
ছবি: সংগৃহীত
পেটের চারপাশে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার ও পারকিনসনের মতো স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে—সম্প্রতি নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বরাবরই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হলেও পেটের মেদ সবচেয়ে ক্ষতিকর। যুক্তরাজ্যের ইউকে বায়োব্যাংক–এর প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
গবেষণার সময়কার অংশগ্রহণকারীদের কারও ডিমেনশিয়া বা স্নায়ুবিক রোগ ছিল না। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বি, পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। প্রায় নয় বছর পর দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৮ হাজার ২২৪ জন বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন—এর মধ্যে ৬ হাজার ৭৬ জন ডিমেনশিয়া, ২ হাজার ৯৩৩ জন আলঝেইমার এবং ২ হাজার ৪২৭ জন পারকিনসনে আক্রান্ত হন।
পেটের চারপাশে বেশি মেদ থাকলে যে কোনো ধরনের স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় ১৩%। বাহুতে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে এই ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮%। তবে উরুতে বেশি চর্বি থাকলে তুলনামূলকভাবে ঝুঁকি কম থাকে। যাদের শরীরে পেশি বেশি এবং হাড়ের ঘনত্ব ভালো, তাদের মধ্যে স্নায়ুবিক রোগের প্রবণতা অনেক কম দেখা গেছে। বিশেষ করে যাদের হাতের মুঠির শক্তি (গ্রিপ স্ট্রেংথ) বেশি, তাদের মধ্যে এ রোগের ঝুঁকি ২৬% কম।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত পেটের মেদ হৃদরোগেরও কারণ, যা আবার স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে: যে-সব রোগীর পেটে অতিরিক্ত মেদ ছিল এবং ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৩৫%-এর হৃদরোগও ছিল। বাহুর মেদযুক্ত রোগীদের মধ্যে এ হার ১৪%। ২০১১ সালে আন্নালস অফ নিউরোলজি–তে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বলা হয়েছিল, মধ্যবয়সে পেটের গভীরে জমে থাকা ভিসেরাল ফ্যাট মস্তিষ্কের আয়তন কমিয়ে দিতে পারে। এই ধরনের চর্বি দেহের অভ্যন্তরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঘিরে জমে, এবং অতিরিক্ত হলে তা বিভিন্ন রোগ ডেকে আনে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, একটি ফিতা দিয়ে কোমরের মাপ করলেই পেটের চর্বির পরিমাণ আন্দাজ করা সম্ভব: নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি বা তার বেশি, এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চি বা তার বেশি হলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুধু হৃদরোগই নয়, স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমানো সম্ভব। পেটের মেদ নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: https://shorturl.at/q8s0J
মিরাজ খান