ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা, বিশেষ সতর্কতা ও সচেতনতা

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:৫৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা, বিশেষ সতর্কতা ও সচেতনতা

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশে বজ্রপাত একটি প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছর বজ্রপাতে বহু মানুষ মারা যান এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা তাদের জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে বজ্রপাতের সময় কিছু বিশেষ সতর্কতা ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমেই এ বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। এ বিষয়ে চিকিৎসক ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট কিছু করণীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, যা সবাইকে জানা থাকা প্রয়োজন।

বজ্রপাতে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. চেতনা পরীক্ষা করুন:
বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তি অচেতন হয়ে যেতে পারেন। দ্রুত তার চেতনা পরীক্ষা করুন। যদি সাড়া না দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) বা প্রাথমিক হৃদযন্ত্র ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২. শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে কি না দেখুন:
আক্রান্তের নাক-মুখের কাছে কানের সাহায্যে অনুভব করুন তিনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন কিনা। শ্বাস বন্ধ থাকলে মুখে-মুখে কৃত্রিম শ্বাস (মাউথ-টু-মাউথ রেসকিউ ব্রিদিং) দেওয়া জরুরি।

৩. জ্বালাপোড়া ও পোড়া ক্ষত:
বজ্রপাতের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। পোড়া অংশ পরিষ্কার কাপড়ে ঢেকে ফেলুন এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।

৪. রক্তক্ষরণ বন্ধ করুন:
যদি কোথাও রক্তপাত হয়ে থাকে, তাৎক্ষণিক চাপ প্রয়োগ করে রক্তক্ষরণ বন্ধের চেষ্টা করুন।

৫. হাড় ভেঙে গেলে:
হাড় ভাঙা বা শরীরের অঙ্গ অবশ হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আহতকে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে না সরিয়ে সাবধানে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া উচিত।

বজ্রপাতের সময় বিশেষ সতর্কতা:

  • খোলা জায়গা, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা খোলা জলাশয়ের আশপাশ থেকে দূরে থাকুন।
  • বজ্রপাত শুরু হলে মাটিতে বসে থাকুন, তবে সম্পূর্ণ শুয়ে যাবেন না। দুই পায়ের গোড়ালি একত্রে রেখে নিচু হয়ে মাটিতে বসে থাকুন।
  • অতি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
  • ভিজে অবস্থায় খোলা স্থানে থাকা বিপজ্জনক। বৃষ্টি শুরু হলে আশ্রয় নিন।

জনসচেতনতার গুরুত্ব:

  • বজ্রপাতের মৌসুমে (মার্চ-জুন) স্কুল, কলেজ, কর্মস্থল ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার জরুরি।
  • স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোকে গ্রামে-গঞ্জে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।
  • বজ্রপাত বিষয়ে বার্তা প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ত্বরিত সতর্কবার্তা প্রদান ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার।


বজ্রপাতের সময় জীবন বাঁচাতে জরুরি সতর্কতা মেনে চলা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানও জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। নিজের জীবন রক্ষায় সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি। মনে রাখতে হবে, সচেতনতা এবং প্রস্তুতিই বজ্রপাতের ভয়াবহতা কমানোর মূল চাবিকাঠি।

নুসরাত

×