ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

‘চুকাই’ সুস্বাদু ও ভেষজ গুণে অতুলনীয় 

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

‘চুকাই’ সুস্বাদু ও ভেষজ গুণে অতুলনীয় 

ছবি : সংগৃহীত

চুকাই, একটি টক স্বাদের সুস্বাদু ফল, যা গ্রাম বাংলায় সবজি হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি একটি ফল বা ফুল হলেও, এটি সাধারণত নানা উপায়ে রান্না করা হয় এবং ভোজনপ্রেমী বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য। শুধু চুকাই ফলই নয়, এর পাতা এবং অন্যান্য অংশও অনেকটা জনপ্রিয়। এটি যেমন খেতে সুস্বাদু, তেমনি বিভিন্ন রোগ নিরাময় এবং সুস্থ থাকার জন্য অতুলনীয় ভেষজ গুণে পরিপূর্ণ।

চুকাই একটি উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যা ইংরেজি ভাষায় রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel) নামে পরিচিত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম  Hibiscus sabdariffa । সিলেট অঞ্চলে এটিকে চুকাই বা হইলফা বলা হয়, তবে বিভিন্ন অঞ্চলে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- অম্ব মধু, অম্বল মধু, চুকুল, মেডশ, মেট্টস, মেষ্টা, চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুকা, চুক্কি, গোডা ইত্যাদি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে এই উদ্ভিদকে বিভিন্ন সুন্দর ও বৈচিত্র্যময় নামে ডাকা হয়।

চুকাইয়ের ইংরেজি নাম রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel) এবং বৈজ্ঞানিক নাম (Hibiscus sabdariffa)
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। অনেক অঞ্চল থেকে এটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় প্রতিটি গ্রামেই চুকাই ফলের গাছ দেখা গেলেও এখন পাওয়া যায় না। তবে হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বাহুবলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এই চুকাই গাছ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও পাহাড়ি এলাকার প্রায় বাড়িতেই এই গাছ পাওয়া যায়।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমতল ভূমির চেয়ে পাহাড়ি এলাকায় এই গাছ বেশি জন্মায়। তাছাড়া এই ফলটি পাহাড়িদের জনপ্রিয় খাবার। যার ফলে পাহাড়ে বসবাস করা বিভিন্ন জাতি এই ফলটি নিজেদের আঙ্গিনা বা বাড়ির আশপাশে রোপণ করে থাকেন। পাটজাতীয় এই ফলটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সু-স্বাদু খাবার তৈরি করেন পাহাড়ি আধিবাসীরা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়
চুকাই ফল ও পাতা দিয়ে তৈরি করা ভর্তা ও শাক গরম ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ। চিংড়ি মাছ, শোল মাছ, ট্যাংড়া মাছ, পুটি মাছ দিয়ে এর ঝোল যে কোন ভোজনপ্রেমী মানুষ একবার খেলে দীর্ঘদিন মুখে লেগে থাকবে। অনেকে গরু কিংবা খাসির মাংসের সাথেও চুকাই পাতা ও ফল ব্যবহার করে থাকেন।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে,  এই চুকাই পাতা শুধু নিজেদের খাবার জন্যই নয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে সম্ভাবনাময় একটি খাতে পরিণত হতে পারে। চুকাই দিয়ে উৎপাদিত চা, মেস্তা স্বত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার ইত্যাদি বাজারজাত করা গেলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এই শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।


চুকাই পাহাড়ি এলাকায় খুব ভালো জন্মে। তাই এই ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে
অপরদিকে, খাবার ও সম্ভাবনাময় শিল্পের এই চুকাই ভেষজ উদ্ভিদ হওয়ায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে, চুকাই দিয়ে যেকোন খাবার অন্যসব খাবারের তুলনায় অধিক পুষ্টিসম্বলিত। এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজি ওষুধ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হতো। চুকাই ফল ও পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যানসার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় অপরিসীম এটি। চুকাই পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে।

চুকাই সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু আহমদ আহসান কবির বলেন, ‘এটিকে ফল অথবা ফুল দুইটাই বলা যেতে পারে। এটির আধি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পাওয়া যায়। খেতে টক জাতীয় হলেও বেশ সু-স্বাদু। এছাড়া অনেক ঔষুধি গুণের অধিকারি এই ফলটি।’

তিনি বলেন- ‘এটি পাহাড়ি এলাকায় খুব ভালো জন্মে। তাই এই ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।’

রাসেল

×