
ছবি: প্রতীকী
অনেকেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়ার কথা ভাবলেই হতাশা বা আতঙ্কে ভোগেন। কঠোর মেজাজের বস, অবাস্তব কর্মচাপ বা বিদ্বেষপরায়ণ সহকর্মীদের মাঝে প্রতিদিন কাজ করা যে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কী পরিমাণ প্রভাব ফেলে, তা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে।
বিষাক্ত কর্মপরিবেশের লক্ষণ
একটি বিষাক্ত কর্মপরিবেশ মানেই সেখানে মানসিক নিরাপত্তার অভাব। নেতিবাচকতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও আগ্রাসন সেখানে নিত্যদিনের চিত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষাক্ত কর্মপরিবেশ চিহ্নিত হয় নিচের কয়েকটি আচরণে:
-
অহংকারী ব্যবস্থাপনা
-
হেনস্তা ও অবমাননা
-
সহকর্মীদের দ্বারা একঘরে করে রাখা
-
ধমকি ও আক্রমণাত্মক আচরণ
এছাড়াও নিচের বিষয়গুলোও বিষাক্ত পরিবেশের লক্ষণ হতে পারে:
-
কাজের ব্যর্থতার ফাঁদে ফেলে দেওয়া
-
অতিরিক্ত নজরদারি (মাইক্রোম্যানেজমেন্ট)
-
গুজব ও দলবাজি
-
অস্পষ্ট বৈষম্য ও মাইক্রোঅ্যাগ্রেশন
-
অনিরাপদ কর্মপরিবেশ
-
অন্যের কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়া
-
ভবিষ্যতের কোনো উন্নতির সম্ভাবনা না থাকা
-
দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কম বেতন
-
অব্যবস্থাপনার কারণে সহকর্মীদের খারাপ আচরণের দায় এড়িয়ে যাওয়া
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা এমন একটি পরিবেশে কাটানো মানে মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং বিষণ্ণতা দেখা দেওয়া। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষাক্ত কর্মপরিবেশ কর্মীদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, সৃজনশীলতা নষ্ট করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মীদের সরে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
MIT Sloan Management Review-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কম বেতনের চেয়ে বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতিই একজন কর্মীর চাকরি ছাড়ার প্রধান কারণ। মহামারি পরবর্তী “গ্রেট রেজিগনেশন”-এর সময়েও এই বাস্তবতা প্রমাণিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কী করবেন?
নিজেকে দোষ দেবেন না: এটি আপনার দোষ নয়। যতটা সম্ভব ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন, তবে মনে রাখবেন – একা আপনি পুরো পরিবেশ বদলাতে পারবেন না।
লাঞ্চ ব্রেক কাজে লাগান: কর্মক্ষেত্রের বাইরে কোথাও খান, প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ কাটান।
সীমারেখা তৈরি করুন: অতিরিক্ত কাজ বা বিরতি ছাড়াই কাজ করতে রাজি হবেন না।
নাটক এড়িয়ে চলুন: গুজব বা দলাদলিতে না জড়িয়ে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন।
নিজের লক্ষ্যে মনোযোগ দিন: এখানে আপনি চিরকাল থাকবেন না – নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
কাজ শেষে রিচার্জ করুন: হাঁটা, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা বা স্নান – মনের ভার লাঘবের জন্য একটি অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বিশ্বস্ত সহকর্মীদের সঙ্গে থাকুন: কয়েকজন ভরসাযোগ্য সহকর্মী পাশে থাকলে মানসিকভাবে অনেক শক্তি পাওয়া যায়।
নিজের মূল্যবোধ ধরে রাখুন: কেউ খারাপ আচরণ করলেও পাল্টা খারাপ ব্যবহার করবেন না।
স্ট্রেস কমানোর উপায়গুলো চর্চা করুন: নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম বা ব্যায়াম আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
বিকল্প খুঁজুন: পরিবেশ বদলানোর আশা না থাকলে ধীরে ধীরে চাকরির নতুন সুযোগ খুঁজতে থাকুন।
কীভাবে কর্মপরিবেশ উন্নত করা যায়?
যদি বিষাক্ততা কেবল একটি বা দুটি ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বিশ্বাসযোগ্য কোনো ব্যবস্থাপক বা এইচআর বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মানসিক সহায়তার জন্য EAP (Employee Assistance Program) চালু রাখে।
তবে যদি পুরো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিই বিষাক্ত হয়, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
চাকরি ছাড়বেন কি না, কীভাবে বুঝবেন?
নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন:
-
কাজটি কি আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে?
-
সমস্যা কি পুরো প্রতিষ্ঠানে, নাকি কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ?
-
প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব কি বিষাক্ত?
-
যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিশ্লেষণ করে এবং “থাকার পক্ষে ও বিপক্ষে” তালিকা তৈরি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতে পারে।
আপনার কাজের জায়গায় যদি নিয়মিত অসম্মান, হুমকি বা অবাস্তব চাপ থাকে – তাহলে সেটি একটি বিষাক্ত কর্মপরিবেশ। এই বিষ পরিবেশ আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে বিষক্রিয়ার মতোই প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে মনে রাখুন, আপনার সামনের দিনগুলো আরও ভালো হতে পারে। নিজেকে গুছিয়ে নিন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যান।
সূত্র: https://www.healthline.com/health/toxic-work-environment
রবিউল হাসান