
ছবি: প্রতিকী
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ জীবন লাভের নানা টিপস ছড়িয়ে রয়েছে—কেউ বলেন পরিষ্কার খাবার খেতে হবে, কেউ বা মানসিক চাপ কমানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি, যিনি শতবর্ষ অতিক্রম করেছেন, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কথা বলেন, তখন সবাই মনোযোগ দিয়ে শোনে।
ডঃ জন শারফেনবার্গ, একজন প্রতিরোধমূলক চিকিৎসাবিদ, যিনি শতবর্ষ পেরিয়েও প্রাণবন্ত জীবন কাটিয়েছেন, জীবনের আসল রহস্যের কথা জানিয়েছেন—এবং তা প্রচলিত ধারণাকে একেবারে উল্টে দেয়।
তার বার্তা ছিল সহজ, আন্তরিক এবং বাস্তব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ: দীর্ঘ জীবন পেতে আসল চাবিকাঠি হলো—নিয়মিত শরীরচর্চা।
ডঃ জন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, প্রতিদিনের ব্যায়াম কোনও ফিটনেস ট্রেন্ড নয়, এটি জীবনের এক অপরিহার্য নিয়ম। তিনি তুলনা করে বলেন—একজন স্থূল ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ব্যায়াম করেন, তবে তিনি এমন একজন সুস্থ দেহের অধিকারী অলস ব্যক্তির তুলনায় বেশি দিন বাঁচতে পারেন। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সমস্যা কিংবা ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও, প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে আয়ু বাড়তে পারে।
এখানে কোনও জিম মেম্বারশিপ বা কড়া ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু প্রতিদিন নিয়মিত শরীরকে সচল রাখা।
দীর্ঘ জীবন শুধু জিনের উপর নির্ভর করে না
ডঃ জন নিজেই এর উদাহরণ। তার পরিবারের সদস্যদের একই জিন থাকলেও, জীবনযাত্রার পার্থক্যের জন্য তাঁর আয়ু আলাদা ছিল। প্রতিদিনের অভ্যাসই ছিল তাঁর আসল শক্তি। এটি প্রমাণ করে, জিনতত্ত্বের পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন সিদ্ধান্তই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কঠিন সত্য গ্রহণ, কিন্তু মমতার সঙ্গে
একবার তিনি এক স্থূল সহকর্মী গ্রাফিক ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কোনও বিচার না করে, ডঃ জন বাস্তব তথ্য এবং আশা দিয়ে বোঝান: "স্থূলকায় হলেও যদি কেউ প্রতিদিন ব্যায়াম করে, তাহলে সে একজন রোগা অথচ অলস ব্যক্তির চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে পারে।"
তাঁর সততা এবং মমতা মানুষকে ভালোভাবে বাঁচার জন্য অনুপ্রাণিত করত।
আধুনিক স্বাস্থ্য মিথ ভেঙে দেওয়া
অনেকে মনে করেন নিখুঁত খাদ্যাভ্যাস বা স্ট্রেসমুক্ত জীবনই সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। ডঃ জন এসব অস্বীকার করেননি, তবে জোর দিয়েছেন আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে—
"আসল ওষুধ হলো চলাফেরা করা।"
ব্যায়াম শুধু ক্যালরি পোড়ায় না, এটি হৃদযন্ত্র মজবুত করে, মন ভালো রাখে, হাড়ের শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তিনি প্রমাণ করেছেন, সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকা সত্য হলো—নিয়মিত শরীরচর্চা অন্য সব কিছুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনের সত্যিকারের সাফল্য
ডঃ জন কেবল চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি নিজে যা বলতেন, তা মেনে চলতেন। শতবর্ষ পেরিয়েও তিনি লেকচার দিতেন, অন্যদের জীবন বদলাতে অনুপ্রাণিত করতেন।
তাঁর জীবনের শিক্ষা ছিল: সক্রিয় থাকা, সদয় থাকা এবং সততা বজায় রাখা—এটাই দীর্ঘ ও অর্থবহ জীবনের মন্ত্র।
সুখ কি দীর্ঘ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
বিজ্ঞান বলছে, সুখী মানুষদের মধ্যে স্ট্রেস হরমোন কম থাকে, হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। তারা সাধারণত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস পালন করেন এবং সামাজিক সম্পর্ক মজবুত রাখেন—যা আয়ু বাড়ায়।
দীর্ঘ জীবন পাওয়ার জন্য ব্যায়ামগুলো
দীর্ঘ জীবন পেতে চাইলে চাই:
- নিয়মিত কার্ডিও এক্সারসাইজ (দ্রুত হাঁটা, দৌড়, সাঁতার, সাইক্লিং)
- স্ট্রেন্থ ট্রেনিং (ওজন তুলতে বা শরীরের ওজন দিয়ে ব্যায়াম)
- যোগব্যায়াম বা তাই চির মতো ফ্লেক্সিবিলিটি এবং ব্যালান্স বাড়ানোর ব্যায়াম।
দীর্ঘায়ুর জন্য সেরা খাবারগুলো
- বাদাম
- মাশরুম
- গ্রিন টি
- বেরিজ
- ফ্যাটি ফিশ
- সবুজ শাকসবজি
- অ্যাভোকাডো
- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
বয়স্কদের জন্য ধ্যান এবং যোগব্যায়াম
ধ্যান মানসিক শান্তি এনে দেয়, উদ্বেগ কমায় এবং মনোযোগ বাড়ায়।
যোগব্যায়াম বয়স্কদের জন্য দেহের ভারসাম্য ও নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে এবং স্বাধীন জীবনযাপন সম্ভব হয়।
ব্লু জোন ডায়েট: দীর্ঘজীবনের খাবারাভ্যাস
ব্লু জোন অঞ্চলের মানুষদের খাবারে ৯৫% উদ্ভিজ্জ উপাদান থাকে। তারা মাংস ও মাছ মাসে গড়ে পাঁচবার খায়। তাদের খাদ্যতালিকায় বাদাম, শস্য, ডাল ও সবজি থাকে, যা আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
কেন স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জরুরি?
ভালো খাওয়া, ব্যায়াম, ঘুম ও স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ করে, শক্তি বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
স্বাস্থ্যকর জীবন মানে শুধু দীর্ঘ জীবন নয়—মজার, প্রাণবন্ত এবং অর্থপূর্ণ জীবন।
কেন আমরা দ্রুত বার্ধক্যে পৌঁছাই?
ডিএনএ ক্ষয়, টেলোমিয়ার ছোট হওয়া, কোলাজেন কমে যাওয়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে বয়স বাড়ে।
আর বাইরের কারণে যেমন:
- খারাপ খাবার
- অতিরিক্ত স্ট্রেস
- কম ঘুম
- সূর্যালোক বা দূষণের অতিরিক্ত সংস্পর্শ
এসব দ্রুত বার্ধক্য ডেকে আনে।
তবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে বার্ধক্যের গতি কমানো সম্ভব।
বার্ধক্য প্রতিরোধের টিপস
- প্রতিদিন স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ও হাঁটাহাঁটি করুন
- পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৯ ঘণ্টা) নিন
- চিনি কম খান, বেশি জল পান করুন
- বেরি ও শাকসবজি বেশি খান
- স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন করুন
- স্কিন কেয়ার করুন (সানস্ক্রিন ও রেটিনল ব্যবহার)
- নতুন কিছু শিখে মস্তিষ্ক সতেজ রাখুন
- সামাজিক সম্পর্ক মজবুত করুন
সার্বিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিন
দীর্ঘ জীবন শুধু শরীরের পরিচর্যার উপর নির্ভর করে না। সত্যিকারের চাবিকাঠি হলো:
- উদ্দেশ্যমূলক জীবন যাপন
- ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা
- প্রতিদিনের মুহূর্তগুলোয় আনন্দ খোঁজা।
শুধু দীর্ঘ জীবন নয়, প্রতিটি বছরকে প্রাণবন্ত ও পূর্ণ করে তোলাই আসল লক্ষ্য।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/there-is-just-one-secret-to-living-beyond-100-years-says-101-year-old-doc-and-no-it-is-not-food-or-managing-stress/photostory/120454310.cms?picid=120660860
রবিউল হাসান