
ছবি: প্রতিকী
আজকের ব্যস্ত জীবনে ক্লান্তি বা অবসন্নতা খুবই সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমরা নিজেদের জন্য একটু থামার সময়ও পাই না। তবে, নির্দিষ্ট কিছু জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ক্লান্তি দীর্ঘমেয়াদী হয় বা এর কোনও সুস্পষ্ট কারণ না পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি কোনো অন্তর্নিহিত রোগের ইঙ্গিতও হতে পারে, বিশেষ করে যদি এর সঙ্গে ব্যথা, জ্বর বা মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্লান্তির কারণ এবং তা দূর করার সহজ কিছু উপায়:
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
পুষ্টিকর ও সুষম খাবার শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাজা ও প্রাকৃতিক খাবার রাখুন। পরিমিত প্রোটিন, আঁশযুক্ত খাবার এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, যা প্রাকৃতিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। সপ্তাহে অন্তত দুই ঘণ্টা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করুন।
৩. পানি পান করুন
শরীরে পানিশূন্যতা ক্লান্তির বড় কারণ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্পষ্টতা বজায় থাকে।
৪. ক্যাফেইন কমান
ক্যাফেইন অস্থায়ীভাবে শক্তি দিলেও পরে ক্লান্তি বাড়ায়। ধীরে ধীরে ক্যাফেইন কমিয়ে দিন এবং রাতের খাবারের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যান ও জাগুন। ঘুমের আগে রিলাক্স করার জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা হালকা স্ট্রেচিং করুন।
৬. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল ঘুমের গুণমান খারাপ করে এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে। যতটা সম্ভব অ্যালকোহলমুক্ত দিন কাটানোর চেষ্টা করুন।
৭. অ্যালার্জির চিকিৎসা করুন
অ্যালার্জি ক্লান্তির অন্যতম কারণ। অ্যালার্জির লক্ষণ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
৮. মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ শরীর ও মন দুইয়েরই শক্তি কমিয়ে দেয়। নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম অথবা আপনার পছন্দের কোনো আনন্দময় কাজের মাধ্যমে চাপ কমান।
৯. মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
চিন্তা বা বিষণ্নতা ক্লান্তির কারণ হতে পারে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির সাহায্য নিন।
১০. কম বসে থাকুন
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ক্লান্তি বাড়ায়। নিয়মিত বিরতিতে হাঁটাহাঁটি করুন, সিঁড়ি ব্যবহার করুন এবং ছোটখাটো কাজে শরীর সচল রাখুন।
১১. আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান
শরীরে আয়রনের ঘাটতি (অ্যানিমিয়া) ক্লান্তির কারণ হতে পারে। খাদ্যতালিকায় পালং শাক, ডাল, মাংস, লিভার ইত্যাদি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
১২. অল্প অল্প করে বারবার খান
প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর ছোট ছোট মিল নিন। এতে রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল থাকবে এবং হঠাৎ করে শক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
১৩. ধূমপান ছাড়ুন
ধূমপান শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা ক্লান্তির বড় কারণ। ধূমপান ছাড়ার জন্য ওষুধ বা থেরাপি নিতে পারেন।
১৪. বিশ্রাম নিতে শিখুন
প্রতিদিন কিছু সময় শুধুমাত্র নিজেকে বিশ্রাম দিন। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, যোগ নিদ্রা বা প্রকৃতির সান্নিধ্য ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
১৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
ক্লান্তির সঙ্গে যদি অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্লান্তির পেছনে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যার মতো রোগও লুকিয়ে থাকতে পারে।
জীবনধারায় ছোট ছোট পরিবর্তন এনে ক্লান্তি দূর করা সম্ভব। নিজের শরীরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, বিশ্রাম নিন এবং ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, নিজের যত্ন নেওয়াই জীবনের প্রকৃত শক্তি।
রবিউল হাসান