
ছবিঃ সংগৃহীত
ভালোবাসা আর নিয়ন্ত্রণের মাঝে ফারাক সূক্ষ্ম হলেও গভীর। কেউ যদি নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তাহলে তার কাছে এসব আচরণই ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি মনে হতে পারে। এমন সাতটি সাধারণ অভিজ্ঞতা, যেগুলো শিশু বয়সে দেখা গেলে একজন মানুষ ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণকেই ভালোবাসা বলে ভুল করতে পারেন।
নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পর্ক দেখা
যারা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সম্পর্ক বা ঘনিষ্ঠ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ দেখেছে, তারা এটিকে ‘ভালোবাসার স্বাভাবিক রূপ’ বলে মনে করতে পারে। এই অভ্যাস তারা অবচেতনে শিখে নেয় এবং ভবিষ্যতের সম্পর্কে এটি পুনরাবৃত্তি ঘটে।
নিজের জীবনে নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা
যখন কোনো শিশুর ওপর পরিবারে নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয়—যেমন বাবা সব সিদ্ধান্ত নেন, কোনো মতামত শোনা হয় না—তখন সে বড় হয়ে এমন সম্পর্কেই স্বস্তি খুঁজে পায়। এটা পরিচিত মনে হয়, যদিও সেটা স্বাস্থ্যকর নয়।
আবেগের স্বীকৃতি না পাওয়া
যেসব শিশুর অনুভূতি উপেক্ষা করা হয়, তাদের মানসিক বিকাশে বাধা পড়ে। তারা ভবিষ্যতে ‘নিয়ন্ত্রণ’কে যত্ন বা খেয়াল হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে, কারণ তারা শিখেছে ভালোবাসা মানেই নিজের অনুভূতি বাদ দিয়ে কারও নিয়ম মানা।
শর্তসাপেক্ষ ভালোবাসা
যখন ভালোবাসা বা প্রশংসা কেবল নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে পাওয়া যায়, তখন শিশু শিখে ফেলে—ভালোবাসা অর্জন করতে হয়, সেটা স্বতঃসিদ্ধ নয়। এ কারণে তারা ভবিষ্যতে ভাবতে পারে, “যদি সে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে সে আমাকে ভালোবাসে।”
ইতিবাচক সম্পর্কের আদর্শের অভাব
যারা শৈশবে কোনো স্বাস্থ্যকর, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক দেখেনি, তারা ‘ভালোবাসা’ সম্পর্কে বিকৃত ধারণা গড়ে তোলে। পরে তারা সম্পর্ক বেছে নেয় পরিচিততা অনুযায়ী, ভালো-মন্দ বিচার না করেই।
আবেগগত অবহেলা
যাদের শৈশবে কেউ আবেগগতভাবে পাশে ছিল না, তারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় ও অবমূল্যায়িত মনে করে। তাই ভবিষ্যতে যখন কেউ একটু বেশি নিয়ন্ত্রণ করে, তারা ভাবে অন্তত কেউ তো গুরুত্ব দিচ্ছে—এমনকি সেটা ক্ষতিকর হলেও।
নিয়ন্ত্রণকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা
সবচেয়ে ভয়ংকর হলো নিয়ন্ত্রণকে স্বাভাবিক মনে করা। যখন কেউ ছোটবেলা থেকে দেখে যে সম্পর্ক মানেই নিয়ন্ত্রণ, তখন সে বোঝেই না যে এটি স্বাস্থ্যকর নয়। এটি ভাঙতে হলে চাই সচেতনতা, আত্মবিশ্লেষণ ও কখনো পেশাদার সহায়তা।
আমাদের শৈশবের অভিজ্ঞতা আমাদের গড়ে তোলে, কিন্তু আমাদের নির্ধারণ করে না। নিয়ন্ত্রণ ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা মানে হলো স্বাধীনতা, শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক বিকাশ। এই চক্র থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক ভালোবাসা চেনা ও গ্রহণ করাই হতে পারে আত্মসম্মানের প্রথম পদক্ষেপ।
সূত্রঃ ডেইলি মোটভেশন নিউজ
আরশি