
ছবি: সংগৃহীত
সপ্তাহান্ত এলেই সফল মানুষেরা একেবারে "বন্ধ" হয়ে যান না, এটা বেশ আকর্ষণীয়। তারা একটি বিশেষ ছক অনুসরণ করেন, যা তাদের আলাদা করে তোলে।
মনোবিজ্ঞানের মতে, সফল মানুষেরা সপ্তাহান্তে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করেন, যা সাধারণ মানুষের চেয়ে ভিন্ন। তারা এই সময়টাকে পুনরায় শক্তি সঞ্চয়, আত্মবিশ্লেষণ এবং আগাম পরিকল্পনার জন্য ব্যবহার করেন।
চলুন, আমরা দেখে নেই সপ্তাহান্তে সফল মানুষেরা যেসব কাজ সবসময় করে থাকেন। হতে পারে, এখান থেকে নিজের সপ্তাহান্তের রুটিনেও কিছু দারুণ পরিবর্তন আনতে পারবেন!
তারা আগেভাগে পরিকল্পনা করে: সফল মানুষরা সপ্তাহান্তে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই ঢুকে পড়েন না। তারা জানেন, ছুটির দিনেও পরিকল্পনার গুরুত্ব কতটা।
মনোবিজ্ঞান বলছে, পরিকল্পনা হচ্ছে উৎপাদনশীলতা এবং সাফল্যের মূল উপাদান। কী অর্জন করতে চান, তা নির্ধারণ করে সফল মানুষরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলেন।
তবে, এর মানে এই নয় যে তারা প্রতিটি ঘণ্টা কাজের ভেতর ডুবে থাকেন। বরং বিশ্রাম, ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন সপ্তাহের প্রস্তুতির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখেন।
পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করেন যে সপ্তাহান্তে নিজের জীবনকেও যত্ন নিচ্ছেন, আবার ক্লান্তিও হচ্ছেন না।
তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে: সফল মানুষরা সপ্তাহান্তে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের সংযোগ কাটিয়ে দেন। এর মানে হলো—কাজের ইমেইল, ফোনকল বা অফিসের অন্যান্য ব্যস্ততা থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
একবার এক সফল উদ্যোক্তার সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। শুক্রবার সন্ধ্যা হলেই তিনি নিজের কাজের ফোন বন্ধ করে দিতেন এবং সোমবার সকাল পর্যন্ত আর খুলতেন না।
তিনি বলতেন, "সপ্তাহান্ত হলো আমার চার্জ হওয়ার সময়। পরিবার, শখ আর নিজের জন্য সময়—কাজ অপেক্ষা করতে পারে।"
মনোবিজ্ঞানের গবেষণাও বলে, কাজ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মানসিক চাপ কমাতে এবং বার্নআউট ঠেকাতে সাহায্য করে।
তারা শরীরচর্চা করে: সফল মানুষরা শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব বোঝেন এবং সপ্তাহান্তের রুটিনে ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করেন। এটা শুধু শরীরচর্চার জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্যও জরুরি।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত ব্যায়াম মেজাজ উন্নত করে, উদ্বেগ কমায় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বাড়ায়। নিয়মিত শরীরচর্চাকারীরা আরও উৎপাদনশীল এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষ হন।
সকালবেলা দৌড়ানো, যোগব্যায়াম সেশন বা পার্কে সাইকেল চালানো—যেভাবেই হোক, সপ্তাহান্তে সফল মানুষেরা শরীর সচল রাখেন।
তারা শখের চর্চা করে: সফল মানুষেরা পেশাগত জীবনের বাইরে নিজেদের কোনো শখের প্রতি সময় দেন। শখ শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতা বাড়ানো এবং নতুন দক্ষতা অর্জনেরও উপায়।
চিত্রাঙ্কন, বাগান করা, পাহাড়ে হাঁটা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো—যেকোনো কিছু হতে পারে। শখ মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং মস্তিষ্কের নতুন অংশ সক্রিয় করে।
আপনার কোনো পুরনো শখ আছে যেটা আপনি ভুলে গেছেন? অথবা কোনো নতুন কিছু শেখার ইচ্ছে? সপ্তাহান্তই হতে পারে তার উপযুক্ত সময়।
তারা প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটায়: সফল মানুষেরা ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব বোঝেন এবং সপ্তাহান্তে তার জন্য সময় রাখেন। পরিবার-বন্ধুদের সাথে কাটানো মানসম্মত সময় তাদের রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই সংযোগ মানসিক চাপ কমায়, মেজাজ ভালো করে এবং একধরনের সহায়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, যা কঠিন সময়ে খুব কাজে আসে।
চা-আড্ডা, সিনেমা দেখা বা স্রেফ এক কাপ কফির পাশে গল্প করা—যাই হোক না কেন, সফল মানুষেরা সপ্তাহান্তে আপনজনদের জন্য সময় রাখেন।
তারা আত্মবিশ্লেষণ করে: সফল মানুষেরা সপ্তাহান্তে কিছুটা সময় নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করেন। এটি নীরব ও অন্তর্দর্শনমূলক একটি প্রক্রিয়া, যেখানে তারা পেছনে ফিরে দেখেন কী অর্জন করেছেন এবং কোথায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
এটা সহজ কাজ নয়। এতে সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুইয়ের সাথেই সৎ হতে হয়। তবে এটি ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং ধারাবাহিক শেখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
কখনো কখনো এই নীরব মুহূর্তেই উজ্জ্বল আইডিয়া বা সমস্যার সমাধান চলে আসে।
তারা আত্ম-যত্নের অগ্রাধিকার দেয়: সফল মানুষেরা নিজেদের শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় সুস্থতার দিকে নজর দেন, বিশেষ করে সপ্তাহান্তে।
এক সময় আমি এত কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের যত্ন নেওয়াই ভুলে গিয়েছিলাম। ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল, সম্পর্কেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং কাজের মানও কমে গিয়েছিল।
এখন আমি নিশ্চিত করি যে সপ্তাহান্তে নিজেকে সময় দিই—হোক সেটা একটানা বই পড়া, মেডিটেশন করা কিংবা পার্কে হাঁটাহাঁটি।
আত্ম-যত্ন বিলাসিতা নয়—এটা সফলতার একটি অপরিহার্য দিক।
তারা একঘেয়েমিকে আলিঙ্গন করে: আমাদের দ্রুতগতির জীবনে আমরা প্রতিটি মুহূর্ত কাজ বা বিনোদনে ভরিয়ে ফেলতে চাই। কিন্তু সফল মানুষেরা জানেন, মাঝে মাঝে "কিছু না করাও" গুরুত্বপূর্ণ।
একঘেয়েমি মস্তিষ্ককে অবসর দেয়, সৃজনশীল চিন্তার সুযোগ দেয়। অনেক সময় এই নীরব মুহূর্তেই সেরা আইডিয়া জন্ম নেয়।
সপ্তাহান্তে যদি অবসর পান, সবসময় সেটাকে কোনো কাজে বা স্ক্রিন টাইমে ভরিয়ে ফেলবেন না। একটু নির্জনতা উপভোগ করুন।
তারা আগাম প্রস্তুতি নেয়: সফল মানুষরা হঠাৎ করেই সপ্তাহান্ত শেষ করে সোমবারের দিকে ছুটে যান না। বরং সপ্তাহের সূচনাটা যেন সহজ হয়, সেজন্য তারা আগেভাগে প্রস্তুতি নেন।
ওয়ার্কস্পেস গোছানো, সপ্তাহের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ, বা সোমবারের পোশাক রেডি করা—এসব ছোট ছোট কাজ নতুন সপ্তাহের জন্য মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করে দেয়। সফলতার একটি গোপন রহস্যই হলো পরিকল্পিত প্রস্তুতি।
তারা বিশ্রাম নেয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সফল মানুষেরা সপ্তাহান্তে বিশ্রাম নেয়। তাদের আপসহীন পরিশ্রমের মনোভাব থাকা সত্ত্বেও তারা জানেন, নিজেকে রিচার্জ করা কতটা জরুরি।
বিশ্রাম মানে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও আবেগীয় প্রশান্তিও। একটু বেশি ঘুমানো, বই পড়ে শুয়ে থাকা, বা কোনো শান্ত জায়গায় নীরব বসে থাকা—সবই বিশ্রামের অংশ।
দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য বিশ্রাম অপরিহার্য। তাই যত ব্যস্তই হন, সপ্তাহান্তে নিজেকে বিশ্রাম দিতে ভুলবেন না। এটা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং সফলতার জন্য প্রয়োজনীয়।
শহীদ