কাঁচা হলুদ প্রকৃতির এক আশীর্বাদ,বিশেষত শীতকালে যখন এটি সহজলভ্য। হাজার বছর ধরে এটি শুধু মশলা নয়, সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের জন্যও এক অনন্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, কাঁচা হলুদ ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা যতটা উপকারী, তার চেয়ে বেশি কার্যকর এটি খাওয়া। এটি শরীরের অভ্যন্তরে শক্তিশালী প্রদাহনাশক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বহু রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা শুধু স্বাস্থ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগ ও ব্রণ কমায় এবং রোদে পোড়া ত্বক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। ত্বকে হলুদের প্যাক হিসেবে ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দুধ বা মধুর সাথে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক ঝকঝকে ও মসৃণ হয়।
পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা পরামর্শ দিয়েছেন,শিশুদের জন্য কাঁচা হলুদের গুঁড়া বা ক্যাপসুল আকৃতির বিকল্প পাওয়া যায়। অনেকে বাচ্চাদের গায়ের রঙ উজ্জ্বল করতে এটি ব্যবহার করেন।
শক্তিশালী প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
হলুদের মূল সক্রিয় উপাদান ‘কারকিউমিন’। এটি প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ যেমন আর্থ্রাইটিস, হাড়ের ব্যথা এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া, এটি ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বাড়িয়ে কোষের ক্ষতি কমায়।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
কারকিউমিন মস্তিষ্কে ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরি এবং উন্নতিতে সহায়তা করে। এটি আলঝাইমার, ডিমেনশিয়া এবং বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশের মতো রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
হৃদরোগ প্রতিরোধ
কারকিউমিন প্রদাহ কমিয়ে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্তনালী মসৃণ রাখতে সহায়ক। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।
আর্থ্রাইটিস ও গাঁটের ব্যথায় উপকারী
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কারকিউমিন আর্থ্রাইটিসের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ওষুধের মতোই কার্যকর। এটি গাঁটের চলাচল সহজ করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের জন্য প্রাকৃতিক সমাধান।
বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য
মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতার মতো সমস্যায় কারকিউমিন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন বাড়িয়ে মনোভাব উন্নত করে।
বার্ধক্য প্রতিরোধ
কারকিউমিন শরীরের কোষের বার্ধক্যজনিত ক্ষয় রোধ করে। অক্সিডেশন এবং প্রদাহ কমিয়ে এটি দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্যে সহায়ক।
এছাড়াও,শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাঁচা হলুদ অত্যন্ত কার্যকর। এটি ঠান্ডা-কাশি, সর্দি, গলাব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে গরম দুধে এক চিমটি কাঁচা হলুদের গুঁড়ো এবং এক চিমটি গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শরীরকে সুস্থ ও উজ্জীবিত রাখে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=wbIiXvY3whw
আফরোজা