
অর্থ গাছে ধরে না,এই পুরনো প্রবাদ বাক্য এখনো সত্য। তবে বর্তমান বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় যারা স্মার্ট ও কৌশলী, তারাই ধীরে ধীরে গড়ে তোলে টেকসই সম্পদ। প্রশ্ন হলো, ধনীরা কী এমন করে যা সাধারণ মানুষ জানে না?বিশেষজ্ঞদের মতে, ধনীরা কিছু নির্দিষ্ট আর্থিক কৌশল অনুসরণ করে, যা তাদের ধনী থেকে আরও ধনী করে তোলে। এসব কৌশল যে কেউ আয়ত্ত করতে পারে, যদি সচেতনভাবে প্রয়োগ করা হয়।
নিচে তুলে ধরা হলো এমনই সাতটি আর্থিক কৌশল, যা সচরাচর প্রচারের আলোয় আসে না তবে কার্যকরভাবে অনুসরণ করলে তা সম্পদের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।
১. সঞ্চয়ের পাশাপাশি তারা বিনিয়োগেও মনোযোগ দেয়
অর্থ জমিয়ে রাখা একদিকে নিরাপদ হলেও তা সম্পদ বাড়ানোর উপায় নয়। ধনীরা জানে,মূলধনকে যদি নিস্ক্রিয় রেখে দেওয়া হয়, তবে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্য হারায়। তাই তারা নিয়মিত শেয়ারবাজার, রিয়েল এস্টেট, ব্যবসায় বা অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল আয় করাই যথেষ্ট নয়,আয়ের অর্থকে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করাই টেকসই সম্পদের মূল চাবিকাঠি।
২. ঋণকে ভয় না পেয়ে, তা কৌশলে ব্যবহারে দক্ষ
অনেকেই ঋণকে নেতিবাচক চোখে দেখে থাকেন। কিন্তু ধনীরা ঋণ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত সচেতন। তারা ‘ভালো ঋণ’ এবং ‘খারাপ ঋণ’-এর মধ্যে পার্থক্য বোঝে।উৎপাদনমুখী ঋণ যেমন ব্যবসায় বিনিয়োগ, বাড়ি কেনা বা শিক্ষায় ব্যয়,এইসবকে তারা ভবিষ্যতের সম্পদ তৈরির মাধ্যম হিসেবে দেখে। তাই ঋণকে সুযোগে পরিণত করাই তাদের কৌশল।
৩. আর্থিক সিদ্ধান্তে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
টাকা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে আবেগের প্রভাব অনেক সময় মারাত্মক হতে পারে। ধনীরা জানে, বাজার ওঠানামা, সাময়িক লোকসান বা অতিরিক্ত লাভের লোভে আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ।তাই তারা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, পরিসংখ্যান ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক পরিকল্পনা করে। এটাই স্থিতিশীলতা ও লাভজনকতার মূল ভিত্তি।
৪. আয়ের উৎসকে বহুমাত্রিক করে তোলে
শুধু একটি চাকরি বা ব্যবসার ওপর নির্ভর না করে, ধনীরা আয়কে বিভিন্ন উৎসে ভাগ করে নেয়। এতে করে এক উৎস ব্যাহত হলেও অন্য উৎস থেকে আয় অব্যাহত থাকে।এ ধরনের বহুমুখী আয় যেমন রিয়েল এস্টেট ভাড়া, অনলাইন ইনকাম, প্যাসিভ ইনকাম বা পার্টনারশিপ ব্যবসা সবই দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতি তৈরি করে।
৫. চক্রবৃদ্ধি সুদের শক্তিকে কাজে লাগায়
চক্রবৃদ্ধি সুদকে ‘অর্থ জগতের অদ্ভুত শক্তি’ বলা হয়ে থাকে। ধনীরা জানে, সুদের ওপর আবার সুদ যুক্ত হয়ে কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বিপুল সম্পদে রূপ নেয়।অল্প অর্থ বিনিয়োগ করে দীর্ঘ সময় ধরে চক্রবৃদ্ধি সুদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বড় পরিমাণে সম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব,এটি অনেক ধনীরই গোপন অস্ত্র।
৬. সমাজে ফিরিয়ে দেওয়ার মনোভাব রাখে
বিশ্বের বহু ধনী ব্যক্তি তাদের আয় ও সম্পদের একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করে থাকেন। সমাজে ফিরে দেওয়ার এই মনোভাব শুধুই দানের মাধ্যমে নয়, নানা সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়।এই মানসিকতা শুধুমাত্র নৈতিকতা নয়, বরং তা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক পরিচিতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
৭. নতুন অর্থনৈতিক জ্ঞান অর্জনে সদা আগ্রহী
টাকার ব্যাপারে ধনীরা কখনো থেমে থাকে না। তারা সবসময়ই নতুন কিছু শিখতে চায়,হোক তা বিনিয়োগ কৌশল, বাজার বিশ্লেষণ, কর ব্যবস্থাপনা বা প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক পথ।নানা বই, কোর্স, সেমিনার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তারা নিজেদের আপডেট রাখে। অর্থ বিষয়ে সচেতনতা ও শিক্ষা তাদের অন্যতম মূল শক্তি।
ধনী হওয়ার পেছনে কেবল সৌভাগ্য নয়, রয়েছে গভীর কৌশল ও সচেতন পরিকল্পনা। উপরের সাতটি আর্থিক কৌশল বাস্তব জীবনে অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে যে কেউ টেকসই আর্থিক স্থিতি অর্জন করতে পারেন।অর্থ পরিচালনায় ধনীদের কৌশল এখন আর গোপন নয়,সচেতনতার মাধ্যমে এই জ্ঞান যে কারও জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/mpmnftap
আফরোজা