ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

‘রাগ না করে থাকার উপায়’

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘রাগ না করে থাকার উপায়’

রেগে গেলে মানুষ হেরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

আপনি হয়তো বলতে পারেন রাগ না করে কি থাকা যায়? একজন অহেতুক গালিগালাজ করল, মা-বাবা তুলে গালি দিল, তখনও কি প্রো-একটিভ থাকা যায়? অনায়াসে থাকা যায়। মহামতি বুদ্ধের জীবনের একটি ঘটনা এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্যে এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

মহামতি বুদ্ধ তখন বৃদ্ধ। এক চালবাজ লোক জুটে গেল। সে ভাবল বুদ্ধ আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এখন তার সাথে কিছুদিন থেকে যদি কিছু কায়দা-কানুন টেকনিক শিখে নেয়া যায়, তাহলে বুদ্ধ মারা যাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বুদ্ধের অবতার ঘোষণা করে দেব। তখন আর পরিশ্রম করতে হবে না। বসে বসে দান-দক্ষিণা গ্রহণ করেই জীবনটা সুখে কাটিয়ে দেয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ভণ্ড একেবারে নিবেদিতপ্রাণ শিষ্যের মতো ভান করে বুদ্ধের সেবাযত্ন করতে লাগল। মহামতি বুদ্ধ তার মতলব বুঝলেও কিছুই বললেন না।

বছর দুই পার হওয়ার পর ভণ্ড শিষ্য বুঝতে পারল যে, সে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি কিছুই লাভ করে নি। কারণ নিয়ত পরিষ্কার না থাকলে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায় না। ভণ্ড শিষ্য এর ফলে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। মনে মনে ঠিক করল এর উপযুক্ত প্রতিশোধ সে নেবে। একদিন ভোরবেলা মহামতি বুদ্ধ একা বসে আছেন। ভণ্ড ভাবল এই সুযোগ। সে কাছে গিয়ে বুদ্ধকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে লাগল। বুদ্ধ চুপচাপ শুনছেন। কিছুই বলছেন না।

অনেকক্ষণ গালিগালাজ করার পর ভণ্ড শিষ্য যখন একটু থামল, বুদ্ধ তখন মুখ খুললেন। শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি? ভণ্ড শিষ্যের মেজাজ তখনও ঠাণ্ডা হয় নি। সে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, জিজ্ঞেস করেন, কি জিজ্ঞেস করবেন? বুদ্ধ বললেন, ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাচ্ছো। কিন্তু সে যদি তা না নেয়, তাহলে জিনিসগুলো কার কাছে থাকবে? উত্তেজিত শিষ্য জবাব দিল, ‘এ তো সহজ বিষয়। এটাও আপনি বোঝেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাচ্ছি, সে যদি না নেয় তাহলে আমারই থাকবে। বুদ্ধ আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার জিনিস তুমি তাকে দিতে চাচ্ছো সে না নিলে তোমার থাকবে?’ ভণ্ড শিষ্যের উত্তর, ‘হাঁ আমার থাকবে।’ এবার মহামতি বুদ্ধ বললেন, তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যা (গালিগালাজ) উপহার দিলে, আমি তার কিছুই নিলাম না।’

আপনিও আপনার জীবনে ব্যক্তিগত গালিগালাজ ও অপমানসূচক কথাবার্তার জবাবে মহামতি বুদ্ধের এই কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। 

রাগের প্রতিকার

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

আপনি যদি সত্যিই মনে করেন যে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন, তাহলে সত্যিই আপনি এ সমস্যা থেকে মু্‌ক্তি পাবেন।

  • রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন স্টিকার লাগান।
  • আপনার রাগের মুহুর্তগুলোকে ভিডিও করে রাখুন। পরে দেখুন রেগে গেলে আপনি কী রকম দানবীয় আচরণ করেছেন।
  • অটোসাজেশন দিন। রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম।
কারণ খুঁজে বের করুন

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাগের আসল কারণ অর্ন্তগত হীনম্মন্যতা। নিজের দুর্বলতাকেই মানুষ ঢাকার চেষ্টা করে দুর্ব্যবহার বা রাগারাগির মধ্য দিয়ে। তাই খুঁজে দেখুন আপনার মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা আছে কিনা। হও উন্নত শির বা নেতিচিন্তার মেডিটেশন করুন। আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচকতা বাড়াতে অটোসাজেশন দিন।

প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

কোনো মানসিক সমস্যার কারণে এই রেগে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

মেডিটেশন করুন

রাগের সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিরোধক মেডিটেশন। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রেনে সেরেটনিনের মাত্রা কমে গেলে আমরা রেগে যাই। আর মেডিটেশন এই সেরেটনিনের মাত্রাকেই বাড়িয়ে তোলে। মেডিটেশনে ব্রেনে আলফা ওয়েভ তৈরি হয়, যা ব্রেনের চিন্তা ও বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে আত্মপর্যালোচনা যেমন সম্ভব হয় তেমনি ক্ষমা করাও যায় সহজে।

আর কে

×