ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

যে ৮টি অভ্যাস কাউকে চরম বিশৃঙ্খল করে !

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৮:৪৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

যে ৮টি অভ্যাস কাউকে চরম বিশৃঙ্খল করে !

আপনার কি কখনও এমন কিছু অভ্যাস চোখে পড়েছে, যা আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে? মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী, কিছু লক্ষণ এমন রয়েছে যা এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে। এই অভ্যাসগুলো নিয়ে সচেতন হওয়া আমাদের নিজেদের আরও ভালোভাবে বোঝার পাশাপাশি আত্মনিয়ন্ত্রণের উন্নতিতেও সাহায্য করতে পারে। 

আজ আমরা আলোচনা করবো এমন কিছু অভ্যাস নিয়ে, যা আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবকে তুলে ধরে। মনে রাখবেন, এটি কোনও দোষারোপ নয়, বরং শেখা ও উন্নতির একটি সুযোগ। চলুন, শুরু করি!

 

১. কাজ পরে করার প্রবণতা

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে, "পরে করবো" ? 

কাজে গড়িমসি করা একটি সাধারণ লক্ষণ। যারা আত্মনিয়ন্ত্রণে দুর্বল, তাদের জন্য কাজ দেরি করার এই প্রবণতা বেশ পরিচিত। অতিরিক্ত চাপ, ব্যর্থতার ভয়, কিংবা অভ্যাসবশত, তারা প্রায়শই কাজ এড়িয়ে যান।মনে রাখবেন,  ইচ্ছা নয়, কাজই ফলাফল আনে। । মাঝে মাঝে দেরি করা স্বাভাবিক হলেও, নিয়মিতভাবে এটি করলে উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই, "পরে করবো" বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, "এখন কেন নয়?"

 

২. অতিরিক্ত পরিকল্পনা

পরিকল্পনা করা ভালো,  যদিও পরিকল্পনা সাধারণত শৃঙ্খলার সাথে জড়িত, তবে অতিরিক্ত পরিকল্পনা আসলে কাজ এ তারা পরিকল্পনা পর্যায়ে এতটাই আটকে যায় যে এগিয়ে যাওয়া হয় না।তবে অতিরিক্ত পরিকল্পনা কার্যত গড়িমসি করায় রূপ নিতে পারে। যাঁরা পরিকল্পনার জালে আটকে থাকেন, তাঁদের জন্য কাজ এগোনো কঠিন হয়ে যায়। 

মনে রাখবেন, বাস্তবায়ন ছাড়া পরিকল্পনার কোনও মূল্য নেই। তাই পরিকল্পনা এবং কাজের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখুন। যথাযথ পরিকল্পনা করুন।শেষ পর্যন্ত, অগ্রগতি আসে কাজের মাধ্যমে, শুধুমাত্র পরিকল্পনা করে নয়।

৩. রুটিনের অভাবযারা স্ব-নিয়ন্ত্রণে দুর্বল, তাদের দৈনন্দিন জীবন বিশৃঙ্খল হতে পারে। একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন  আমাদের মস্তিষ্ককে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করে,উৎপাদনশীলতা এবং শৃঙ্খলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  এটি শুধু সময় বাঁচায় না, বরং উন্নতির পথও খুলে দেয়। তাই একটি কার্যকর রুটিন তৈরি করুন, যা আপনাকে আরও নিয়ন্ত্রিত হতে সাহায্য করবে।

৪. না বলতে না পারা

অন্যদের সাহায্য করতে চাওয়া এবং সম্পৃক্ত থাকতে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সবকিছুতে হ্যাঁ বলা ,সবসময় অন্যের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা প্রায়শই আত্মশাসনহীন মানুষের অভ্যাস। ফলে, তারা নিজেদের কাজ এবং যত্নের জন্য খুব কম সময় এবং শক্তিমনে রাখবেন, এটি স্বার্থপর হওয়া নয়, বরং নিজের সীমা বোঝা এবং সত্যি যা গুরুত্বপূর্ণ তার জন্য শক্তি সংরক্ষণ করা।

মনে  রাখবেন, সবার জন্য সব কিছু করা সম্ভব নয়। 'না' বলতে শিখুন। এটি আপনার নিজের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি অংশ এবং উন্নত আত্মনিয়ন্ত্রণের লক্ষণ। এটি একটি কঠিন অভ্যাস, কিন্তু অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি দোষারোপ অনুভব না করেই সীমা নির্ধারণ করতে শিখবেন। আপনি দারুণ করছেন, এবং কখনো কখনো নিজেকে প্রথমে রাখা ঠিক আছে।


৫. মাল্টিটাস্কিং-এর ফাঁদ

আমরা সকলেই কখনো না কখনো একসাথে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করেছি, অল্প সময়ে সবকিছু সম্পন্ন করার প্রয়াসে। মাল্টিটাস্কিং একটি কার্যক্ষমতার কৌশল মনে হতে পারে, কিন্তু এটি প্রায়ই আত্মশাসনহীন মানুষের একটি অভ্যাস।

অনেক কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা করা কার্যক্ষমতার চেয়ে অক্ষমতা বাড়ায়। যখন আমরা মাল্টিটাস্ক করি, তখন সত্যিকার অর্থে কোনও একটি বিষয়ে মনোনিবেশ করি না। আমাদের মনোযোগ বিভাজিত হয়,তখন কাজের মান নষ্ট হয়। গবেষণা বলছে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার চেয়ে একটি কাজের ওপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া বেশি কার্যকরএবং উচ্চতর উৎপাদনশীলতার দিকে নিয়ে যায়।"

৬. সহজে মনোযোগ হারানো

আমরা এমন একটি বিশ্বে বাস করি যেখানে সবকিছু আমাদের মনোযোগ ভাঙার জন্য তৈরি। যারা স্ব-নিয়ন্ত্রণে দুর্বল, তারা এই ফাঁদে বেশি পড়েন। 

সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন থেকে শুরু করে ইমেইল পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের ইনবক্সে ঢুকছে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে মনোযোগ হারানো সহজ, এবং এটি অনেকাংশে তাদের একটি অভ্যাস যারা স্ব-নিয়ন্ত্রণের অভাবে ভুগছেন। 

আমি এক বন্ধুর কথা বলি , যিনি এই সমস্যার সাথে লড়াই করতেন। তিনি কাজ শুরু করার পরেই, কিছুক্ষণের মধ্যে ফোন বেজে উঠতো, আর তার মনোযোগ হারিয়ে যেত। তিনি মেসেজ চেক করতেন, কয়েকটি ইমেইলের উত্তর দিতেন, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করতেন, এবং এর মধ্যেই এক ঘণ্টা চলে যেত, কিন্তু কাজের অগ্রগতি হতো না। 

মূল কথা, সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করা নয়, কারণ আমাদের সংযোগিত জগতে এটি প্রায় অসম্ভব। বরং তাদের কার্যকরভাবে পরিচালিত করার শৃঙ্খলা বিকাশ করা উচিত। 

নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ এর মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময় বের করুন ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া চেক করার জন্য, এবং বাকি সময়টি কাজের প্রতি নিবেদিত রাখুন। প্রথমে এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু অভ্যাস করলে আপনি দেখবেন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

৭. কাজ সম্পূর্ণ না করা

"কিছু করবো" বলে তা না করা আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবের আরেকটি লক্ষণ। এটি শুধু আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা কমায় না, বরং উন্নতির পথেও বাধা সৃষ্টি করে। ডায়েট শুরু করা, জিমে যাওয়া, নতুন দক্ষতা শেখা বা যে কোনও কাজ হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ না করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই অভ্যাসটি একটি বার্তা দেয় যে আপনার কথার কোনও মূল্য নেই এবং এটি আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষুন্ন করতে পারে। 

কথার চেয়ে কাজ বড়। যদি আপনি সত্যিই গুরুত্বের সাথে নিতে চান, তবে আপনার প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করার শৃঙ্খলা বিকাশ করতে হবে। এটি সবসময় সহজ নয়, কিন্তু মূল্যবান কিছুই সহজে আসে না। তাই অজুহাত দেওয়া বন্ধ করুন এবং অগ্রগতি করা শুরু করুন। আপনি নিজের কাছে ঋণী।তাই নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

৮. স্ব-যত্নে অবহেলা

স্ব-নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু শৃঙ্খলা নয়, নিজের যত্ন নেওয়াও। যাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে তারা প্রায়ই স্ব-যত্ন অবহেলা করে, যা শারীরিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা, ঘুম কম করা বা ক্রমাগত চাপ অনুভব করার মধ্যে পড়ে। এটি একটি অভ্যাস যা শৃঙ্খলার অভাব প্রতিফলিত করে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কেবল আপনার শরীরের জন্য ভালো নয়, এটি আপনার মনেও ভালো প্রভাব ফেলে। একটি সুস্থ মন স্ব-নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত। 

তাই স্ব-যত্নকে প্রাধান্য দিন। সঠিকভাবে খান, নিয়মিত ব্যায় করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান এবং বিশ্রাম ও পুনর্জীবিত হতে সময় নিন। কারণ দিনের শেষে, স্ব-নিয়ন্ত্রণ মানে নিজেকে সম্মান করা এবং এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যা আপনার সুস্থতা এবং জীবন লক্ষ্যকে সেবা করে। 

 

মনে রাখবেন, স্ব-নিয়ন্ত্রণ মানে নিজেকে কঠোরভাবে বিচার করা নয়, বরং আপনার অভ্যাসগুলি বোঝা এবং সেগুলি উন্নত করার জন্য সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই নিবন্ধটি এমন অভ্যাসগুলিতে আলো ফেলেছে যা প্রায়ই স্ব-নিযন্ত্রণের অভাব নির্দেশ করে। তবে, পরিবর্তনের পথ আপনার হাতেই রয়েছে। স্ব-নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলার জন্য ব্যয় করা সময় নিজেকে একটি বিনিয়োগ। স্ব-নিয়ন্ত্রণ উন্নতির একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।  এই পরিবর্তন আপনার জীবনের দিকনির্দেশনা বদলে দিতে পারে। তাই সচেতন হন, আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ান এবং আরও সার্থক জীবনের দিকে এগিয়ে যান।

 

আফরোজা

×