ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কেন জরুরি? 

প্রকাশিত: ১৩:১১, ১০ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ১৩:১৬, ১০ অক্টোবর ২০২৪

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কেন জরুরি? 

অন্যান্য দেশে যেমন পালিত হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এই দিবসটি।

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। অন্যান্য দেশে যেমন পালিত হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এই দিবসটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়।  (It is the time to prioritize mental health in workplace)। সংস্থাটির মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।

আমরা প্রত্যেকেই কর্মজীবী এবং জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকি। কর্মক্ষেত্র আমাদের জীবন ও জীবিকার নির্ভরযোগ্য স্থান। কর্মের মাধ্যমে আমরা নিজে বাঁচি এবং পরিবারকে বাঁচাই। কর্মক্ষেত্র সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। আর এ স্বাস্থ্যের একটি প্রধান অংশ হলো মানসিক স্বাস্থ্য। মন ও মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক না থাকলে মানুষের কর্মস্পৃহা, কর্মোদ্দীপনা বিনষ্ট হয়ে যায়, হয়ে পড়ে কর্মহীন, কর্মচ্যুত এবং হারায় তার কর্ম (চাকরি)। ফলত তার ও তার পরিবারের জীবনে নেমে আসে অমানিশার কালোরাত্রি। পৃথিবীতে শুধু উদ্বিগ্নতা (Anxiety) ও বিষণ্নতা (Depression) এর কারণে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কম পারিশ্রমিক, কর্মী ছাঁটাই, কর্মক্ষেত্রে অসন্তুষ্টি, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবস্থান হারানোর ভয়ে মূলত কর্মীরা বিষণ্ণতায় ভোগেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের বেশির ভাগই কর্মক্ষম। পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে এর স্বীকৃতি না পাওয়া, কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও হতাশায় তাঁরা মানসিক রোগে আক্রান্ত।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বিষণ্ণতা ও উদ্বেগজনিত সমস্যায় চিকিৎসা নিতে এসেছে।

কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর তাদের মধ্যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতার জন্য ৮০ শতাংশ কাজ হারান। এসব ব্যক্তি অনুপস্থিতি, কর্মদক্ষতা হ্রাস, কাজে কম মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব এবং মনে রাখার সমস্যায় ভোগেন।

ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনা. (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম  মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের উপর গুরত্ব আরোপ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি কতগুলো পরামর্শ দিয়েছেন। যা নিচে দেয়া হলো-

কোনো কোনো কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ (যেমন হয়রানি, বুলিং, অপদস্ততা, অসহযোগিতা) ইত্যাদি কারণে মানুষের মনে প্রচুর মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। ফলে তার মাঝে সৃষ্ট হয় হীনমন্যতা।  ২। মানসিক চাপজনিত সমস্যা। ৩।  উদ্বিগ্নতা (Anxiety) ৪।  বিষণ্নতা (Depression)। ৫। মাদকাসক্তি। ব্যক্তিত্ব সমস্যা ৬।  অন্যান্য গুরুতর মানসিক রোগ ৭। বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করে। কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিবেশ সৃস্টি হলে আবেগগত সমস্যা ও মনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি করে। কর্মক্ষেত্রে এসব মানসিক প্রতিকুলতা একজন ব্যক্তি ও পরিবারকে পথে নামিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আমাদের দেশে একটি পরিবারে সাধারণত এক বা দুজন কার্মজীবী মানুষ থাকেন।

 সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন ও নিশ্চয়তা বিধান ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও কর্মক্ষেত্রে সবার সহমর্মিতা ও সহাযোগিতার হাত প্রসারিত করা।

কর্মক্ষেত্রে সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য করণীয় :

ক. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সবার ইতিবাচক মনোভাব। খ. কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিয়ম, আলাপ-আলোচনা, খাবার গ্রহণ, পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে মনের কষ্টগুলো দূর করা যেতে পারে। গ. সহকর্মীর প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ। ঘ. সহকর্মীরা একে অপরের বন্ধু হবেন, যাতে একে অন্যের সাহায্য গ্রহণে দ্বিধান্বিত না হন।

ঙ. কোনো সহকর্মীকে বুলি, হেনস্তা, অপমান, অপদস্ত, ছোটজ্ঞান না করা। চ. সহকর্মীর দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে শেয়ার করা ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা। ছ. কর্মক্ষেত্রে কিছু বিনোদন, সাংস্কৃতিক চর্চা, সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জ. সম্ভব হলে সহকর্মীর মাঝে মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। ঝ. একটি সুস্থ জীবনের জন্য একটি সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ অপরিহার্য। আমাদের মানসিক চাপ মুক্ত থাকা, হাসিখুশি থাকাসহ একে অপরের সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন। এতে কর্মজীবী বাঁচবেন, বাঁচবে তার পরিবার।

এদিকে, দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পৃথকভাবে সভা, সেমিনার ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।

তাসমিম

×