
ছবি সংগৃহীত
আপনার শিশু হোঁচট খেল, অথবা বন্ধুর সাথে ঝগড়া করলো। তারা যখন কাঁদছে বা মন খারাপ করছে, অনেক সময়ই আমরা বলে ফেলি: "তুমি ঠিক আছো।"
শুনতে যতটা আশ্বস্তকর লাগে, বাস্তবে এই কথাটি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগগত বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের আবেগের স্বাস্থ্য নিয়ে ২০০-রও বেশি শিশুর উপর গবেষণা করে, সচেতন প্যারেন্টিং কোচ রিম রাউদা এই সাধারণ অথচ ক্ষতিকর অভ্যাসের বিপদ তুলে ধরেছেন।
রাউদার মতে, "তুমি ঠিক আছো" এই কথাটি শিশুর মানসিক জগতের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক ও অতি-ব্যবহৃত একটি বাক্য। কেন এটা ক্ষতিকর এবং এর পরিবর্তে কী বলা উচিত, তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:
কেন “তুমি ঠিক আছো” বলাটা বিপজ্জনক?
১. শিশুকে নিজের অনুভূতির ওপর সন্দেহ করতে শেখায়: যখন তারা কষ্ট পাচ্ছে, আর আমরা বলি "তুমি ঠিক আছো," তখন তারা শেখে “আমার অনুভূতি সত্য নয়।” এভাবে ধীরে ধীরে তারা নিজেদের আবেগের ওপর আস্থা হারাতে থাকে।
২. সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করা হয়: শিশুরা অনুভব করে, "আমার অনুভূতি মূল্যহীন।" ফলে তারা শেখে যে কেবল শান্ত ও সুবিধাজনক হলে তারা ভালোবাসা পাবে।
৩. আবেগপ্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়: প্রকৃতপক্ষে আবেগ অনুভব করা ও প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা অযথা সান্ত্বনা দেই, তখন তারা আবেগ চেনা ও নিয়ন্ত্রণ করা শেখে না।
৪. শর্তসাপেক্ষ ভালোবাসার ধারণা তৈরি করে: "তুমি ঠিক আছো," "কেঁদো না," বা "ভয় পেয়ো না" জাতীয় কথাবার্তা শিশুদের মনে এই বার্তা পাঠায় আবেগ প্রকাশ করলে ভালোবাসা হারাতে হবে।
৫. নার্ভাস সিস্টেমকে ভিন্নভাবে গড়ে তোলে: আবার ও আবার যখন তাদের অনুভূতি অস্বীকার করা হয়, তখন তাদের শরীর শিখে নেয় আবেগ প্রকাশ করা নিরাপদ নয়। এতে ভবিষ্যতে মানসিক চাপ ও বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা বেড়ে যায়।
তাহলে এর পরিবর্তে কী বলা উচিত?
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।” “তোমার অনুভূতি একদম স্বাভাবিক।” “আমি তোমার সাথে আছি।” “এই মুহূর্তে তোমার ঠিক থাকা জরুরি না।” “আমি দেখেছি কী হয়েছে। তুমি কেমন অনুভব করছো?” এসব কথা শিশুকে বলা উচিত।
এসব কথা শিশুকে শেখায়: আমার অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজের ওপর আস্থা রাখতে পারি। আমি একা নই। রাউদা মনে করিয়ে দেন, মাঝে মাঝে "তুমি ঠিক আছো" বলে ফেলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে এমন ভাষা ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত যা আবেগগত নিরাপত্তা গড়ে তোলে।
আশিক