদি আপনি পারফেকশন নিয়ে অবসেশন করে থাকেন, তাহলে সেই অভ্যাসটি ছেড়ে দিন এবং মনে রাখবেন, লিডারশিপ কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করার নাম নয়, বরং কার্যকরভাবে কাজ করার নাম।
৮) শোনা’র শক্তিকে অবহেলা করা
সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতারা শুধু ভালো বক্তা নয়, তারা অসাধারণ শ্রোতা। তারা বুঝতে পারেন, অন্যদের কথা শোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।শোনা বোঝাপড়া তৈরি করে, বিশ্বাস গড়ে তোলে এবং মুক্ত আলোচনা উত্সাহিত করে। এটি মানুষকে জানান দেয় যে, তাদের মতামত মূল্যবান এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনা হচ্ছে।
যদি আপনি একজন নেতা হন এবং বেশি কথা বলার চেয়ে শোনা নয়, তাহলে এটি উপলব্ধির সময় এসেছে।পিছনে ফিরে তাকান, মনোযোগ দিয়ে শুনুন, এবং শোনার মাধ্যমে নেতৃত্বের পথ তৈরি করুন।
সত্যিকারের লিডারশিপ ক্ষমতা বা আধিপত্যের ব্যাপার নয়। এটি হলো বৃদ্ধি, বোঝাপড়া এবং পুরানো অভ্যাসগুলি ছাড়ার সাহস।নেতা হওয়া মানে নিজের শক্তি এবং দুর্বলতা চেনা এবং আশেপাশের মানুষের মূল্য জানাও।এটি একটি যাত্রা, একটি নিজেকে আবিষ্কারের যাত্রা, শিখে যাওয়ার যাত্রা, এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিজের সেরা সংস্করণ হওয়ার যাত্রা।
জন সি. ম্যাক্সওয়েল একবার বলেছিলেন, “একজন নেতা হলো সে, যে পথ জানে, সে পথে চলে এবং সেই পথ দেখায়।”তাহলে আপনি কি প্রস্তুত আপনার পথ তৈরি করতে? পুরানো অভ্যাসগুলোকে বিদায় জানাতে?এটা আপনার সিদ্ধান্ত।কারণ, নেতৃত্বের পথে যাত্রা শুরু হয়, আপনার নিজস্ব মাধ্যমে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3x73ub4x
আফরোজা