
মণিপুরী শাড়ি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। আরামের জন্য অনেকেই সুতি ভেবে কিনে থাকেন। কাপড়ের মান যত ভালো হয়, দামও তত বেশি হয়। কিন্তু আসলেই কি মণিপুরী শাড়ি সুতির? এই বিষয়ে আজ আলোচনা করব।
আমরা এখন যেসব মণিপুরী শাড়ি পরছি অধিকাংশই টেট্রন সুতা দিয়ে তৈরি। বর্তমানে সুতি সুতা দিয়ে কোনো মণিপুরী শাড়ি হয় না। হলেও সেটা রেয়ার। মণিপুরী কাপড় বুননের জন্য দুই ধরনের তাঁত ব্যবহার করতে দেখা যায়। কোমর তাঁত এবং ফ্রেম তাঁত।
কোমর তাঁত অপেক্ষাকৃত মোটা কাপড় ও ঘন কাপড় দিয়ে বুনা হয়। আর ফ্রেম তাঁত যেটাকে চিত্তরঞ্জন তাঁতও বলে। এই তাঁতে পাতলা ও অপেক্ষাকৃত কম ঘন বুননের কাপড়ে বুনন করা হয়। মণিপুরী ইন্নাফি ও গামছা চিত্তরঞ্জন তাঁত- এ বুনন হয় এবং সুতি সুতায় বুনা হয়। সেগুলো তৈরির আগে মাড় দিয়ে বুনতে হয়। কিন্তু পরে বিক্রির সময় আর মাড় দেওয়া লাগে না। কারণ সুতি কাপড় এমনিতেই খুব আরামদায়ক যে কোন কাপড়ের চেয়ে। আর তা ব্যবহার করার পর ধোয়া হলে বুননটা আরও গাঢ় হয়ে যায়। এগুলোর দাম অনেক বেশি। মণিপুরী শাড়ি, ওড়না ও থ্রি পিস চিত্তরঞ্জন বা ফ্রেম তাঁেত বোনা হয়। কিন্তু সুতির মতো বুনন না। জাল বুননের হয়। মণিপুরী শাড়ি জাল বুননের হবে এটাই এর বৈশিষ্ট্য। টেট্রন সুতা সুতি সুতা থেকে অনেক মজবুত হয়, দামে কম এবং কাপড়ের রং যাওয়ার ভয় নেই। মণিপুরী টেট্রন সুতা দিয়ে তৈরিতে উৎপাদন খরচ কম তাই তাঁতিদের কাছ থেকে কম দামে মহাজনরা কাপড় এনে লাভ করতে পারেন।
মণিপুরী শাড়িতে দুবার মাড় দেওয়া হয়। এর কারণ টেট্রন সুতা দিয়ে তৈরি করলে সেই শাড়ি মাড় না দিলে নেতিয়ে যাবে। তাই প্রথমে বুননের সুবিধার জন্য মাড় দিতে হয়। কিন্তু বুননের সময় তাঁতের ঘষায় মাড় অনেকটা ঝরে যায় তাই শাড়ি বুনা শেষ হলে আবার ধুয়ে মাড় দিতে হয় তারপর আয়রন করা হয়। টেট্রন সুতা হওয়ায় সেই সুতা দিয়ে জাল বুননের হলেও ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। রংও ওঠে না। এই শাড়ি যতবারই ধোয়া হোক না কেন তাতে শাড়ির কিছুই হবে না।
প্যানেল