
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা প্রায় সবাই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে "নীরব প্রতিক্রিয়া"র মুখোমুখি হয়েছি। এক মুহূর্তে সব কিছু স্বাভাবিক, আর পরের মুহূর্তেই সম্পর্কের অন্য প্রান্ত থেকে নেমে আসে অদৃশ্য এক নীরবতা। এই আচরণ আমাদের বিভ্রান্ত এবং হতাশ করে দেয়। প্রশ্ন জাগে- কেন ঘটে এমনটি? শুধুই কি বিরোধ এড়ানোর চেষ্টা, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কিছু?
মনোবিজ্ঞান বলছে, নীরব থাকা কেবলমাত্র চুপ করে থাকার অর্থ বহন করে না, বরং এটি একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ। চলুন জেনে নিই, নীরবতার পেছনে থাকা সাতটি চমকপ্রদ কারণ:
১. আবেগের চাপে ভেঙে পড়া
অনেক সময় মানুষ আবেগের তীব্রতায় কথা বলতে অক্ষম হয়ে পড়ে। রাগ, কষ্ট বা হতাশা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই তারা সাময়িকভাবে চুপ থেকে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
২. সংঘর্ষ এড়ানো
সবাই যে মতভেদ বা বিতর্ক পছন্দ করে, তা নয়। অনেকেই ঝগড়ার ভয় বা অস্বস্তি এড়াতে নীরবতা বেছে নেন। তারা মনে করেন, কথা বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।
৩. যোগাযোগে দুর্বলতা
অনেক সময় আবেগের ঘূর্ণিতে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ভুল কিছু বলার ভয়ে বা নিজের অনুভূতি প্রকাশে অক্ষমতার কারণে মানুষ নীরব হয়ে যায়, যদিও ভেতরে তারা গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
৪. প্রতিশোধ বা বিচারপ্রার্থনা
কখনও কখনও নীরবতা একটি 'আবেগগত শাস্তি' হয়ে ওঠে। কেউ যদি আহত বোধ করে, সে অপর পক্ষকে দোষী বা অপরাধবোধে ভোগাতে ইচ্ছাকৃতভাবে চুপ থাকতে পারে। যদিও এটি অধিকাংশ সময় সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
৫. নিজস্ব ভাবমূর্তি রক্ষা
অনেকেই চায় না যেন তাদের আবেগের বিস্ফোরণ অন্যদের চোখে নেতিবাচকভাবে ধরা পড়ে। তাই আবেগ চাপা দিয়ে তারা নীরব থাকে, যাতে নিজেদের পেশাদার বা সুস্থ-সংযত ইমেজ বজায় থাকে।
৬. দায়িত্ব এড়ানো
কখনও নীরবতা আসে নিজের ভুল বা দায় স্বীকার না করার অভিপ্রায়ে। কেউ যদি জানে সে ভুল করেছে কিন্তু ফলাফলের মুখোমুখি হতে চায় না, তখন সে নীরব থেকে পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
৭. নিয়ন্ত্রণের কৌশল
সবসময় নীরবতা আবেগের প্রতিক্রিয়া নয়; এটি কখনও কখনও সম্পর্ক বা কথোপকথনে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে দূরত্ব তৈরি করে অন্য পক্ষকে আরও বেশি মনোযোগ বা মীমাংসার জন্য এগিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়।
নীরবতা যে সবসময় সরল আচরণ নয়, তা মনোবিজ্ঞান ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করেছে। তাই যখন সম্পর্কের কোনো পর্যায়ে নীরবতার মুখোমুখি হই, তখন শুধু হতাশ না হয়ে বোঝার চেষ্টা করা উচিত- এর পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল গল্প কী।
রিফাত