
ছবি: প্রতিকী
জীবন সবসময় মসৃণ পথে চলে না। কখনো কখনো আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন আমরা একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছি। তবে খেয়াল করেছেন কি, কিছু মানুষ কেবল সেই খারাপ সময় থেকে বেরিয়ে আসেন না, বরং আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন?
এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এর পেছনে রয়েছে কিছু বিশেষ অভ্যাস — প্রতিদিনের ছোট ছোট রুটিন, যা আমাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
এই প্রতিবেদনে এমনই ৮টি অভ্যাসের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো সেই দৃঢ়চেতা মানুষদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি, যারা ধাক্কা সামলে নিজেদের জীবন নতুন করে গড়ে তোলে।
আপনি যদি বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বা একটু অনুপ্রেরণা খুঁজছেন, তাহলে এই অভ্যাসগুলো আপনাকে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে চলার সাহস দিতে পারে।
১) সংগ্রাম করতে শিখুন
জীবন কখনোই একটানা সুখের ছায়ায় কাটে না। ওঠানামা, বাঁক-ঘুরে যাওয়া, হতাশা—সবই জীবনের অঙ্গ। তবে যারা সত্যিকার অর্থে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন, তারা হতাশা থেকে পালিয়ে যান না, বরং সেটিকে গ্রহণ করেন। তারা জানেন, জীবন যখন কঠিন হয়ে পড়ে, তখনই সবচেয়ে বেশি শেখার সুযোগ তৈরি হয়। প্রতিটি সংগ্রাম, প্রতিটি ব্যর্থতা আমাদের আরও দৃঢ় এবং অভিজ্ঞ করে তোলে। তাই যখন জীবন আপনাকে নিচে নামিয়ে দেয়, তখন শুধু বাঁচার চেষ্টা করবেন না— সংগ্রামকে আলিঙ্গন করুন, শিখুন এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরুন।
২) কৃতজ্ঞ থাকুন
খারাপ সময়ের মধ্যেও কৃতজ্ঞ থাকা কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কৃতজ্ঞতা এক বিশাল গেম-চেঞ্জার হতে পারে। নিজের জীবনের একটি উদাহরণ দিয়ে বলি—কয়েক বছর আগে আমার জীবন একেবারে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। তখন আমি প্রতিদিন রাতে তিনটি জিনিস লিখে রাখতাম, যেগুলোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। চোখে পড়লো, জীবনে যত সমস্যা থাকুক না কেন, ভালো জিনিসও কম নেই। এই মনোভাবই ধীরে ধীরে আমাকে জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। সুতরাং মনে রাখুন, কঠিন সময়েও কৃতজ্ঞতার জায়গা খুঁজে নিন। জীবন বদলে যাবে।
৩) প্রতিদিনের রুটিন তৈরি করুন
সফল মানুষের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—তাদের একটি নির্দিষ্ট দৈনন্দিন রুটিন থাকে। একটি দৈনন্দিন রুটিন সময় ব্যবস্থাপনা সহজ করে, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং জীবনে নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি আনে। বিশেষ করে যখন জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে, তখন একটি ছোট রুটিনই হতে পারে নির্ভরতার শেষ আশ্রয়। তাই কঠিন সময়ে নিজেকে সুসংগঠিত রাখতে একটা রুটিন তৈরি করুন—ছোট হলেও নিয়মিত হোন।
৪) ইতিবাচক পরিবেশে থাকুন
নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে যাওয়া খুব সহজ। তবে যারা জীবনে ফের জেগে ওঠেন, তারা জানেন—ইতিবাচক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। সাহসী, ইতিবাচক মানুষের সাথে সময় কাটান।অনুপ্রেরণাদায়ক বই পড়ুন, আনন্দময় কাজ করুন। মনে রাখবেন, আশেপাশের পরিবেশ আপনার মনের অবস্থা নির্ধারণ করে দিতে পারে। ইতিবাচকতা জন্ম দেয় নতুন শক্তির। তাই, পরিবেশ বেছে নিন সচেতনভাবে।
৫) নিজের প্রতি সদয় হন
নিজের ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করা সহজ। কিন্তু মনে রাখুন, যারা খারাপ সময় পার করে জয়ী হন, তারা নিজেদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। নিজেকে দোষারোপ না করে, নিজের দুর্বলতাকে মেনে নিন। জানুন, মানুষ মাত্রই ভুল করে। নিজেকে একজন ভালো বন্ধুর মতো সহানুভূতি দিন। সময় দিন নিজেকে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য।
৬) প্রয়োজন হলে সাহায্য চান
অনেকেই মনে করেন, সাহায্য চাইলে দুর্বলতা প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সাহায্য চাওয়া একটি সাহসিকতার পরিচয়। বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন, বন্ধুর সাথে কথা বলুন, কিংবা কোনো সহায়তা গোষ্ঠীর সদস্য হোন। মনে রাখুন, আপনি একা নন— সহায়তা পাওয়াটাই বড় এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।
৭) সচেতনভাবে জীবন যাপন করুন
চিন্তায় হারিয়ে যাওয়া সহজ—চিন্তা করা পুরনো ভুল বা ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা নিয়ে। কিন্তু যারা ঘুরে দাঁড়ান, তারা সচেতন জীবন যাপন করেন। মনে রাখুন, প্রতিটি মুহূর্তেই বেঁচে থাকার আসল সৌন্দর্য রয়েছে। অতীতে পড়ে থাকবেন না, ভবিষ্যতের ভয়েও নয়। বর্তমানকে পুরোপুরি অনুভব করুন। এখানেই জীবনের আসল পরিবর্তন ঘটে।
৮) এগিয়ে চলুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—কখনো থেমে যাবেন না। আপনি যতবার পড়ুন না কেন, আবার উঠে দাঁড়ান। যত ধীরগতিতেই এগোন না কেন, অগ্রগতি হচ্ছে—এটাই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যর্থতা নয়, চেষ্টা অব্যাহত রাখাই আসল সাফল্য। মনে রাখুন, সামনে এগোনোর মাঝেই মুক্তি। আপনি যা ভাবছেন তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
এই ৮টি অভ্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে একটি শক্তিশালী গুণ — সহনশীলতা বা রেজিলিয়েন্স। সহনশীলতা মানে কেবল ঝড় পার হওয়া নয়, বরং সেই ঝড়ের মধ্যেও নাচতে শেখা। সংগ্রামকে আলিঙ্গন করে, সেই অভিজ্ঞতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা।
আপনার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়টাই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তনের সূচনা। তাই, যদি এখন আপনি কঠিন সময় পার করছেন, আশা হারাবেন না। এই অভ্যাসগুলো স্মরণে রাখুন। নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগ্রত করুন। এবং নিজেকে এমনভাবে ফিরে আসতে দিন, যা আগে কখনো সম্ভব বলে ভাবেননি।
সূত্র: https://dmnews.com/gb-8-habits-of-people-who-come-back-better-then-ever-after-reaching-a-very-low-point/
রবিউল হাসান