
আমাদের কাজের অভ্যাসগুলো উন্নত করার চেষ্টায় আমরা অনেক সময় এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলি, যেগুলো মনে হয় যেন বেশ ফলপ্রসূ।কিন্তু বাস্তবে সেগুলো আমাদের সময়ই অপচয় করে।আপনারও এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
আজ জানব এমন চারটি 'প্রোডাক্টিভিটি ট্র্যাপ'-এর কথা, যেগুলো দেখতে কাজের মতো মনে হয়, কিন্তু আসলে আমাদের দক্ষতা ও ফল দুটোই কমিয়ে দেয়।
১. একসঙ্গে অনেক কাজ (মাল্টিটাস্কিং)
গবেষণা বলছে, মাল্টিটাস্কিং আমাদের উৎপাদনক্ষমতা ৪০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। একটা ছোট ডিসট্রাকশনও আপনার মনোযোগ পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে গড়ে ২৩ মিনিট সময় নেয়। ভাবুন তো, দিনে কতটা সময় এর পেছনে নষ্ট হয়?
২. সঙ্গে সঙ্গে ইমেইল বা মেসেজ চেক করা
ইমেইলের 'পিং' শব্দটা শুনলেই আমরা যেন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর না দিলে দোষ হয়ে যাবে এমন একটা চাপ অনুভব করি। মনে হয়, যত দ্রুত জবাব দিব, ততটাই দায়িত্বশীলতা দেখানো হবে।কিন্তু সত্যিটা হল, এই আচরণ আমাদের মনোযোগ ও কর্মদক্ষতা দুই-ই কমিয়ে দেয়।
৩. মিটিং দিয়ে ঠাসা ক্যালেন্ডার
বহু মানুষের মতো আমারও মনে হতো, ক্যালেন্ডার যত ব্যস্ত থাকবে, আমি তত বেশি ‘চলমান’। বিশেষ করে কর্পোরেট জীবনে প্রতিদিন কয়েকটি মিটিং না হলে যেন কাজই হয়নি!কিন্তু দেখা গেছে, অধিকাংশ মিটিংয়ে ঘুরেফিরে একই কথা হয়, সিদ্ধান্তের চেয়ে আলোচনাই বেশি হয়।
এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৭০% মিটিং কর্মীদের প্রোডাকটিভ কাজ থেকে বিরত রাখে। করোনা পরবর্তী সময়ে একজন কর্মী গড়ে ১৩.৫% বেশি মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছে আগের তুলনায়।
৪. দীর্ঘ সময় কাজ করা (ওভারটাইমের ফাঁদ)
অনেকেই ভাবেন, যত বেশি সময় কাজ করবো, তত বেশি ফল পাবো। কিন্তু বাস্তবতা একদম উল্টো।স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে উৎপাদনক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এমনকি ৭০ ঘণ্টা কাজ করলেও ফলাফলে ৫৫ ঘণ্টার বেশি হয় না!অতিরিক্ত কাজের ফলে আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন কাজের মানও পড়ে যায়।
সবসময় কম কাজ নয়,তবে নিয়মিত বিশ্রাম, ছোট বিরতি, ছুটির দিনটিকে সত্যিকার ছুটি রাখা এসবই দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
এই চারটি ‘ফাঁদ’ মাল্টিটাস্কিং, সঙ্গে সঙ্গে ইমেইল দেখা, একগাদা মিটিং আর ওভারটাইম সবই বাইরে থেকে দেখে কাজের মতো মনে হয়। কিন্তু এগুলো আমাদের আসল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
সবসময় ব্যস্ত থাকা মানেই আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন এমনটা নয়। অনেক সময় একটু থেমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি কি সত্যি ফল আনছি, নাকি শুধু ব্যস্ত থাকার ভান করছি?পরিষ্কার লক্ষ্য, নির্দিষ্ট মনোযোগ আর নিয়মিত বিশ্রাম,এই তিনটি জিনিসই হতে পারে বাস্তব সাফল্যের চাবিকাঠি।
সূত্র:https://tinyurl.com/29fh4ju3
আফরোজা